মাথাভাঙ্গা নদী দখল-দুষণমুক্ত করতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্ক থেকে বড় বাজার পর্যন্ত সচেতনতামূলক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ও বৃক্ষরোপণ অভিযান করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্কের নিচে মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে বৃক্ষরোপন ও নদীর কচুরিপানা অপসারণের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান।
‘যদি বাঁচে মাথাভাঙ্গা, হবে চমৎকার চুয়াডাঙ্গা’ গানে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন, সদর উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি (বেলা), মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার যৌথ আয়োজনে এ কার্যক্রম করা হয়।
সচেতনতামূলক কার্যক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামিম ভূইয়া, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদের পরিচালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবির হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা অ্যাড. সেলিম উদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ মো. রাসেল, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেটের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর সাদাত হোসেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বিশ্বাস, সহসভাপতি শাহ আলম সনি, প্রগতি লেক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র সুলতানা আঞ্জু রন্তা, কাউন্সিলর মাফিজুর রহমান মাফি, মুনসুর আলী মনো, মুন্সি আলাউদ্দীন, উজ্জ্বল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সহ সম্পাদক হেমন্ত কুমার সিংহ রায়, প্রচার সম্পাদক মেহেরাব্বিন সানভী, দপ্তর সম্পাদক জিসান আহমেদ, সদস্য হাবিবি জহির রায়হান, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, আহসান আলম, পারভিন লায়লা, আব্দুস সালাম সৈকত, আলাউদ্দীন ওমরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সচেতনতামূলক কার্যক্রমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মাথাভাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা শহর তথা চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রাণ। এই নদীর সাথে এই জেলার মানুষের নারীর সম্পর্ক। দুঃখজনক হলেও আমরা দেখছি নদীটি দূষণ এবং দখলের স্বীকার হচ্ছে। এই নদীকে দূষণমুক্ত, দখলমুক্ত রাখতে হবে। এই নদীতে যেন ময়লা আবর্জনা না ফেলে এজন্য আমরা নিয়মিত বলছি। নদীর পাড়েই চুয়াডাঙ্গার সবথেকে বড় বাজার। আমরা বাজার সমিতিকে বার বার বলছি, ময়লা যেন নদীতে না ফেলা হয়। মাথাভাঙ্গা বাঁচাতে এই সামাজিক আন্দোলন এক দিনের না। আমরা এই নদীকে নিয়ে একটি একশন প্লান করছি। কিভাবে এই নদীতে দূষণ ও দখলমুক্ত করা যায়। নদীর পানি এখন প্রায় ব্যবহার অনপযোগী হয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে মাছ মরে ভেসে উঠছিলো। এই নদীকে বাঁচাতে আমাদের সকলের কানেক্টিভিটি প্রয়োজন। আমাদের আন্দোলনে আমরা সবাইকে চাই আমাদের পাশে। আমরা আশা করবো, সবাইকে নিয়ে অতীতের মতো এই নদীকে আবারো সুন্দর ও চমৎকার করে তুলবো।
জেলা প্রশাসক পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি নদী কখন হয়েছে। মাথাভাঙ্গা নদী খননের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। মাথাভাঙ্গা নদী একটি সুন্দর নদী হোক এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। এ সময় তিনি মাথাভাঙ্গা নদী সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, আমি আশা করি, এই পরিচ্ছন্ন অভিযান ও সচেতনতামূলক অভিযানে প্রশাসন সচেতন হবে, মৎস্য অধিদপ্তর সচেতন হবে, ওয়াপদা সচেতন হবে, বিশেষ করে নদীর দুই পারের মানুষ সচেতন হবে। এই সচেতনতা যদি সৃষ্টি করতে পারি, ভবিষ্যতে এই নদীর পানি আমরা খাওয়ার টেবিলে দিতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গির আলম মালিক বলেন, এই ভালো কাজে আমরা পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে সকলের সহযোগীতা চাই। আজকে জেলা প্রশাসকসহ আমরা সকলে এখানে এসছি আমি মনে করি সকলের সহযোগীতায় এই কাজে গতি পাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, আমি খুলনা থেকে এসছি। মাথাভাঙ্গা নদী নিয়ে আমার মাথাব্যাথা কেন! সেটা যদি বলতে হয়, আপনারা জানেন এই মাথাভাঙ্গা নদীর সাথেই আমাদের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ভৈরব, কুমার, চিত্রা ও নবগঙ্গাসহ সকল নদী জড়িয়ে আছে। যদি মাথাভাঙ্গা নদী না বাঁচে আমাদের ওই অঞ্চলের নদীও বাঁচবে না। সেই জন্যই মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাথে বেলা কাজ করছে। আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আপনারা একটি ভালো মানসিকতা নিয়ে নেমেছেন। আপনাদেও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাথাভাঙ্গা নদীতে বাঁচাতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামিম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের জেলা প্রশাসক স্যার বার বার তগিদ দেন মাথাভাঙ্গা নদী নিয়ে। স্যারের একটি মাস্টার প্লানও আছে। সেটি আপনারা খুব দ্রæতই দেখতে পাবেন। মাথাভাঙ্গার নিজস্ব ঝরনা আছে। ঝরনার কারণেই মাথাভাঙ্গাতে পানি থাকে। ঝরনা না থাকলে পানি থাকতো না। মাথাভাঙ্গা নদীতে বালিশ, তোষক থেকে শুরু এমন কিছু নাই, যে মাথাভাঙ্গা নদীর মধ্যে নাই। ময়লা আবর্জনার কারণেই তলদেশে একটি লেয়ার পড়েছে। এবং পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, মাথাভাঙ্গা নদী নিয়ে পৌরসভার একটি বদনাম আছে। আমরা স্বীকার নিচ্ছি। কিন্তু পৌরসভার আসলে সামর্থ নাই, ময়লা পানি শোষণ কওে আমরা নদীতে ফেলবো। তবে আমরা সবাই সচেতন আছি। আমরা বড় বাজাওে একটি বায়ো গ্যাস ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করেছি। ময়লা নেওয়ার জন্য দুটি ওয়ার্ডে আমাদেও ভ্যান কার্যক্রম চালু হয়েছে। আমরা সবাই মিলে নদীটিকে বাঁচাবো। পরে, দুটি নৌকায় জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তা, মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ চুয়াডাঙ্গা পুলিশ পার্ক থেকে বড় বাজার ব্রিজের নিচ পর্যন্ত সচেতনতামূলক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক নদী থেকে সকল কোমড় অপসারণ করার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট্য প্রতিষ্ঠানকে।
এ সময় মাথাভাঙ্গা নদী নিয়ে প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি ও মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি শাহ আলম সনির কথা ও সুরে ‘যদি বাঁচে মাথাভাঙ্গা, হবে চমৎকার চুয়াডাঙ্গা’ গান পরিবেশন করা হয়।