দীর্ঘ এক যুগ পর আগামী ১৬ মার্চ মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ ইউনিয়নের নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। চায়ের দোকানে, গ্রামের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এখন শুধুই নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। আগামী ১৬ ই মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা ছুটছে দিনরাত। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত অবধি চলছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা দীর্ঘদিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে হার-জিত রয়েছে, ভোটারদের দাবি নির্বাচনে যেই বিজয়ী হোক না কেন তারা যেন নিরপেক্ষ ভাবে ভোট প্রদান করতে পারে। একইসঙ্গে পাঁচ বছর পর পর যেতে ভোট দিতে পারে সে দাবিও তারা তুলেছে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হয়েছেন আমদহ গ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি রওশন আলী টোকন। অপরদিকে বিদ্রোহী হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনারুল ইসলাম (আনারস)। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে নজরুল ইসলাম লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থী আনারুল ইসলামকে নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তার ছেলে বারিকুল ইসলাম লিজন। তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব। ইতোমধ্যে পিতার জন্য গণসংযোগসহ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়ে দলীয় রোষানলে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রী কমিটির কাছে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আনারুল ইসলাম সীমানা জটিলতার মামলা করে ১২ বছর ধরে নির্বাচন বন্ধ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। পরবর্তিতে মামলাটি উচ্চ আদালত খারিজ করে দিলে নির্বাচন কমিশনা তফসিল ঘোষণা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী কয়েকটি কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন , অপরদিকে এখনো পিছিয়ে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। অপরদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় নিজ ছেলেকেও সেভাবে মাঠে পাচ্ছেন না আনারুল ইসলাম।
গত মঙ্গলবার বিকালে আমদহ ইউনিয়নের আমদহ, আশরাফপুর, কশ্যামনগর, বামনপাড়া, খন্দকার পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে সবখানে শুধু ভোটের আলাপ। চা দোকানী চা তৈরি করতে করতে ভোটের আলাপ করছেন, তেমনি ক্রেতারাও চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর কে কত ভোট পেতে পারেন তোর সুক্ষ বিশ্লেষণ করছেন। এভাবেই চলছে আমদহ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের ভোটারদের চুলচেরা বিশ্লেষণ। আমদা ইউনিয়নের আমদাহ গ্রামের বেশ কিছু চায় চায়ের দোকানে এবং সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এবার তারা নিজ গ্রামের প্রার্থী রওশন আলী টোকনকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান। তারা বলেন, টোকনের বাবা, দাদা, ভাই সকলেই আমদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তারা পারিবারিকভাবে অনেক ভালো মানুষ।
অপরদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ক্ষমতা কক্ষীগত রেখে ভোট বন্ধ করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে রেখেছিলেন। যে কারণে আমদহ গ্রামের কোন ভোটাররা নতুন মানুষ হিসেবে টোকনে চান।
অপরদিকে, আনারুল ইসলামের নিজ গ্রাম আশরাফপুর দুটি ওয়ার্ডে বিভক্ত। একটি ছয় নম্বর ওয়ার্ড, অপরটি সাত নম্বর। আশরাফপুর গ্রামের বেশ কিছু চা দোকানী ও ভাটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি কারণে আনারুল চেয়ারম্যান এর অবস্থান ভালো নয়। সম্প্রতি বৈঠকের নামে এলাকার মহিলাদের পুলিশ দিয়ে এরেস্ট করিয়ে হয়রানি করেছেন, যার মধ্যে অনেকে সাধারণ মহিলা ছিলেন বলে তাদের দাবী। যার প্রভাব পড়েছে এই নির্বাচনে। ভৈরব নদীর মাটি কাটা নিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতায় থাকায় এলাকার মানুষও ঠিকমতো তাকে পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন । নানা কারণে গ্রামের মানুষ হয়েও চাচ্ছেন নতুন মানুষ আসুক এলাকার উন্নয়নে কাজ করুক।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ও আমদা ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা দোলন কান্তি চক্রবর্তী জানান, ইলেকট্রিক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ইউনিয়নের দশটি সেন্টারে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দু একটি অভিযোগ ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচন জানা গেছে আমদহ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ২৫ হাজার ৪০ জন ভোটার এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তার মধ্যে মহিলা ভোটার ১২৫৬০ জন এবং পুরুষ ভোটার ১২৪৮০ জন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন জন, নয়টি ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে ৪৩ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।