কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার বেলা পৌনে তিনটার দিকে শিবিরের ডি-১৫ ব্লকের একটি রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই আগুন অন্যান্য বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ঘনবসতির কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে আশ্রয়শিবিরের প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী ও ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রবিবার বিকেল ৪টার দিকে ফের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে আশ্রয়শিবিরের ডি-১৫ ব্লকের রোহিঙ্গা ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, তাঁর পাশের ঘরে আগুন জ্বলছে। অনেক ঘর পুড়ে যাচ্ছে। তিনি পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে পাশের পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছেন। তাঁদের শিবিরে অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। অধিকাংশই নারী ও শিশু।
বালুখালী (ক্যাম্প-৯) শিবিরের বাসিন্দা রমিজা বেগম বলেন, দূর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন। বাতাসের কারণে আগুন তাঁদের দিকে আসতে পারে, সেই ভয়ের মধ্যে আছেন।
অনেকে ত্রিপল কিনে এনে অস্থায়ী ছাউনি দিয়েছেন। আজ সকালে বালুখালী ক্যাম্প-৫-এর বি ব্লকের মোছরাবাজার এলাকায়
বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যাচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার সম্মিলিত চেষ্টা চলছে। ঘনবসতি ও ত্রিপলের ছাউনির কারণে ঘরগুলো পুড়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে রোহিঙ্গারা দিগ্বিদিক ছুটছেন। আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের চারটি ইউনিট। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবী ও রোহিঙ্গা তরুণ-যুবকেরা। তবে একদিকে গরম, অন্যদিকে উত্তরের বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত অন্য বসতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ এমদাদুল হক বলেন, বেলা পৌনে তিনটার দিকে আশ্রয়শিবিরের ডি-১৫ ব্লকের একটি বসতবাড়ির রান্নাঘরের চুল্লি থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেলেও সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে সবাই ব্যস্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পাহাড়ের ঢালুতে ঘরবাড়ি ও পাহাড়ি চিপা গলি হওয়ায় কাজ করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত হতে পারে। কয়েক দিন ধরে স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মধ্যে গুঞ্জন ছিল নাশকতার জন্য আগুন ধরানো হতে পারে। এর আগেও একাধিকবার নাশকতার আগুনে পুড়েছিল বালুখালীর একাধিক রোহিঙ্গা বসতি।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ২৯টি ঘর পুড়ে গেছে। গতকাল রাতে উখিয়ার ইরানি পাহাড় ৫ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) ও ‘আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের’ (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা হতাহত হয়েছেন। এর জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে উচ্ছেদ করতে শিবিরে আগুন দিতে পারে।
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আগুনে পুড়ছে ব্র্যাকের লার্নিং সেন্টার। আজ রবিবার বিকেলে বালুখালী ক্যাম্পে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালী এলাকার তিনটি (ক্যাম্প-৮, ৯ ও ১১) আশ্রয়শিবিরে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়েছিল। গৃহহীন হয়েছিল ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬ শিশুসহ ১৫ জন রোহিঙ্গা। ওই আগুনের সূত্রপাত কোত্থেকে, এখনো জানা যায়নি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন ৮ লাখ রোহিঙ্গা।
সূত্র: প্রথমআলো