মেহেরপুরের মুজিবনগরে সুখ সাগর নামক পিঁয়াজের চাষ হচ্ছে প্রায় ২০ বছর ধরে। এই সুখ সাগরই অনেক চাষীকে সুখের মুখ দেখিয়েছে। অনেক দিনমজুরও এই চাষ করে হয়েছেন লাখপতি। এবছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও চাষীদের মুখে হাসি নেই। উঠছে না উৎপাদন খরচও।
কৃষি বিভাগ বলছে এই মৌসুমে এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ না হলে চাষিরা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়বে। এ বছর জেলাতে প্রায় ২ হাজার ৮ শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার মেট্রিক টন।
মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর ও বিশ্বনাথপুর গ্রামের শতকরা ৯০ জন কৃষকই সুখসাগর পেঁয়াজ চাষ করেন। এই দুই গ্রামের চাষিদের সফলতা দেখে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ভবানীপুর, নাজিরাকোনা, সোনাপুর, মাঝপাড়া, আনন্দবাস, জয়পুর ও তারনগর গ্রামেও এই পেঁয়াজের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। সদর উপজেলাতে সুখ সাগরের কিছু চাষ হলেও মুজিবনগরে শতভাগ এই জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে গত ২০ বছর ধরে। পেঁয়াজের মৌসুমে গ্রামের মাঠে গেলে চোখে পড়বে মাঠের পর মাঠ শুধু পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ। যার কোন জমি নেই সেও অন্যের জমি লিজ নিয়ে পেঁয়াজের চাষ করেন। পেঁয়াজ ৩ মাসের ফসল। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মার্চের মধ্যেই চাষটি শেষ হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে না পড়লে এবং বাজার দর ভাল থাকলে উৎপাদন খরচ বাদে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।
সরেজমিন মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর, ভবানীপুর, বিশ্বনাথপুর গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, এ বছর পেঁয়াজ চাষের খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। উৎপাদন হবে বিঘা প্রতি ১২০ থেকে ১৩০ মণ হারে। বর্তমান বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। সেই হিসেবে বিঘাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় লোকসান করেই বেঁচে দিতে হচ্ছে চাষীদের পেঁয়াজ।
শিবপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি হাবিবুর রহমান ৮ বিঘা জমিতে এবার পেঁয়াজ চাষ করেছেন । বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় ভীষণ হতাশ। তিনি বলেন বর্তমানে তেল, সার, বীজসহ উৎপাদনের সাথে যুক্ত সকল কিছুর দাম বেশি, অথচ বিক্রয় মূল্য কম হওয়ায় চাষ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিঘা প্রতি ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রয় হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায়।
ভবানীপুরের সোমারুল ৭ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমি ১৫ বছর যাবৎ পেঁয়াজ চাষ করি। এই চাষটি অনেকটা জুয়া খেলার মতো ১ বছরে দাম পাই তো আরেক বছরে পাইনা। গত তিন বছর ধরে পেঁয়াজে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সামনে হয়তো আর পেঁয়াজ চাষ করতে পারবো না।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, এবছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হবে। বর্তমানে বাজার দর কম হওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ মৌসুমে এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখলে চাষিরা উপকৃত হবেন।