সর্বোচ্চ গোলদাতাকে রেখে সাফে গেল বাংলাদেশ
দেশের ফুটবলে স্ট্রাইকার সংকট। বিদেশি স্ট্রাইকারদের ভিড়ে দেশিরা যোজন যোজন দূরে পড়ে আছে। দেশের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে গিয়ে স্ট্রাইকার সংকটের কথা বারবার উঠে আসে। তারপরও এবার কোনোভাবেই ফুটবলে স্ট্রাইকার সংকট দূর করার কোনো উদ্যোগ নেই। একই সমস্যা ভারতে। তারাও বিদেশি স্ট্রাইকার নির্ভর। আর এ কারণে ভারত তাদের রাজ্যে ফুটবলে বিদেশি স্ট্রাইকার নিষেধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ না থাকলেও দেশীয় স্ট্রাইকাররা নিজেরাই ক্লাব লিগে জায়গা করে নিতে পারছেন না। আর জাতীয় দলের খেলা হলে বেঞ্চে বসা স্ট্রাইকারদের কদর বেড়ে যায়। এরমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলে ভালো করলেও তিনি সাফে খেলতে পারলেন না। অথচ লিগে কিংসলে সবচেয়ে বেশি গোল করে দেশি ফুটবলারদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। ১২ ম্যাচে ৯ গোল করেছেন তিনি। আর যিনি গোলই করেননি বেঞ্চ বসে সময় কাটিয়েছেন তিনি সাফে খেলতে গেছেন।
নরসিংদীর মেয়েকে বিয়ে করে এলিটা বাংলাদেশি নাগরিত্ব নিয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলবেন। আগের সাফে ডাক পেয়েও খেলতে পারেননি তিনি। আর এ বছর সিশেলসের বিপক্ষে দলে ছিলেন। সেই থেকেই সাফ নিয়ে এলিটার মধ্যে একটা স্বপ্ন এঁকে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ বারবার সাফে ব্যর্থ হচ্ছে। এই দগদগে ঘা এলিটাকেও পোড়ায়। ভালো স্ট্রাইকার না থাকায় গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার গল্প অনেক রয়েছে।
দেশের স্ট্রাইকারদের তুলনায় এলিটা শারীরিক সামর্থ্যের দিকে অনেক বেশি এগিয়ে। শক্তি কিংবা উচ্চতায় সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। লিগ ম্যাচে এলিটাকে ছাড়িয়েও যেতে পারেননি দেশি স্ট্রাইকাররা। লিগে স্ট্রাইকার সুমন রেজার গোল নেই বললেই চলে। কিংসের জার্সি গায়ে কত ম্যাচ খেলেছেন সেটাও একটা প্রশ্ন। বেঞ্চে বসে বসে সময় কাটাতে হয়েছে। তবুও এলিটা কিংসলের চেয়ে এগিয়ে থাকলেন সুমন রেজা।
প্রিমিয়ার লিগে ১৪ জন ফুটবলার শীর্ষ গোলদাতার তালিকায় রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি স্ট্রাইকারের নাম নেই। সবই বিদেশি। এই তালিকায় ৮ নম্বরে এলিটা। বাংলাদেশিদের মধ্যে এলিটাই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা।
২০০৩ সালে শেষবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ আর কখনো সাফ না পাওয়ার কষ্টে আছে। এখন দেশের ফুটবল নিয়ে সমালোচনা হয়। এলিটা মনে করছেন সাফ পেলে সব সমালোচনা বন্ধ হয়ে যেত। সিশেলসের ম্যাচ থেকেই সেই পরিকল্পনায় ছিলেন এলিটা। দেশকে ট্রফি দেওয়ার বিষয়ে দলের মধ্যে সবাই একটা পরিকল্পনা করেছিলেন। বিশেষ করে অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া, তপু বর্মন, তারিক কাজীসহ একাধিক ফুটবলারদের মধ্যে একটা ঐক্য গড়ে উঠেছিল। ক্যাম্পে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, টেবিলে বসা।
ক্যাম্পে যখন যে অবস্থায় থাকুক দলের এই সব ফুটবলাররা সামনের লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যদেরকে উজ্জীবিত করার মানসিকতায় কাজ করেছেন। নিজেকে ঢেলে দিতে পরিবারের চেয়ে দল নিয়ে ভাবনটা বেশি-ই করেছেন এলিটা। দেশ নিয়ে এমন উত্তেজনায় থাকা এলিটা কিংসলেকে ছুড়ে ফেলে দিলেন স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা। সর্বোচ্চ গোলদাতাকে রেখে সাফে গেল বাংলাদেশ। যেকোনো বিচারে এলিটা কিংসলেকে দলে রাখা যেত। যেখানে অন্যান্য দল সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতিতে রয়েছে সেখানে স্ট্রাইকিং পজিশনের ভালো অস্ত্রটাকে রেখে সাফ-যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করতে ভারতে যাওয়ার আগে গতকাল বাংলাদেশ দল কম্বোডিয়ায় পৌছেছে প্রীতি ম্যাচ খেলতে।
কেন কোচের এমন সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এলিটা কিংসলের কাছে। এলিটা তখন বসুন্ধরা এলাকার বাসায়। সেখানে গিয়ে খুঁজে বের করা হলো। কোনো অভিমান নেই। কথায় স্পষ্ট। বললেন, ‘আমি বাদ এটা কোচের সিদ্ধান্ত। উনি যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করেছেন। আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছেন কোচের প্রতি এবং কোচের সিদ্ধান্তের প্রতি। আমি কেন বাদ পড়লাম সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এটা কোচের বিষয় এবং টিম ম্যানেজম্যান্টের বিষয়। এ ব্যপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
এলিটা অভিমান করতে পারেননি। তবে তার সঙ্গে যারা কাজ করে আসছিলেন তারা সবাই জানেন এই সাফের জন্য এলিটা মুখিয়ে ছিলেন। দেশকে আনন্দে ভাসাতে চেয়েছিলেন। নিজের সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিতে অনেক পরিশ্রম করছেন। ট্রফি জিতবে কি জিতবে না সেটা ভাগ্যের ওপর। তবে চেষ্টার কোথাও যেন ছিদ্র না থাকে সেদিকটা মাথায় রেখে জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকাকালীন কিংবা ক্যাম্পের বাইরেও সবার সঙ্গে থেকে উজ্জীবিত হওয়া, উজ্জীবিত থাকার একটা অপ্রাণ চেষ্ট ছিল।