গাংনীতে জমি বিক্রিতে জালিয়াতি, দুই ভাই জেলে
প্রতারনা করে একই জমি দুই বার বিক্রি করার দায়ে গাংনীর ফতাইপুর গ্রামের দুই সহোদর আব্দুর রাজ্জাক ও জাকির হোসেনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। আবার এ মামলার বাদি হচ্ছেন তাদেরই আপন ভাই।
জানা গেছে, ফতাইপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে জিয়ারুল ইসলাম বাদি হয়ে মেহেরপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আমলী আদালতে ছয় জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা সুত্রে জানা গেছে, জিয়ারুল ইসলামের ভাই আব্দুর রাজ্জাক ও জাকির হোসেন এবং আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আনজুমানারা খাতুন কৃষি ব্যাংক গাংনী শাখা থেকে ২০১০ সালে ৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এর বিনিময়ে ফতাইপুর গ্রামের একটি জমি মটগেজ দেন তারা। পরবর্তীতে ২০১১ সালে তারা একই জমি ভোমরদহ গ্রামের আব্দুর রহমানের কাছে বিক্রি করে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করে দেন। ২০১৩ সালে আব্দুর রহমান ওই জমি আব্দুর রশিদ নামের একজনের কাছে বিক্রি করেন। ২০২১ সালে আব্দুর রশিদ ওই জমি বিক্রি করেন আব্দর রহমানের কাছে। এর পরে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আব্দুর রহমান জমি বিক্রি করে দেন চৌগাছা গ্রামের রফিকুল ইসলামের কাছে। আব্দুর রাজ্জাক থেকে আব্দুর রহমান, আব্দুর রহমান থেকে আব্দুর রশিদ, আব্দুর রশিদ থেকে আবার আব্দুর রহমান এবং আব্দুর রহমান থেকে রফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রির মধ্য দিয়ে দলিলের সংখ্যা দাঁড়ায় চারটি। অর্থাৎ এই চার বার বিক্রির পর তা গাংনী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। কৃষি ব্যাংকে যদি জমি প্রকৃতপক্ষে মটগেজ হয় তাহলে কিভাবে চারবার বিক্রি হলো ? অনেকের মনে এই যৌক্তিক প্রশ্ন উদয় হলেও কৃষি ব্যাংক থেকে তার সদুত্তোর মেলেনি।
জানা গেছে, একই জমি চারবার কেনাবেচার সময়ের মধ্যেই কৃষি ব্যাংক থেকে নিলামে ক্রয় করেন আব্দুর রাজ্জাকের আপন ভাই জিয়ারুল ইসলাম।
জানা গেছে, আব্দুর রহমান জমি কেনার পর সেখানে একটি পাকা বাড়ি নির্মান করেন। রফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রির পর তা বুঝিয়ে দেন আব্দুর রহমান। রফিকুল ইসলাম বাড়ি দখল নেন এবং খারিজ, খাজনা ও বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করেন তার নামে। পৌরসভা থেকে হোল্ডিংও খোলা হয় রফিকুল ইসলামের নামে। এর পরে জিয়ারুল ইসলাম নিলালের মাধ্যমে জমির মালিক দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, কৃষি ব্যাংক থেকে তড়িঘড়ি করে গোপনে নিলাম করা হয়। কাগজপত্রের নিয়মাবলী গোপনে জোড়াতালি দিয়ে নিলাম সম্পন্ন করে মটগেজকারী আব্দুর রাজ্জাকের আপন ভাই জিয়ারুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে কৃষি ব্যাংক। ফলে নিলাম কার্যক্রম হয়ে দাঁড়ায় প্রশ্নবিদ্ধ।
এদিকে রফিকুল ইসলাম ওই জমি ও বাড়ি মটগেজ দিয়ে রুপালী ব্যাংক গাংনী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। কাগজপত্রের বৈধতা আইন অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে জমির মালিকানা নিশ্চিত হয়ে ঋণ দেয় রুপালি ব্যাংক। যা নিশ্চিত করেছেন রুপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি নিয়ে বাধা সৃষ্টি শুরু করে জিয়ারুল ইসলাম।
এদিকে একই জমি রফিকুল ইসলাম ক্রয় করেন আব্দুর রহমানের কাছ থেকে আর জিয়ারুল ইসলাম কেনেন কৃষি ব্যাংকের নিলামে। ফলে দুই মালিকের মধ্যে চরম বিরোধ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
জানা গেছে, জিয়ারুল ইসলাম বাদি হয়ে মেহেরপুর বিজ্ঞ আদালতে যে মামলাটি দায়ের করেন তাতে আসামি করা হয় ৮ জনকে। এরা হলেন- জিয়ারুল ইসলামের আপন ভাই আব্দুর রাজ্জাক ও জাকির হোসেন, আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আনজুমানারা খাতুন, জমি ক্রেতা আব্দুর রহমান, আব্দুর রশিদ, রফিকুল ইসলাম, রুপালী ব্যাংক ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম, এ্যাডভান্স অফিসার শাহাবুল ইসলাম। ওই মামলার আসামি হিসেবে বেশ কয়েকদিন হাজতবাসে ছিলেন রফিকুল ইসলাম। পরে আব্দুর রাজ্জাক ও জাকির হোসেন আদালতে জামিন নিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। বর্তমানে তারা মেহেরপুর জেলা কারাগারে হাজতবাসে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আপন দুই ভাইয়ের নামে মামলা দায়ের করলেও জামিনের জন্য জিয়ারুল ইসলাম নিজেই চেষ্ট করেন। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে জমির এই বিরোধের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে গাংনীর বিভিন্ন মহলে মিমাংসার জন্য ঝুলে ছিল। কোথাও কোন সমাধান পাননি ভুক্তভোগীরা। কৃষি ব্যাংকের নিলাম আর অন্য সব দলিলগুলোর বিষয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠরা বিষয়টি দ্রুত সুষ্ট সমাধান করবেন এ প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।