মেহেরপুরের বিপনি বিতানগুলোতে চলছে শেষ মূহুর্তের বিকিকিনি
বৈশ্যিক সমস্যা করোনার কারণে সারাদেশের ন্যায় গত দুই বছর থমকে যাওয়া মেহেরপুরের ঈদ বাজার এখন জমজমাট বিকিকিনি। বিপনী বিতানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে বেচাকেনা।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা রঙের আলোয় সেজেছে বিপণি বিতান গুলো। জমে উঠেছে কেনাবেচা। ২১ টি রোজার পার হলেও যেনো ক্রেতাদের ভীড় কমছেনা। পছন্দের পোশাক কিনতে জেলা ও উপজেলা শহরে ভিড় করছেন ক্রেতারা।
শুধু পোশাকের দোকান নয়, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠেছে কসমেটিক্স দোকানগুলোতে। তবে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের উভয়ই একই অভিযোগ আগের তুলনায় সকল পণ্যের দাম বেশি।
বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই বছর করোনা কারণে দোকানে তেমন ব্যবসা করা যায়নি। এ বছর পুরোদমে ব্যবসা করতে পারছেন তারা। দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হওয়াই কিছুটা ব্যবসা কম হচ্ছে, এরপরও খুশি তারা।
ফাহাদ তার নানি ও মায়ের সাথে মেহেরপুর শহরে এসেছে ঈদের মার্কেট করতে। ফাহাদের মা ফাহমিদা বলেন, ছেলে একটা প্যান্ট এবং শার্ট দেখে খুব পছন্দ করেছিল। ছেলেকে পরিয়ে দিই শরীরে ফিটিং হয়েছে কিনা। তার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সেই প্যান্ট এবং শার্ট অবশেষে বেশি দামে কিনে নিতে হয়েছে।
রাজাপুর গ্রামের সীমা খাতুন এসেছে মেহেরপুর শহরের বড়বাজার এলাকার হাজী রাবেয়া মার্কেটে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরে সব কিছুর দাম বেশি। আমার দুই ছেলে মেয়ের পছন্দমত জামা কাপড় কিনতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা মত খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিজেদের জন্য সেই ভাবে কিছু কিনতে পারিনি।
সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের আলফাজ উদ্দীন এসেছেন ঈদ মার্কেট করতে। অনেক বিপনি বিতানে ঘুরে কাহিল হয়ে পড়েছেন। অবশেষে বড় বাজারে এসেছেন কিছু কিনবে বলে। তিনি বলেন জামা প্যান্ট নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দোকান ঘুরছি গত বছরের তুলনায় এ বছরে কাপড়ের দাম অনেক বেশি বলছে।
দারিয়াপুর গ্রামের আব্দুর রহমান ও সাবান আলী বলেন, ‘এ বছর পোশাকের আমদানি বেশি হলেও জিনিসের দাম একটু বেশি। দাম কিছুটা কম হলে, ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকত।’
পাটিপাতা কিডস এর স্বত্বাধিকার আতিক বলেন গতবারের তুলনায় মালামাল আমাদের বেশি রেটে কেনা পড়ছে। আমরা তুলনামূলক লাভ কম করে কাস্টমারকে দেওয়ার চেষ্টা করছি। মানুষ পাঁচটার জায়গায় দুইটা বা একটা কাপড় কিনছে। আমার কাপড়টা যেন আটকিয়ে না যায় সেজন্য কম লাভে দিয়ে দিচ্ছি।
হোটেল বাজার মাফীন ফ্যাশানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রতিটা জামাকাপড়ের উপর ২০০ টাকা হারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি গত ঈদের যে পরিমাণ মালামাল দোকানে তুলেছিলাম এবার সেই পরিমাণ মালামাল যদি আবার দোকানে তুলি তাহলে আমার এক্সটা ২ লক্ষ টাকা আরো বেশি লাগবে। তিনি আরো বলেন যে গত বৃহস্পতিবার থেকে কাস্টমাররা ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছে। তবে অতিরিক্ত গরমে বেশিরভাগ কাস্টমার বিকেলে এবং ইফতারের পরে আসছেন।
বড় বাজার তানহা কসমেটিক্স এন্ড ফ্যাশান এর স্বত্বাধিকারী আবু তৈয়ব বলেন, বঙ্গবাজার দুর্ঘটনার প্রভাব আমাদের মেহেরপুরেও পড়েছে। যার কারণে প্রতিটি পোশাকের দাম একটু বেশি। তাছাড়া কাস্টমাররা সবসময়ই দোকানে আসছে এবং তাদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনছে।
কাথুলি রোডে সোনিয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোঃ সামিউল ইসলাম ডালিম বলেন, সকল প্রকার প্রসাধনীর উপর ১০ থেকে ১৫ টাকা হারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় কসমেটিকসের পণ্য কিনতে আসা এক গ্রাহক বলেন আমি কিছুদিন আগে আমি কসমেটিক্সের এই পণ্যটা ৬০ টাকা করে কিনেছি সেই পণ্যটা এখন ৭০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা পুলিশ সুপার রাফিউল আলম বলেন, ‘প্রতিটি মার্কেটেই সাদা পোশাকে পুলিশ থাকছে। বেশি সদস্য বাড়িয়ে ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রিতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আগামী দিনেও নিশ্চিন্তে মানুষ ঈদের বাজার করতে পারবে।’