দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর) আসনের সংসদীয় এলাকায় শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দ্বাদশ নির্বাচনে কে পাচ্ছেন মেহেরপুর-১ আসনের নৌকার বৈঠা। এখন কেন্দ্র থেকে জেলা সর্বত্রই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে কে শতভাগ দলের অনুগত সৈনিক হিসেবে বেশি পরীক্ষিত? এই প্রশ্নটিও সামনে চলে আসছে।
দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত বিনা প্রশ্নে কে সব সময় শতভাগ মেনে চলেন? কে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দলের কর্মকাণ্ডে বেশি সক্রিয় ছিলেন? গত ১০ বছরেরও বেশি সময়ে কে বেশি মূল্যায়ন পেয়েছেন?
নির্বাচনের ৩ মাস বাকি থাকলেও মেহেরপুরের সাধারণ ভোটাররা প্রার্থী বাছাইয়ে এখন থেকেই নেমেছে চুল চেরা বিশ্লেষনে। প্রার্থীদের অতীত, বর্তমান, বেঁড়ে ওঠা, ছাত্র জীবন সব কিছু নিয়েই এখন ভোটারদের বিশ্লেষণ। সেক্ষেত্রে মেহেরপুর-১ আসনের যাদের নাম ঘুরে ফিরে আসছে তাদের মধ্যে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এমএএস ইমন। এই দুই নেতাকে নিয়ে মেহেরপুরের সর্বত্রে চলছে আলোচনা সমালোচনা। শিক্ষা- দীক্ষা ও আচরণে কে এগিয়ে আছে এনিয়েও চলছে বিশ্লেষণ। তবে এ দু নেতার বাইরেও প্রায় দশ জন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগ অব্যহত রেখেছেন।
জানা গেছে, বর্তমান এমপি ফরহাদ হোসেন ১৯৮৭ সালে খুলনার মুহসিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৯ সালে সরকারি ব্রজলাল (বিএল) মহাবিদ্যালয় থেকে এইসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকার সিটি কলেজ থেকে ব্যাচেলার অব আর্টস বিভাগে ১৯৯১ সালে বিএ পাশ করেন। পরে ইংলিশ ভাষার উপর ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে প্রিলিমিনারিসহ মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা সিটি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করছেন।
শিক্ষা জীবনে রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত না থাকলেও তার বাবার রাজনৈতিক কারনে সর্বশেষ তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে ২০১৫ সালে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হলে সরাসরি তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। পরবর্তিতে ২০২২ সালের সম্মেলনেও ফরহাদ হোসেন দ্বিতীয় বারের মত সভাপতি মনোনীত হন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ফরহাদ হোসেন তার পিতার রাজনৈতিক উত্তরসরি এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালিন প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন জামাই হিসেবেই রাজনীতিতে বেশি সুবিধা পেয়েছেন।
অপরদিকে, আব্দুস শুকুর ইমন (এম এ এস ইমন) মেহেরপুর জেলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ওই বছরে এমএএস ইমন জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে মেহেরপুর কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসিতে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে বিএসএস (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে মেহেরপুর সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যায়ন অবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরবর্তিতে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এস এম হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক, ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমাজ সেবা সম্পাদক এবং ২০০৫ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ছাত্ররাজনীতির ইতি টানেন। পরে ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত কেন্দ্রীয় উপপ্রচার কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির উপসম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার ৩২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ছাত্র জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত। পেশাগত জীবনে তিনি প্রিন্টিং প্রেস ব্যবসার সাথে জড়িত। তার মালিকানাধীন আনিশা প্রিন্টিং প্রেস থেকে সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করা হয়। তিনি পেট্রোবাংলার অধিনস্ত রুপান্তরিত গ্যাস কোম্পানী লি. এর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক, আইপি টিভি রাজধানী টিভির চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনীতির পাশাপাশি এম এ এস ইমন মেহেরপুর স্থল বন্দরের বাস্তবায়ন আন্দোলনে মুখপাত্র হিসেবে স্থলবন্দর বাস্তবায়নে মূখ্যভুমিকা পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে যা্েচ্ছন।
একটি সূত্র জানায়, বিগত সময়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এই নেতা (এমএএস ইমন) আন্দোলন, সংগ্রামে পরিচিত মুখ। বিশেষ করে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের জুলুম নির্যাতন ও এক-এগারোর সময়ে দলের দুঃসময়ে এই নেতা সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, পৈতৃক সূত্র ধরে ফরহাদ হোসেনকে কেন্দ্র যথেষ্ট মূল্যায়ন করেছে। এর জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ওপরে খুশি। কিন্তু একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় পর আওয়ামী লীগ নেতাদের অবমুল্যায়নে তারা দল থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছেন। নেতারা জানান, দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পাওয়া যেমন ফরহাদ হোসেনের জন্য বড় পাওয়া। পাশাপাশি তাঁকে ১০ বছরের বেশি সময় মেহেরপুর-১ আসনের এমপি’র পদও দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তবে, তাকে নিয়ে এখন আড়ালে-আবডালে শোনা যাচ্ছে নানা কথা।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রায় ৮ বছর কাটিয়ে দেওয়া ফরহাদ হোসেন দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেননি। বরং নিজেই জড়িয়ে পড়েছেন গ্রুপিংয়ে। একটি পক্ষের নেতা হিসেবে কম যোগ্যদের নেতৃত্বের কাতারে উঠিয়ে আনার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে। এসব কারনে তার পরিবারের মধ্যেকার লোক ছাড়া এখন আর কাউকে তার পাশেও পাওয়া যাচ্ছেনা।
সূত্রগুলো জানায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এমএএস ইমনকে মেহেরপুর-১ আসনের এমপি পদে চাইছেন জেলার স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। এমএএস ইমনকে অধিকতর কর্মীবান্ধব মনে করেন দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। আর এসব বিবেচনায় তাঁকেই বেছে নেওয়ার অনুরোধ মেহেরপুর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের।