দেশ কাঁপাতে ঢাকা গেছে মুজিবনগরের সেই রাজা বাবু। প্রায় আড়াই টন ওজনের রাজা বাবুকে শেষবারের মত দেখতে ইনছান আলীর বাড়িতে জমেছে এলাকাবাসির ভীড় । ঢাকা তেঁজগাও খেলার মাঠর হাটে পাওয়া যাবে দেশ সেরা রাজাবাবুকে।
গতকাল বুধবার বিকালের দিকে ট্রাকে করে রাজাবাবুকে ঢাকার উদ্যেশ্যে রওনা হয়েছে।
গরুর মালিক ইনছান আলী বলেন, তেঁজগাও খেলার মাঠের ওই হাটে রাজা বাবুর জন্য মঞ্চ তৈরী হয়েছে। ওখানেই আজকে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে রাজাবাবুকে শেষবারের মত গোসল ও খাইয়ে দিয়েছেন ইনছান আলীর স্ত্রী শাহিনা খাতুন ও মেয়ে সেজুতি। শেষবারের মত আদর ও ভালবাসা দিয়ে চোখের পানি ফেলেছেন তারা। কারন, সাড়ে চার মাস বয়সি রাজা বাবুকে নিয়ে এসে অতি আদর যত্নে শাহিনা ও সেজুতিসহ বাড়ির মালিক ইনছান লালন পালন করেন।
ইনসান আলী গরুটির দাম হাকিয়েছেন ৩৫ লক্ষ টাকা। গত বছর কোরবানিতে রাজা বাবুর দাম হাঁকানো হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। তবে, ক্রেতারা ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সে দামে না বিক্রি করে রাজা বাবুকে আরো একটি বছর পালন করেন ইনছান আলী।
ইনসান আলী গাছান গরুটির ওজন ৬০ মণ দাবী করলেও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন গরুটির মাংসের ওজন ৪০ মণ হতে পারে। তবে, ৪০ হোক আর ৬০ মন হোক এই রাজা বাবুই এবছরের কোরবানি ঈদে দেশের সবচেয়ে বড় গরু। এমনটাই দাবী করছেন গরুটির মালিক ও মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
জানা গেছে, গরুর মালিক মোনাখালি গ্রামের ইনছান আলী ও তার পরিবারের লোকজন আদর-যত্নের পাশাপাশি রাজাবাবুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সার্বক্ষণিক প্রাণী চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
ইনছান আলী বলেন, ‘চার মাস বয়সী হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের রাজাবাবুকে ৮০ হাজার টাকায় কিনেছিলাম ৩ বছর আগে। পরিবারের একজন সদস্যের মতো করেই পরম আদর যত্নে লালন-পালন করে বড় করেছি তাকে। আদর করেই গরুটির নাম রেখেছিলাম মুজিবনগরের রাজাবাবু।
বিশাল আকৃতির এই ষাঁড়ের খাদ্য তলিকায় আছে কাঁচা ঘাস, সয়াবিন খৈল, ভুট্টা, ছোলা, গমের ভূষি, কলা ও বিচালি।’ রাজাবাবুকে দিনে ২০ কেজি দানাদার খাবার খেতে দিতে হয়। দানাদার খাবার সকালে ১০ কেজি এবং রাতে ১০ কেজি দিয়ে থাকেন বলে জানালেন ইনছান আলী।
ইনছান আলীর মেয়ে সেজুতি বলেন, ‘দেখতে বিশাল হলেও রাজাবাবু খুবই শান্ত স্বভাবের, দিনে তিনবার গরুটিকে গোসল করানো হয়। রাজাবাবু আমাদের পরিবারের একজন সদস্যের মতোই। ‘
ইনসান আলীর স্ত্রী শাহিনা খাতুন জানান, এ রাজাবাবুকে আমরা দীর্ঘ চার বছর ধরে লালনপালন করছি নিজের সন্তানের মতো, যত্ন করতে হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত।
মোনাখালি গ্রামের সুরুজ আলী বলেন, এই রাজাবাবুকে নিয়ে আমরা অনেকেই অহংকার করি। কারন এই গরুটির কারনেই বলতে গেলে মিডিয়ায় আমাদের গ্রামের নামটি তুলে ধরা হয়।
দারিয়াপুর গ্রামের স্বপন আলী বলেন, বাড়ির পাশে অনেকেই গরু পালন করছেন। তাদের মুখ থেকে রাজাবাবুর কথা শুনে দেখতে এসেছি। এটির অনেক সুন্দর ভালো লাগছে। দানব আকৃতির এই গরুটিই দেশ সেরা হতে পারে বলে আমরা মনে করছি।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘রাজাবাবুকে দেখতে গিয়েছি। প্রানিসম্পদের সুত্র অনুযায়ী লম্বায় সাড়ে ১০ ফুট, উচ্চতায় ৮ ফুট। গরুটির দৈর্ঘ ও বেড় অনুযায়ী গরুটির ওজন প্রায় ১৯০০ কেজি বা ৩৭.৫০ কেজিতে মণ হিসাবে ৪৮ থেকে ৫০ মণ। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে আমরা গরুটির চিকিৎসা, খাদ্য তালিকা ও অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমার জানা মতে এই গরুটিই বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় গরু।’