অর্থের অভাবে সামিয়া-সাদিয়ার (দুই জমজবোন) নিজেরা প্রাইভেট পড়তে না পারলেও তারা তাদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন নিজেরা টিউশনি করে।
নানা প্রতিকুলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা এই দুইবোন গেলো বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।
সামিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুন নামের জমজ দুইবোনের বাবা আশরাফুল ইসলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের হাজীপাড়ার এলাকার বাসিন্দা। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগী। বাবার স্থানে যেন তার মা আসমা খাতুন শত কষ্ট করেও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে আসছিলো। এবং লেখাপড়া থেকে একচুল পিছু হটতে দেননি তিনি। কিন্তু টাকার অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো তাদের শিক্ষাজীবন। কষ্টের কথা বলতে গিয়ে টলমল করে উঠছিল তাদের চোখ। সামিয়া খাতুন ও সাদিয়ার মতো স্কুল,কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আর আট জন শিক্ষার্থীর পড়ালেখা জীভন শেষ করতে শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
কারও বাবা ভ্যানচালক, কারো বাবা রাজমিস্ত্রী বা দিনমজুর। আবার কারও বাবা মারা গেছে। সংসারে নিত্য অভাব লেগেই আছে। যেখানে তিনবেলা খাবার জোটেনা, সেখানে পড়াশুনার চিন্তা করাটাও ছিল দূরহ ব্যাপার। তারপরও থেমে থাকেনি তারা। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। এমন আট শিক্ষার্থীর পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছে “ইয়াসিন -মাহমুদা স্মৃতি পরিষদ”।
বুধবার সকালে মিরপুর মহিলা কলেজ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে এসব শিক্ষার্থীদের হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, এসব মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীর হয়তো পরিবারে অস্বচ্ছলতা আছে কিন্তু তারা যে মেধাবী তাতে কোন সন্দেহ নেই।’ আজকের এই মহতি অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদ’ দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজেখুঁজে বের করে তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিচ্ছেন এভাবেই যদিও আরও কেউ এগিয়ে আসে তাহলে হয়েতোবা আর দরিদ্রদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আজকের তারুণ্যই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দরিদ্রতাকে জয় করে এসব তরুণদের হাতেই গড়ে উঠুক আগামীর সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ডা: ইফতেখার মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মওদুদ আহমেদ রাজিবের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিরপুর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মর্তুজা হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল মজিদ, মিরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মো: রোকনুজ্জামান প্রমুখ।
ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ডা: ইফতেখার মাহমুদ বলেন, একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি আত্মবিশ্বাস শক্তি, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন থাকে তাহলে তার জীবনের গতি-চেতনা তাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। একজন শিক্ষার্থীর যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে, স্বপ্ন না থাকে তাহলে একসময় জীবনের গতি-চেতনা থেমে যাবে। আমরা অর্থ সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস এবং মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ‘টাকার অভাবে কোন মেধাবি শিক্ষার্থীর যেন লেখাপড়া বন্ধ না হয় সেটার জন্য কাজ করবে ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদ।
কুষ্টিয়া জেলার প্রথিতযশা চিকিৎসক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত ইয়াসিন-মাহমুদা স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ডা: ইফতেখার মাহমুদ এসব মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সাহায্য করে থাকে। এখন পর্যন্ত এই সংস্থাটি অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য সহায়তা দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার নতুন করে আরও ৮ জন শিক্ষার্থীর পড়াশুনার খরচ দেওয়া হয়। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদিমাসে এক হাজারা টাকা, উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিমাসের দুই হাজার টাকা প্রদান করা হবে। আাজকের এই অনুষ্ঠানে দুই মাসের জন্য শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।