মেহেরপুর শহরের সেলিনা আক্তার বলেন, ঢাকাতে ছেলে ও মেয়ে থাকে। তাদের কাছে আম পাঠাতে হবে। তাই ২৫ কেজি আম পাঠালাম। এক হাজার টাকার আম কিনে পাঠানো খরচ লাগলো পৌনে চার’শ টাকা। ছেলে মেয়ে খাবে বলে কথা। ঝাউবাড়িয়া গ্রামের মনোয়ার হোসেন বলেন, ভাই থাকে চিটাগাং এ। নিজের জেলার আম। তার কাছে আম পাঠাতে খরচ হলো সাড়ে ৩শ টাকা।
তিনি বলেন, পাঠানো খরচ আর আম কেনা খরচ প্রায় সমান। কুরিয়ার সার্ভিসের এই খরচ নেওয়াটা গলাকাটা খরচ। সরকারের উচিৎ বেসরকারি কুরিয়ার ও পার্সেল সার্ভিসকে নিয়ন্ত্রণ করা। একটা নীতিমালা থাকা উচিৎ।
মেহেরপুর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মন আম ঢাকা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে যাচ্ছে। পিতা মাতা, ভাই বোন বা বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের কাছে তাদের স্বজনরা আম পাঠাচ্ছেন। জনগণের এই চাহিদাকে সুযোগ নিচ্ছেন
এসএ পরিবহন ও পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিমিেিটড, সদাগর, কুরিয়ার, ইউএসবি কুরিয়ারসহ নানা ধরনের বেসরকারি কুরিয়ার সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে এসএ পরিবহন এবং কুরিয়ার সার্ভিস ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে গিয়ে ভোক্তাদের সাথে কথা বললে তারা এসব সেবাদানকারী কুরিয়ার সার্ভিসের মুল্য নির্ধারন সরকারিভাবে হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন। আজিমুদ্দীন ও নারগীছ আক্তার নামের দুই জন বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসগুলো কত নিতে পারবে কত পারবেনা এই বিষয়গুলো সরকারিভাবে নির্ধারন হওয়া উচিৎ। যেভাবে তারা টাকা নিচ্ছেন মনে হচ্ছে সরকার বলে কিছু নেই। তারা আলদা রাষ্ট্রে নিজস্ব নিয়ম কানুনে চলে।
বামনপাড়া এলাকার সুরুজ আলী বলেন, আমার ছেলে সিলেটে থাকে। নিজ এলাকার এই সিজেনাল ফল তার খেতে মন চেয়েছে। তাই তার জন্য মাত্র ১০ কেজি আম পাঠাতে এসে খরচ হলো প্রায় ২শ টাকা। মুল্যটা বেশী লাগলো মনে হচ্ছে।
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার রাশেদ আহম্মেদ বলেন, প্রতিদিন আমাদের এখান থেকে ৪শ থেকে ৫শ কেজি আম ঢাকা, চিটাগাং, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আমাদের কোম্পানী সব চেয়ে ভাল সার্ভিস দিয়ে থাকে। আবার অন্যান্য কুরিয়ারের চেয়ে খরচ কম নিয়ে থাকে। তিনি বলেন, আমরা ঢাকার মধ্যে এক কেজি আম পাঠাতে খরচ নিই ১৩ টাকা, আর ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে খরচ নিয়ে থাকি কেজিতে ১৬ টাকা। কোন মালে কত খরচ নিতে হবে এটা নির্ধারণ করে থাকে আমাদের কর্তৃপক্ষ। আমাদের এখানে কোনো হাত নেই।
এদিকে এসএ পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস কেজি প্রতি আম পাঠাতে নিচ্ছেন ঢাকার মধ্যে ১৫ টাকা ও ঢাকার বাইরের জেলাতে প্রতি কেজি আম পাঠাতে নিচ্ছেন ২০ টাকা।
এসএ পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিসের মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সার্ভিসের দিক থেকে আমাদের উপরে কেউ নেই। তাই আমরা খরচ একটু বেশি নিয়ে থাকি। আমাদের সার্ভিস সবার চাইতে ভাল। এক কেজি আমে ১৫ টাকা ঢাকার ভিতর এবং ২০ টাকা ঢাকার বাইরে নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, এটা নির্ধারণ হয়ে থাকে হেড অফিস থেকে। আমাদের যেভাবে নির্দেশ দেই আমরা সেভাবেই নিয়ে থাকি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সমন্বিত চুয়াডাঙ্গা জেলার সহকারি পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, এসব বড় কুরিয়ার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নীতিমালায় কি আছে কত টাকা নিতে পারবে এটা জানতে হবে। তবে, দাম নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কোনো কিছু করা যাবেনা। তাদের কাছ থেকে মাল ক্ষতিগ্রস্থ বা নষ্ট হলে সেক্ষেত্রে ওই গ্রাহক কোনো অভিযোগ দিলে সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নেওয়া যাবে।