আইয়ুব বাচ্চু আশির দশক থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গানে গানে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা। তার রূপালী গিটারের জাদু আজো যেন মোহিত করে শ্রোতাদের। বাংলা ব্যান্ড সংগীতকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য এক জায়গায়। আজ বুধবার (১৬ আগস্ট)
আইয়ুব বাচ্চুর বেড়ে উঠা চট্টগ্রামে। ১৯৬২ সালের আজকের এই দিনে চট্টগ্রামে জন্ম নেন নন্দিত এই ব্যান্ড তারকা। ৭০ দশকে স্কুলে থাকতে বাবার কাছ থেকে একটি গিটার উপহার পান। আর সেই থেকেই তার টুংটাং শুরু। কিশোর বয়সে প্রেমের পরেন পশ্চিমা সঙ্গীতের। কৈশোরের চঞ্চল সময় থেকেই পাশ্চাত্য রক ধাঁচের গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। হয়তো স্বপ্ন দেখতেন জিমি হেন্ড্রিক্স হওয়ার। যাকে আইয়ুব বাচ্চুর টিশার্টে প্রায় দেখা যেত।
একসময় তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজের ব্যান্ড ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে এর নাম পাল্টে রাখেন ‘আগলি বয়েজ’। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাটো নানা অনুষ্ঠানে গান করতো তাদের এই ব্যান্ড। তবে একসময় এই ব্যান্ডের সদস্যরা একেক দিকে ছড়িয়ে পড়েন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে কাজ করেন ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের সঙ্গে যা এখন ভক্তদের কাছে ‘নগর বাউল’ নামে পরিচিত।
পরবর্তীতে ১০ বছর আইয়ুব বাচ্চু সোলস-এর মূল গিটারবাদক, গীতিকার এবং গায়ক হিসেবে কাজ করেন। তিনি সোলসের সাথে চারটি অ্যালবামে কাজ করেছিলেন- সুপার সোলস (১৯৮২) যা ছিল বাংলাদেশের প্রথম গানের অ্যালবাম, কলেজের করিডোরে (১৯৮৫), মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭) এই অ্যালবামটিতেই বাচ্চুর সোলসের হয়ে গাওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’ প্রকাশ পায়।
সোলসের সাথে আইয়ুব বাচ্চুর শেষ অ্যালবামটি ছিল ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট, যা প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৮৮ সালে। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে বাচ্চু ব্যান্ডটি ছেড়ে নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার ব্যান্ড গঠন করেন, যা পরবর্তী সময়ে লাভ রানস ব্লাইন্ড বা সংক্ষেপে এলআরবি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে তারা বাংলাদেশে প্রথম ডাবল অ্যালবাম- এলআরবি ১ এবং এলআরবি ২ প্রকাশ করে। ব্যান্ডটির তৃতীয় স্টুডিও অ্যালবাম সুখ, জুনে মুক্তি পায় এবং এটি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ রক অ্যালবামগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। এতে ‘চলো বদলে যাই’ গানটি ছিল, আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশ্রেষ্ঠ গান হিসাবে বিবেচিত। এলআরবি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রক ব্যান্ডের মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। এই দলের মূল ভোকাল হিসেবে ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন বাচ্চু। তিনি গান গেয়েছেন বহু চলচ্চিত্রেও।
৪০ বছরের গায়কী জীবনে ১২টি ব্যান্ড, ১৬টি একক ও বহু মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলো তালিকায় রয়েছে- ‘সুখ’, ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘ফেরারি মন’, ‘এই রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখো’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘চলো বদলে যাই’সহ বহু নাম।
জনপ্রিয় এই ব্যান্ড তারকা ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর লাখো ভক্ত, পরিবার পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
সূত্র: ইত্তেফাক