গত সোমবার সন্ধ্যা রাতে মুজিবনগর কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে মোটরসাইকেল নিয়ে ধাক্কা মেরে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন চাঁদ মিয়া নামের এক যুবক। নিহত ওই যুবকের বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামে। ঝোঁকের বসে রেসিংয়ে নেমে তরতাজার একটি প্রাণ হারালো যুবক। সাথে নি:স্ব করলো তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ও স্বজনদের। ওই যুবকের মৃত্যুতে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা একমাত্র তার পরিবারই বুঝতে পারছে। এ অবস্থায় কারো কোন সান্তনাই ওই পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়।
মেহেরপুর প্রতিদিনসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ পড়ে জানা গেছে, মাঝে মধ্যে ফারসি নামের এক যুবক রেসিং প্রতিযোগীতার আয়োজন করে। বিভিন্ন দূরত্বে বিভিন্ন রেটে এ প্রতিযোগীতা হয়। প্রতিযোগীতায় যে প্রথম হবে সে নির্দিষ্ট পরিমান পুরস্কার হিসেবে অর্থ পাবে। বাকিরা ওই অর্থ পরিশোধ করবে। ফারসির ওই ফাঁদে পড়ে সেদিন জীবন হারালেন চাঁদ মিয়া। মাত্র কয়েকশ টাকার জন্য এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলেন।
ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মুজিবুর রহমানের ছেলে ফারসী , ইয়ার আলী ছেলে মহাব্বত আলী , ফরিকুল ইসলামের ছেলে সরিন এই তিনজন প্রায় রেস এর আয়োজন করে।
রেসে অংশ নিয়ে চাঁদ মিয়া ও রিজো রাধাকান্তপুর গ্রাম থেকে একটি ডিসকভারি মোটরবাইক নিয়ে দ্রুত গতিতে মুজিবনগরের দিকে যাচ্ছিলো। মুজিবনগর গেটের কাছে পৌছালে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরাসরি কমপ্লেক্স গেটের সাথে ধাক্কা দিয়ে সেখানেই লুটিয়ে পরে তার মৃত্যু হয়। এদিকে ঘটনার পর থেকে রেস আয়োজনকারী ওই তিন জন আত্মগোপনে রয়েছেন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার বন্দর পিটিআই মোড় থেকে চকশ্যামনগর পর্যন্ত সর্ট রেস এবং একই সড়কের মুজিবনগর গেট পর্যন্ত লং রেস এবং মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা রোডের কলেজ মোড় থেকে দিনদত্ত ব্রিজ পর্যন্ত এই দুটি রাস্তাতে এই মোটরসাইকেল রেস হয়ে থাকে। সর্ট রেস ৫শ থেকে এক হাজার টাকা এবং লং রেস ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা টাকা পর্যন্ত প্রাইজমানি থাকে। প্রতিযোগীরা এই পরিমান টাকা জমা দিয়ে রেসে অংশ নিতে পারে কিন্তু প্রথম স্থান অধিকারী এই পুরস্কার পেয়ে থাকে। তবে পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ ধরণের কোন তথ্য মেহেরপুর পুলিশের কাছে নেই। মেহেরপুরের ট্রাফিক অফিস থেকে জানা গেছে, গতমাসে অভিযান চালিয়ে শুধু মোটরসাইকেলের মামলা হয়েছেয় ২২৮টি। চলতি মাসের আজ পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ২০০।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার মো: রাফিউল আলম বলেছেন, অল্প বয়সি ছেলেদের মোটরসাইকেল কিনে দিয়ে বাবা মা আত্মঘাতী সিন্ধান্ত নিচ্ছেন। সড়কের পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা এবং মামলা দেওয়া সত্তেও মাঝে মধ্যে হৃদয় বিদারক কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে অভিভাবকসহ সমাজের সচেতন মহলকে কার্যকর ভুমিকা রাখতে হবে।
পুলিশ সুপারের সাথে একমত পোষন করে তাঁকে আহবান জানাচ্ছি অভিভাবকদের সচেতন করার পাশাপাশি অভিযান বাড়াতে হবে। ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় কোন পক্ষের অভিযোগ না থাকলেও তা আইনের আওতায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফারসির মত যারা এ ধরণের রেসের আয়োজন করে মূলত রাজপথে মৃত্যুর মিছিলের আয়োজন করছেন তাদের দৌরাত্ম্য থামাতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।