গাংনী সাহারবাটিতে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাথর, বালু ও রডের মান নিম্ন। তাছাড়াও পাথর বালুর মিশ্রণ সঠিক নয়। এ সব অনিয়মের কারণে মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের এমপি সাহিদুজ্জামান নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলেও ছায়াশক্তির বলে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে সঠিকভাবে ও সমঝোতার মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
জানাগেছে, সারা দেশের ন্যায় স্থানীয় যুবসমাজকে খেলামুখি করতে ও জনগনের দাবীর মুখে সরকার সাহারবাটি ফুলবল মাঠে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়। উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের( ২য় পর্যায়) আওতায় মোট পাঁচ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৯ টাকা ব্যায়ে এ নির্মাণ কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএস অ্যান্ড এমটি জয়েন্ট ভেন্সার ( জেভি) । যা বাস্তবায়নে রয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর এর স্থানীয়ভাবে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর প্রথম থেকেই নিম্নমানের রড পাথর ও বালু ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে।
বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে যান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন। তিনি কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পান। এসময় তিনি কাজ বন্ধ রাখাসহ নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন।
কয়েকদিন পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবারো কাজ শুরু করেন ওই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। সাদা পাথরের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কালো পাথর যা অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও যে সমস্ত সাদা পাথর স্তুপ রাখা হয়েছে তা ব্যবহারে অযোগ্য। ২.৫ এফএম বালু ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও লোকাল বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সাথে মিশ্রণটি সঠিক পরিমাপের নয়। স্থানীয় লোকজন একাধিকবার অভিযোগ করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোন কর্ণপাত করছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লোকাল বালুর সাথে সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। ফান্না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বাশের তৈরী ঝুড়ি ব্যবহার করায় পাথর বালু ও সিমেন্টের পরিমাপ আনুপাতিকহারে সঠিক হচ্ছে না। তাছাড়া রডের ব্যবহার হচ্ছে নিম্ন মানের। এর পরিমাপও সঠিক নয়। বালু ওয়াশ করার করা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ধুলা মিশ্রিত বালু ব্যবহার হচ্ছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কয়েকজন জানান, কাজ শুরুর প্রথম দিকে যে রড বালু ও পাথর আনা হয়েছিল তা নিম্নমানের হওয়ায় এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন নির্মাণকাজ দেখতে আসেন এবং অনিয়মের কথা বলে মালামাল সরিয়ে নেয়ার আদেশ দেন। এর মধ্যে ওই পাথর বাদ দিয়ে কালোপাথর দিয়ে কাজ শুরু করতে বলায় নতুন করে কালো পাথর আনা হয়েছে কিন্তু কালো পাথর ব্যবহারের নির্দেশনা নেই। তবে ব্যবহারের অযোগ্য মৃত পাথরগুলো সরানো হয়নি। তাছাড়াও যে রডের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তা এমপি সাহের অনুমতি নিয়ে বিশেষভাবে কাজ চলছে। পরবর্তীতে নতুন করে রড আনা হবে।
শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কনসালটেন্ট সাদ্দাম হোসেন বালু ওয়াশ করা হয়েছে বলে দাবী করে জানান, নিয়মানুযায়ি কাজ করা হচ্ছে তবে নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নেয়া হবে। তাছাড়া সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকনের নির্দেশে কালো পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বালু পাথর ও সিমেন্টের আনুপাতিক হার সঠিক না হওয়ার ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) রনি খাতুন জানান, স্টেডিয়াম নির্মানে কোন দুর্ণীতি সহ্য করা হবে না। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বন্ধ কাজ পুনরায় শুরু করার ব্যাপারে সাহিদুজ্জামান খোকন এমপির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরুর কারণে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পাথর ও বালু পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানানোর পর কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। তবে যেহেতু রড গেঁথে তার কাজ শুরু করা হয়েছে সেটি পরিবর্তন সহজ নয় এবং পরে উন্নত মানের রড ব্যবহারের শর্ত দেয়া হয়েছে।