গাংনীতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে শিক্ষক সমাজের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিক্ষক সমাজের আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এক শ্রেনীর শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিক্ষক সেলিম রেজা। এসময় শিক্ষক নেতা আক্তারুজ্জামান, সেলিম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাহারুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, রজব আলী, আজমাইন হোসেন, ইব্রাহিম খলিল, আফ্ফান আলী, আব্দুল হাকিম, জালাল উদ্দিন, হাসান আলীসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ -১৫ ইং সালে প্রাক প্রাথমিক সজ্জিতকরণ বাবদ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে ওই শিক্ষক মহল ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
২০১৭ সালে নব্য জাতীয়করণ প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করার নামে সকল শিক্ষকের নিকট থেকে ১ হাজার টাকা করে মোট ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আদায় করেছে ওই মহলটি। অথচ, ওই টাকা দিয়ে কোন মামলা না করে পকেটস্থ করেছেন তারা। সেই টাকা কোনো শিক্ষককে ফেরত দেয়নি। ২০১৮-১৯ সালে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ে করেন ওই মহলটি। তারা সিন্ডিকেড গড়ে তুলে হাতিয়ে নেন প্রায় ৮ লাখ টাকা। তারা প্রতি মাসিক মিটিং এ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসা বাবদ জনপ্রতি ২ শ’ টাকা করে উত্তোলন করেন। উত্তোলিত সেই অর্থ রোগীদের না দিয়ে তারা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিগত সরকারের সময় শেখ মুজিবেব বই কেনার নামে হাজার টাকা উত্তোলন হাতিয়ে নিয়েছে ঐ চক্রটি।
লিখিত বক্তব্যে তারা আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের সময় বিগত দিনের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে নিয়মের মধ্যে আনতে চাওয়ায় ওই মহলটি শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরী করেছেন।
তারা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে কাল্পনিক অনিয়ম দুর্নীতির নাটক সাজাচ্ছেন। ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে স্কুলে হাজিরা দেয়নি অনেক শিক্ষক। এখনও তারা ঠিকমত স্কুলে যায়না ,এমনকি ক্লাসও করে না।
তারা বলেন, গাংনী উপজেলার মুন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক , মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) নুরুল আমিন এবং বাহাগুন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুদ পারভেজ স্কুলে প্রায় অনুপস্থিত থাকেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা অফিসার কারন দর্শানো নোটিশ দিলে তারা শিক্ষা অফিসারকে নানাভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছে। এসব শিক্ষক মানসিক রোগী বলেও আখ্যায়িত করেছেন তারা। এই চক্রের সাথে জড়িতদের নামও উল্লেখ করেন। তারা হলেন, শিক্ষক মাঝহারুল ইসলাম, দানেচুর রহমান, মুক্তি, পারভেজ সাজ্জাদ রাজা, নুরুজ্জামান, তারিকুজ্জামান, আমানুল্লাহ, মাহবুবসহ আরও অনেকে। দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারদের রাজনৈতিকভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা অপকর্ম ও নামে বেনামে টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
বর্তমানে তাদের কথামত কাজ না করায় শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের দিয়ে হেনস্তা করছে এবং বিভিন্ন দপ্তরে শিক্ষা অফিসারদের বিরুদ্ধে দরখাস্ত করছে। বিগত সময়ে দায়িত্বরত শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ফারুক হোসেন, আকবর আলী, মো. সামসুজ্জামান, আতাউর রহমান, আলঅউদ্দীন এবং বর্তমান শিক্ষা অফিসার নাছিরউদ্দীনকেও বলির পাঠা বানিয়ে নানাভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
অভিযোগে আরও জানান, মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) নুরুল আমিন বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত সহ নানা অনিয়ম তুলে স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ২৪/০৯/২০২২ ২৯/০৯/২০২২, ২১/০৩/২০২৩, ২৫/০১/২০২৪ এবং ০৪/০২/২০২৪ খ্রী: অনুপস্থিত থাকার কারনে কারন দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়। তিনি নোটিশের কোন জবাব দেননি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আরিফ হাসান স্কুল পরিদর্শনে গেলে ২১/০৩/২০২৩ ও ০৪/০৪/২০২৩ তারিখে তাকে অনুপস্থিত পাওয়া গেলে কারন দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়। ২০২৩ সালে তিনি মুভমেন্ট রেজিস্টার ব্যবহার ও হালনাগাদ করেননি। নৈমিত্তিক ছুটির রেজিষ্টারও হালনাগাদ করেননি।তিনি ১৭/০১/২০২৪ ও ১৮/০১/২০২৪ তারিখে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে ক্লাষ্টার অফিসার ২১/০১/২০২৪ তারিখে পরিদর্শনে গেলে তাকে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। একইভাবে ক্লাষ্টার অফিসার আরিফ হাসান স্কুল পরিদর্শনে গেলে ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর, ২৪ তারিখেও অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তিনি সরকারিভারে প্রদানকৃত ল্যাপটপ বিক্রি করে দিয়েছিলেন।পরে শিক্ষা অফিসার ব্যবস্থা নেয়ার কারনে পরবর্তীতে ল্যাপটপ ফেরত দেয়।
এসব অভিযুক্তদের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় নিলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে এবং তাদের শাস্তি নিশিচত হলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে বলে জানান এসব শিক্ষকবৃন্দ।