আলমডাঙ্গায় ৬ চোরাই মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার ২

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় ৬টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার জামজামি বাজার এলাকায় অভিযান করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের নিকট থেকে দুটি ও তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার ভোরে কুষ্টিয়া জেলার পৌর এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে আরো ৪টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া জেলার ইবি থানার ঝাউদিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সোহেল রানা(২০) ও ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু থানার তৈলটুপি গ্রামের তাইজান মন্ডলের ছেলে রতন আলী (২০)। দুজনই আন্তঃজেলার মোটরসাইকেল চোরচক্রের সদস্য।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে আলমডাঙ্গা থানাপুলিশের আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানানো হয়। প্রেস ব্রিফিং এর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান থানার পরিদর্শক (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ।

বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার জামজামি বাজার এলাকায় পুলিশ অভিযান চালায়। ওই সময় দুটি চোরাই মোটরসাইকেলসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার ভোররাতে কুষ্টিয়া জেলা শহরের পৌর এলাকার পেয়ারা তলার একটি গ্যারেজ থেকে আরো ৪ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।

তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য। চক্রের আরও কয়েক সদস্যের নাম জানা গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।




জীবননগরে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পাশে এমপি টগর

জীবননগরে অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ সাহাবুদ্দিনের বাড়িতে যেয়ে চিকিৎসার সাবিক খোজখবর নিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোঃ আলী আজগার টগর।

গত বৃহস্পতিবার রাতে স্বশরীরে জীবননগর পৌর সভার হাইস্কুল পাড়ায় অসুস্থ বীর মুকিযোদ্ধা মোঃ সাহাবুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে খোজ খবরনেন এমপি টগর।

এ সময় সাংবাদিকদের তিনি জানান, নিজের জীবন বাজি রেখে যারা দেশের জন্য কাজ করেছেন সেই সমস্থ সূয সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাড়ানো আমার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকেই অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাড়িয়েছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বাংলাদেশের সফল প্রধান মন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যে কাজ করেছেন এমন কাজ দেশের আর কোন প্রধানমন্ত্রী এ যাবৎ করেনি আশা করি আর কোন দিন করবেও না । আমি শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কমি হিসাবে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতাকমি ও সাধারন মানুষের পাশে যে ভাবে আছি আগামিতেও থাকবো।

এ সময় সফর সঙ্গী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জীবননগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মোতুজা,জীবননগর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।




সত্যবাদী কে? বিএনপি নাকি গণতন্ত্র মঞ্চ?

বর্তমান সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একদফার আন্দোলন চালিয়ে নিতে বলেছেন। অথচ বিএনপির মহাসচি এই দাবি প্রত্যাখান করেছেন। বলেছেন, খালেদা জিয়া কোনো নির্দেশনা দেননা। মির্জা ফখরুলের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। দুই শরিক দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রীতিমত দ্বিধাদন্ধে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন- খালেদা জিয়ার ঘোষণা নিয়ে কেন সত্য বলছেন আর কে মিথ্যা বলছেন? এর উত্তর খুঁজছেন তারা।

গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।

খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছেন আপনারা যারা বাইরে আছেন তারা সবাই মিলে আন্দোলন করেন। আমি দেখতে চাই আপনার আন্দোলন করছেন, আন্দোলন করতে হবে। আমাদের এই আন্দোলনে ওনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা বলেছেন সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি বলেছেন, কোনো অবস্থায় এই সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’

চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন দলীয় কোনও নির্দেশনা দেন না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া আন্দোলনের কোনো নির্দেশনা দেন না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন, স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে- সেভাবেই দলের সিদ্ধান্ত হয়। চেয়ারপারসন অসুস্থ। তিনি কোনো দলীয় নির্দেশনা দেন না। তাকে নিয়ে এসব কাজ করবেন না।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমি সেদিনই বলেছি, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই। আমরা তার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কিছু কথা বলেছেন। বলেছেন, আন্দোলন বিশেষ কোন দলের না। দেশে যেনো আর কোনদিন এরকম পরিস্থিতি না আসে সেটার জন্য আন্দোলন।’বিএনপির মহাসচিব তাহলে  খালেদা জিয়া কোন সিদ্ধান্ত দেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হয়তো ডে-টু-ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি নেই বলে একথা বলেছেন।’

বিশেষ সুবিধা ভোগের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা আন্দোলন করলেও বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের  নেতাদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মোচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূহ উল আলম লেনিন। তিনি বলেন, ‘ওদের সিদ্ধান্ত আসে লন্ডন থেকে। খালেদা জিয়া যদি বলে থাকেন যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়- তবে সেটা তিনি কতটুকু জেনে বলেছেন তা বিবেচনার বিষয়। কেননা তিনি ততটুকুই জানেন, যতটুকু তার নেতারা তাকে জানায়। একেক নেতা একেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছেন, তাদের নিজেদের মধ্যেকার দূরত্ব জনগণের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে ‘

গত ৯ই আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। ৭৮ বছর বয়সী বিএনপি নেত্রী লিভার সিরোসিস, আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদন্যতায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। আর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।




মুজিবনগরের বল্লবপুরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা

মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বল্লবপুরে আওয়ামী লীগের  বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

শুক্রবার বিকেলে বাগোয়ান ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মল্লিকের সার্বিক সহযোগীতায় বল্লভপুর গ্রামবাসির আয়োজনে এ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি থিউফিল মল্লিকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাগোয়ান ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মারিও সুসিত মন্ডল গনা, সাধারণ সম্পাদক মাইকেল মন্ডল টুইস, বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে এডমিন বিনিময় বিশ্বাস, ইয়ং বাংলা ফিচার লিডারের সভাপতি হাসানুজ্জামান লালটু।

বক্তারা বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনাদের সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নকে তুলে ধরতে হবে এবং সাধারণ জনগণকে বোঝাতে হবে যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা এত ভালো আছি । সারা বাংলাদেশের শহর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে রাস্তাঘাট , ব্রিজ কালভার্ট ,ড্রেন নির্মাণ , মাঠের রাস্তা  পাকা করন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করে যাচ্ছে তাই এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং ভালো থাকতে হলে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কে ক্ষমতায় আনতে হবে এবং নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন , ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি সদস্য সিবাস্তিন মল্লিক ঝড়ু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভিনসেন্ট মন্ডল, আওয়ামী লীগ নেতা লুক হরেন্দ্র বিশ্বাস রিঠু , সমর বিশ্বাস, বল্লভপুর সার্বিক যুব উন্নয়ন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান খানসহ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা।

বর্ধিত সভায়  সঞ্চালনায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বিকাশ বিশ্বাস।




জীবননগরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রীজের সাথে ধাক্কা নিহত ২, আহত ১

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রীজের সাথে ধাক্কায় সেলিম উদ্দিন ও স্বপন আলী নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন।

আজ শুক্রবার দুপুর ২ টার দিকে জীবননগর উপজেলার উথলী-বেগমপুর সড়কের ছোটপোল নামক স্থানে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম উদ্দিন দামুড়হুদা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। নিহত স্বপন আলী একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে

আহত হলেন- একই গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসেন (২৪) ।

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জাবীদ হাসান জানান, দুপুরে মোটরসাইকেলযোগে বেগমপুর থেকে উথলীর দিকে আসছিল তিন যুবক। এসময় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উথলী-বেগমপুর সড়কের ছোটপোল নামক স্থানে পৌছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রীজের সাথে ধাক্কা দেয়। এতে সড়কের উপর ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী। তাদের উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিম উদ্দিনকে মৃত ঘোষনা করেন। বাকী দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আর একজনের মৃত্যু হয়।

ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে আধা বোতল বাংলা মদ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই তিন যুবক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ওই ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।




বাংলাদেশ আ.লীগ কোন মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেনি

‘৯৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত যাদের’ এমন চটকদার শিরোনামে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এসকল সংবাদ নিয়ে ভুয়া মনোনয়ন প্রাপ্তদের অনুসারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে এবং দলের মধ্যে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে।
এসকল সংবাদকে গুজব ও বিভ্রান্তিকর নিউজ উল্লেখ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ নিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং তাদের সম্পর্কে ইমেইলে নোটিশ করতে বলা হয়েছে।
পেজটিতে বলা হয়েছে:
গুজব ও বিভ্রান্তিকর নিউজ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এধরণের কোন তালিকা প্রকাশ করেনি।
যারা বার বার এধরণের তালিকা বা মনোনয়ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ। এসব গুজব দেখলেই পেজে ইনবক্স করুন অথবা মেইল করুন info@albd.org এই ইমেইলে।



সাংবাদিক মনির হায়দারের পিতার ইন্তেকাল

বাংলাভিশন টেলিভিশনের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক মনির হায়দারের পিতা মেহেরপুর সদর ‍উপজেলার ইসলামনগর কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম হোসাইন আহমেদ বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

গতকাল বৃৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর। তিনি ৬ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।

মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার বাদ আসর ইসলামনগর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে।

সাংবাদিক মনির হায়দারের পিতার মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে শোক প্রকাশ করেন মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ইয়াদুল মোমিন, মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তোজাম্মেল আযম, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব চান্দু, মেহেরপুর প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক জুলফিকার আলী কানন, অনলাইন ডেস্ক ইনচার্জ খান মাহমুদ আল রাফি, স্টাফ রিপোর্টার শহিদুল ইসলামসহ মেহেরপুর সাংবাদিক মহল।




আদালতে আদিলুরের অপরাধ প্রমাণিত: ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রস্তাবের কী হবে?

বাংলাদেশের আদালতে আদিলুরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে অধিকারের বিষয়ে সাতটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। আইনজীবীরা বলছেন, মানবাধিকারের কথা বলে অধিকার সংগঠনটি দেশকে অস্থিতিশীল করতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলো। সেটাও মানবাধিকারপরিপন্থী। তাই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তুাব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

২০১৩ সালে তথ্য প্রযুক্তি আইনে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা দূতাবাসের প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

একইদিনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়। সেখানে মানবাধিকার সংস্থা ’অধিকার’ বাংলাদেশে একটি এনজিও যার নিবন্ধন বাতিলসহ এক দশকেরও বেশি হয়রানির শিকার হয়ে আসছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের সময় মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে কিন্তু সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো সরকারের দ্বারা হয়রানি ও নিপীড়নের সম্মুখীন হয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার এবং সংগঠনটির নিবন্ধন পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আদালতে অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাব কতটা গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মানবাধিকারের কথা বলে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে প্রস্তুাব দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী রানাদাশগুপ্ত। তিনি বলেন, মানবাধিকারের কথা বলে অধিকার সংগঠনটি দেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলো। সেটাও মানবাধিকারপরিপন্থী।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য, সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। পরবর্তীতে ৬১ জন নিহতের তালিকার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে।




রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন দরকার

পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে বর্বর পাকিস্তানি হানাদাররা সুজলা-সুফলা-শ্যামল বাংলাকে আক্ষরিক অর্থেই শ্মশানে পরিণত করেছিল। ব্যাংকে টাকা নেই, ট্রেজারি খালি, সোনাদানা—সব কিছু লুট করে নিয়ে গেছে পাকিস্তানের লুটেরা বাহিনী। আত্মসমর্পণের আগে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট। সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর, রেললাইন—সবই ধ্বংস করে দিয়েছে হানাদার ও তাদের দোসররা।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্দেশে আলবদরের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সব টাকা রাস্তায় এনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর মতো বন্ধুর বড়ই অভাব ছিল। সব মিলিয়ে দেশটির টিকে থাকা নিয়েই শঙ্কা ছিল। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো ও বড় পরাশক্তির ধারণা হয়েছিল যে সদ্যঃস্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক জনসন ও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। ১৯৭২ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বটমলেস বাস্কেট’ শিরোনামে অভিহিত করে সংবাদও ছাপা হয়ছিল। হেনরি কিসিঞ্জারের নেতৃত্বাধীন এক কমিটি মনে করেছিল, এটি হবে আন্তর্জাতিক এক তলাবিহীন ঝুড়ি। এখানে যতই সাহায্য ঢালা হোক না কেন, তা কোনো কাজেই লাগবে না।

দেশটিতে দ্রুতই দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দেবে। ওই সময়ে সিআইএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এত অল্প জায়গায় এত মানুষের বাস এবং এত দারিদ্র্যের কারণে দেশটি তার প্রতিবেশী ও বিশ্বের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জারের কুখ্যাত উক্তি তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ রূপ-মাধুর্য-ঐশ্বর্যে এতটাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে যে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের নিত্যনতুন প্রস্তাব আসছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা প্রতি মাসেই আসছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুরে গেলেন কয়েক দিন আগে।

জাপান সরকারের আমন্ত্রণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জাপান সফর করেছেন। জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারি উন্নীত হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় সফর করে গেলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে এক পরিবারের সদস্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশ সফরে আসার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। জি২০ ও ব্রিকসের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও উভয় সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। ধনী রাষ্ট্রগুলোর গ্রুপ জি৭-এর আউটরিচ সম্মেলনেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শোনানোর জন্য। বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বসম্প্রদায়ের এই আকর্ষণের গোপন রহস্য বঙ্গজননীর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষণের মূল রহস্য হলো ঈর্ষণীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, অপার প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদের সম্ভাবনার হাতছানি, কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, বিরাট অভ্যন্তরীণ শ্রম ও বিপণন বাজার আর বিশাল কর্মক্ষম মানবসম্পদ। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল, স্যাটেলাইট, সাবমেরিন ও পরমাণু ক্লাবে যোগদান, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের মতো মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কাছে রীতিমতো রহস্য। পুরো বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই মিলছে তার স্বীকৃতি। খোদ জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংক এখন বিভিন্ন সদস্য দেশকে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সরল স্বীকারোক্তি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর সব কিছুই সাক্ষ্য দিচ্ছে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে এক সমীহের নাম বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো, বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের অনন্য মর্যাদা—সব কিছুই বদলে গেছে। বদলায়নি আমাদের রাজনীতি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরো নষ্ট, নোংরা, অশোভন হয়েছে। সরকারের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতবিরোধ হয়। সরকারকে চাপে রাখতে, দাবি আদায় করতে আন্দোলন-সংগ্রাম হয়। তার পরও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু জি২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেলফি তুলেছেন এবং অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন। সেলফি ও অনানুষ্ঠানিক এই আলোচনার রাজনৈতিক তাৎপর্য কী? বাইডেনের স্বতঃস্ফূর্ততা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের কর্মক্ষেত্রের কথা জেনে তাঁর কাছ থেকে ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নেওয়া, সর্বোপরি বাইডেনের শারীরিক ভাষা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের মেরামত কিংবা মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত কি না সে বিষয়ে বিশ্লেষণে না গিয়েও এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে এটি এক অনন্য রাজনৈতিক শিষ্টাচারের উদাহরণ। বাইডেনের সেলফিকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের কিছু নেতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীদের বক্তব্য কতটা শোভন? বঙ্গবন্ধুকন্যা বৈশ্বিক নেতৃত্বের এমন এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছেন যে তাঁর সঙ্গে বাইডেনের সেলফি তোলা খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।

জি২০ সম্মেলনের আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, প্রভাবশালী রাষ্ট্রের নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মাঝখানে রেখে ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছেন। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বাসগৃহে মাত্র দুজন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, আর অন্যজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জি২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, একটি সোফায় বসে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর পাশে খালি পায়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন ঋষি সুনাক। সেভাবেই তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে কথা বলছেন। এটি একদিকে যেমন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিনয় ও সৌজন্যতার অপূর্ব নিদর্শন; অন্যদিকে বয়োজ্যেষ্ঠ ও যোগ্য নেতৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক অনবদ্য শোভন রাজনৈতিক শিষ্টাচার। সম্প্রতি সফর করে যাওয়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর বিনয় ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারও শিক্ষণীয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফরাসি ভাষায় বক্তব্য শুরু করার আগে ফরাসি ভাষার ট্রান্সলেটর ইনস্ট্রুমেন্টটি নিজ হাতে বয়ে এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিচ্ছেন। একটি উন্নত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের এই আন্তরিক আচরণ একটি স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষারত সরকারপ্রধানকে নয়, বরং একজন যোগ্য বৈশ্বিক নেতৃত্বকে সম্মান প্রদর্শনের এক শিষ্টাচারের উদাহরণ।

এর বিপরীতে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুকন্যার সব অবদানকে শুধু অস্বীকারই করেন না, বরং বিএনপি মিছিল-মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যেসব অসম্মানজনক স্লোগান দেয় তা অশোভন-অশ্লীল। বিএনপির মিছিলে একজন কিশোর কিংবা যুবক যখন জাতির জনককে অসম্মান করে স্লোগান দেয়, তখন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নোংরামি কতটা নিচে নেমে গেছে তা বোধ করি বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আত্মত্যাগের এক মহৎ পারিবারিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ১৯৭৪ সালের ১৪ এপ্রিল ভাসানী পল্টনে হুকুমতে রব্বানী পার্টির উদ্যোগে এক মহাসমাবেশের ডাক দেন। একটি মিছিল নিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ঘেরাওয়ের জন্য বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন ভাসানী। খবর শুনে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান রাস্তায় চলে আসেন। মিছিল কাছে আসতেই বঙ্গবন্ধু মওলানা ভাসানীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এ দৃশ্য দেখে হাজার হাজার মিছিলকারী জনতা হতভম্ব। বঙ্গবন্ধু হুজুরসহ (ভাসানী) কয়েকজন নেতাকে সম্মান দেখিয়ে ভেতরে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু নিজেই বয়োবৃদ্ধ হুজুর কে ধরে নিয়ে গেলেন। ভেতরে বসিয়ে মিষ্টিমুখ করালেন। সার্বিক পরিস্থিতি হুজুরের সামনে তুলে ধরলেন। হুজুর কিছু পরামর্শ দিয়ে বিদায় নিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান তাঁর Through Moments in History : Memoris of Two Decades of Intellectual and Social Life (1970-1990) আকরগ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে জাসদের সাধারণ সম্পাদক তাঁকে জাসদের এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করেন। অধ্যাপক রহমান বলেন, তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হওয়ায় সমাবেশে যোগদানের জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদন প্রয়োজন। অধ্যাপক রহমান লিখেছেন, জাসদের সমাবেশে যোগদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর অনুমতি চাইলে বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণ ভাবলেন। সামনের কাগজগুলোতে কিছু একটা আঁকাজোখা করলেন। তারপর বললেন, ‘You may…go. There are some good boys and girls in their party, no harm if they hear some good words from you on nation building.’

অধ্যাপক রহমান জাসদের সভায় যোগদান করেছিলেন। রাস্তায় যারা তাঁর রক্ত চাচ্ছে, তাদের সমাবেশে যোগদানের জন্য সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের একজন দায়িত্বশীল সদস্যকে অনুমতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। ত্যাগের দীক্ষায় মহিমান্বিত এবং প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির পূজনীয় এই রাজনীতি চর্চা করেছেন বঙ্গবন্ধু। সেই পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধুকন্যার আচরণে তা পরিলক্ষিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের মধ্যে তাই মাইক্রোফোনের উচ্চতা ঠিক করে দিতে ছুটে যান আমাদের প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গিদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে গ্রেনেড মেরে হত্যা করার চেষ্টার পরও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁকে সমবেদনা জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির সিনিয়র নেতারা সেই সময় খালেদা জিয়ার বাসায় উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীকে বাসায় ঢুকতে দেওয়ার সৌজন্য প্রদর্শনও করেননি। বরং বাসায় ঢোকার পকেট গেটটিও সেদিন প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেটের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসেন। এটি কোনো বিবেচনায়ই শিষ্টাচারের রাজনীতি নয়।

বঙ্গবন্ধুর মতো একটি দয়ার্দ্র হৃদয় পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে যে পরিবারের সম্পৃক্ততা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে যে খালেদা জিয়া হরতাল করেছেন, ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আটকে দিয়েছেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার-অপমান করেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবসে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেছেন, সেই খালেদা জিয়াকে নির্বাহী বিবেচনায় জেল থেকে মুক্তি দিয়ে বাসায় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এটি সহনশীল রাজনৈতিক শিষ্টাচারের নজির।

এক পক্ষের চেষ্টায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শিষ্টাচারের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হয় না। এ জন্য সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। হতাশার কথা হলো, সব বদলায়; আমাদের নষ্ট-নোংরা-অশোভন রাজনীতি বদলায় না। আমাদের যে অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে তা টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতেই হবে। রাজনীতিতে শিষ্টাচারের প্রচলন করতেই হবে।

লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।




সক্ষমতার ডানায় আকাশে শান্তির নীড়

জাতির স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা বহন করে চলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। একটি মাত্র ডিসি-৩ উড়োজাহাজ নিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশে জাতির পিতার হাত ধরে যাত্রা শুরু করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে একটি থেকে ২১টিতে উন্নীত হয়েছে বিমানের বহর। জীর্ণতা ছেড়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম তারুণ্যদীপ্ত বহর হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে বাংলাদেশ বিমান। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে ৪৩৯.৭৮ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে। আগের বছরেও অর্থাৎ করোনা মহামারির মধ্যে যখন বিশ্বের বৃহৎ এয়ারলাইন্সসহ সিংহভাগ এয়ারলাইন্স লোকসানের মধ্যে ছিল, সে বছরও চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করে ১৫৮ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছিল বিমান।

বিএনপি আমলে কেমন ছিল বিমান?
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানকে পরিণত করে দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দাররা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে বিমানের সাপ্লাই আর এয়ার ক্রাফট ক্রয়। বিএনপি আমলে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে- নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাংকফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। চরম লোকসান আর অব্যবস্থাপনায় বিমান মুখ থুবড়ে পড়ে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী। তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রাজশাহী এয়ারপোর্টও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি। আর বরিশাল এয়ারপোর্ট বিমান চলাচল কমে যায়। রাডার স্টেশন ছিল নষ্ট। গোটা বিএনপি আমলে একাধিক আবেদনের পরেও এটা ঠিক করেনি মন্ত্রণালয়।

বিমানের ৫ টি ডিসি-১০ প্লেনের মধ্যে ৪ টিই অচল করে রাখা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ডিসি-১০ প্লেনের ১০টি ইঞ্জিন বিদেশে মেরামতের নামে পড়ে থাকে। ফলে ৫ টির মধ্যে ৪ টি ডিসি-১০প্লেন আর উড্ডয়ন বন্ধ হয়ে যায়। এর চাপ পড়ল বিমানের তখনকার ৩ টি এয়ারবাস এ্যারোপ্লেনের ওপরও। তাই বিমানের সমস্ত সিডিউল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। প্রতিটি ফ্লাইট ডিলে তখন একটি নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার ছিল।
ডিসি-১০ প্লেনের ১০টি ইঞ্জিন ইচ্ছাকৃতভাবে বিদেশে ফেলে রাখা হয়।

নিউইয়র্কে নর্থ আটলান্টিক ট্রাভেল এজেন্সি নাম দিয়ে বিএনপি নেতাদের কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি মিলে একটি সিন্ডিকেট করে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিমানের নিউইয়র্ক অফিসকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলেন বিএনপি নেতা-কর্মীদের ট্রাভেল এজেন্সি ছাড়া অন্যরা বিমানের টিকেট বিক্রি করতে পারবে না। ওই ট্রাভেল এজেন্সিগুলো নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্কের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি দামে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করত। ফলে ঢাকা-নিউইয়র্কের মধ্যে বিমানের যাত্রী কমতে শুরু করে। এক পর্যায়ে বিমানের ঢাকা-নিউইয়ের্কের ফ্লাইটই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের হাতে নিরাপদ ‘আকাশে শান্তির নীড়’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অব্যবস্থপনা থেকে ঘুরে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ বিমান। দেখেছে লাভের মুখ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানের থার্ড টার্মিনাল তৈরির কাজ প্রায় শেষ। নতুন এই টার্মিনালে বিশ্বের ৫৪টি এয়ারলাইন্স তাদের অপারেশন পরিচালনা করবে। সেই সাথে বাড়বে বাংলাদেশ বিমানের ব্যাপ্তি আর ফ্লাইট সংখ্যা।

নতুন ১০টি এয়ারবাস
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশ বিমানের বহরে যোগ হয়েছে নতুন অনেক বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনারসহ বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা এখন ২১টি। তার মধ্যে ১৪টি নিজস্ব এবং ৫টি লিজ। নিজস্ব ১৪টির মধ্যে বোয়িং৭৭৭-৩০০ ইআর ৪টি, বোয়িং ৭৮৭-৮ ৪টি, বোয়িং ৭৮৭-৯ ২টি, বোয়িং ৭৩৭ ২টি এবং ড্যাশ-৮ ২টি।

ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে বাংলদেশ বিমান তাদের বহরে বিমান সংখ্যা বাড়িয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সাথে ১০টি অত্যাধুনিক এয়ারবাস কেনার চুক্তি হয়। এর আগে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে কিস্তিতে ১২টি বিমান ক্রয় করেছিল।

যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া বেশ আগেই শুরু করেছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এতদিন এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ফ্রান্সের এই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এ৩৫০ মডেলের উড়োজাহাজ জি-টু-জি পদ্ধতিতে কেনা হবে। এর আগে ৬ মে লন্ডনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ সংক্রান্ত যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর হয়। পরে জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এয়ারবাস থেকে আটটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কিনবে বিমান। পরবর্তী সময়ে আলোচনা সাপেক্ষে আরও দুটি মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ কেনা হবে।

এয়ারলাইন্সে বিমান সংখ্যা কত হওয়া উচিত?
বিশ্বে লাভবান এয়ারলাইন্স পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যেই এয়ারলাইন্সের বিমান সংখ্যা যতো বেশি সেই এয়ারলাইন্স ততো বেশি লাভবান। ভারতে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোতেও সর্বনিম্ন ২০০ এয়ারক্রাফট থাকে, যার বেশিভাগই ভারতের মধ্যে যাত্রীসেবা দেয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাওয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রয়াত্ত্ব বিমানবহরে বিমানের সংখ্যা মাত্র ২১টি। বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশের সঙ্গে বিমানের আকাশসেবার চুক্তি থাকলেও মাত্র ১৬টি দেশে এখন কার্যক্রম বিদ্যমান। বিমানবহরে নতুন এয়ারক্রাফটগুলো যুক্ত হলে বন্ধ রুটসহ নতুন নতুন রুট চালু হবে।

নতুন উড়োজাহাজ সরবরাহে কমপক্ষে দুই বছর লাগবে। উড়োজাহাজ এলে বিমানের নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ হবে। জাপানে নতুন রুট চালু হয়েছে। কানাডায় আরও ফ্লাইট বাড়ানোসহ গুয়াংজু, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি নতুন রুট চালুর সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনা সেই পরিকল্পনারই অংশ। আগামী মাসের মধ্যে গুয়াংজু ফ্লাইট চালু হওয়ারও কথা রয়েছে। প্রায় একযুগ যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ থাকা ফ্লাইট চালু করতে কোনো বাধা নেই। সিভিল এভিয়েশনের গ্রিন সিগন্যাল পেলে বিমান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট চালু হবে। ধীরে ধীরে বাড়ছে সুশৃঙ্খল পরিকল্পিত ফ্লাইট সংখ্যা, যে কারণে যুগ যুগ ধরে লোকসানের খাতায় নাম লেখানো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লাভের মুখ দেখছে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।