চুয়াডাঙ্গায় শিশু জিহাদের ছিনতায় হওয়া ভ্যান উদ্ধার করলো সদর থানা পুলিশ
চুয়াডাঙ্গা সদরের দিননাথপুরের শিশু জিহাদের নিকট থেকে ছিনতাই হওয়া ভ্যান উদ্ধার করেছে সদর থানা পুলিশ এই ঘটনার সাথে জড়িত বকুল শেখ (২৪) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার বকুল শেখ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানাধীন উত্তর চাঁদপুর গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে৷
আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানা প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান।
এর আগে গত বুধবার ৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি কৌশলে ছিনিয়ে নেয় গ্রেফতার হওয়া বকুল। এরপরই ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে শিশু জিহাদের পরিবার। কান্না থামছিল না জিহাদের বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা-মায়ের।
এদিকে, আজ বুধবার বিকেলে সদর থানা চত্বরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া বলেন, আমি কখনো ভাবিনি চুরি হওয়া ভ্যানটি আবার ফিরে পাবো। পুলিশ ভ্যানটি উদ্ধার করে দিয়েছেন। এতে আমি অনেক খুশি।
তিনি আরও বলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। বয়স হয়েছে। ভ্যান চালাতে পারিনা এখন৷ আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি আমার ছেলে জিহাদকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলেন। এরপর তার উপার্জনেই টেনেটুনে চলছিল সংসার। ভ্যান ছিনতাই হবার পর আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। এমনকি বাড়িতে বাজার না থাকায় দুদিন রান্নাবান্নাও হয়নি। শুক্রবার জুম্মার পর মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই দিন পার করেছিলাম। সেই সংবাদ প্রচারের পর মানবিক ব্যক্তিরা আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন আমার ভ্যানটি পেয়ে অনেক খুশি। এখন আদালতের মাধ্যমে ভ্যানটি হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলার নজরে আসে। এরপরই তিনি ভ্যানটি উদ্ধারসহ জড়িতদের ধরতে নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের দিকনির্দেশনায় সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) আলী হোসেনের নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানুজ্জামান বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় টানা ১৪ দিন পর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থেকে মূলহোতা বকুল শেখকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ভ্যান ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেন এবং ছিনতায় করা ভ্যানটি তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এসআই হাসানুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বকুল শেখ অবস্থান নিশ্চিত হই। পরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় শিশু জিহাদের বাবা তাহাজ্জেল মিয়া সদর থানায় বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় অভিযুক্ত বাবুল শেখলে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নিকট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে৷ এঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমার নজরে আসে। এরপর ভ্যানটি উদ্ধার করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে৷ পরে ভ্যানটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে দেখে নিজের বিবেকের কাছে নাড়া দিয়েছিল। আমরা জেলা পুলিশ দারিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনের সম্বল ভ্যানটি উদ্ধার করতে পেরে আনন্দিত। জেলা পুলিশ সব সময় চুয়াডাঙ্গাবাসির পাশে আছে, ছিল ও থাকবে।