ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে জাল সনদ দিয়ে চাকরি করার সত্যতা মিলেছে। একটি শক্তিশালী বলয়ের নেপথ্য ইশারা আর টাকার দাপটে বছরে পর বছর ভূয়া তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পড়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই দায়সাড়া বক্তব্য দিয়ে এড়িয়ে যেতে চান ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর উপজেলার গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমান সহকারি শিক্ষক হিসাবে চাকরিতে যোগদান করে বর্তমান প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। একই দিন নিয়োগ লাভ করেন সহকারি শিক্ষক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন। চাকুরিবিধি আর সময়ের প্রয়োজনে বিপত্তি বাসা বাঁধে জাহাঙ্গীর হোসেনের গণিত বিষয়ের জাল নিবন্ধন সনদ নিয়ে। তিনি প্রভাব খাঁটিয়ে ৯০০১০৭৩২/২০০৯ নম্বর রেজিষ্ট্রেশনের সনদটি নিয়োগবোর্ডে দাখিল করেন যার রোল-৩১২১১৫০৮, সিরিয়াল নং-৯০৯৩৫২। উক্ত রোল-রেজিষ্ট্রেশনকৃত সনদটি ভুয়া বলেই অফিস তালিকায় লিপিবদ্ধ নাই।
এ বিষয়ে অভিযোগ পড়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কয়েক দফা তদন্ত করে শিক্ষক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে জাল সনদের সত্যতা মেলে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শৈলকুপা তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ খান ও প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমানকে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন ও অফিস আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে আজও বহাল তবিয়তে চাকরিতে আছেন শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন।
গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিবরনীতে দেখা যায়, জাহাঙ্গীর হোসেন ১৯৮২ সালের ১২ আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করে ১৯৯৭ সালে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে এইচএসসি ও ২০০৩ সালে গণিত বিভাগে ৩য় শ্রেণী প্রাপ্ত হয়ে স্নাতক পাশ করে ২০০৪ সালের ১/১১ তারিখে যোগদান দেখানো হয়েছে, যা জালিয়াতির ভয়াবহ নিদর্শন। মূলত ২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন পর্যালোচনা ও তৎকালীন নিয়োগ কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি আব্দুল ওহাব এবং কমিটির অন্যান্য সদ্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে ১৫ জন, সহকারি শিক্ষক পদে ৪৯ জন, হিন্দু শিক্ষক পণ্ডিত পদে ৪ জন, সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে ৯ জন, দপ্তরি পদে ৫ জন ও নৈশ প্রহরী পদে ৪ প্রার্থী চাকরির আবেদন করেন। যার মধ্যে বর্তমান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম কিংবা আবেদন ছিলনা এমনকি ২০০৪ সালে নিয়োগকৃত কেউ সে সময় জাহাঙ্গীরকে স্কুল আঙ্গিনায় দেখেছেন বলে বলতে পারেন নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন শুধুমাত্র জাল নিন্ধনের গল্প ঢাকতেই রেজুলেশন জোড়াতালি দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও একটি শক্তিশালীয় সিণ্ডিকেট বাণিজ্য করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা আরো জানান ২০১১ সালে বর্তমান প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশনের দিনই জাহাঙ্গীর হোসেন নিয়োগ পান। পরবর্তিতে ২০০৯ সালের গণিত বিষয়ের জাল শিক্ষক নিবন্ধন ধামাচাপা দিতে ভূয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে ২০০৪ সালের নিয়োগ দেখানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বর্তমান তথ্য ছকের চাহিদা পূরন করে চাকুরী বাঁচাতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন একটি সংজ্ঞবদ্ধ চক্র। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসের পরিদর্শক মো: পলাশ, তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমান সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হাজিরা খাতা, ২০০৪ ও ২০১১ সালের নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন তদন্ত করলেই অভিযোগের প্রকৃত সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক সদস্য এবং এলাকার সুধিমহল মনে করেন।
অপরদিকে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক দাখিলকৃত ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর তারিখের কাগজপত্র অনুযায়ী তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম ছায়েদুর রহমান স্বাক্ষরিত এমপিওভুক্তির আদেশ হয়। এ আদেশেও প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমান ও সহকারি শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম প্রেরণ করা হয়। প্রেরিত স্মারক নং-জেশিঅঝি ১৩৪৬, তারিখ ১৩/১১/১১ ইং। সে চিঠিতে গণিত বিষয়ের সহকারি শিক্ষকের যোগ্যতায় জাহাঙ্গীর হোসেন ১৯৮২ সালের ১২ আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করে ১৯৯৭ সালে এসএসসি-১ম, ১৯৯৯ সালে এইচএসসি-২য়, ২০০৫ সালে বিএসসি (সম্মান) ৩য়, বিএড-২য় ২০০৮ নিবন্ধন রোল নং-৩১২১১৫০৮ ব্যাংক হিসাব ৮৪৮১ সোনালী ব্যাংক গাড়াগঞ্জ শাখা শৈলকুপা দেখানো হয়েছে।
এছাড়াও ঝিনাইদহ জেলা থেকে ২০০৯ সালে যে ৩০ জন শিক্ষক গণিত বিষয়ে নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করেছেন সেখানেও নাম নেই জাহাঙ্গীর হোসেনের। জাল সনদের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ হলেও গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর ব্যতিক্রম। কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা করে কেন মামলা না করে ভূয়া তথ্যছক প্রেরণ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক মখলেছুর রহমান বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেনের দাবি তার নিয়োগ ২০০৪ সালে। জালিয়াতি কাগজপত্র প্রেরণের এক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে তিনি মোবাইল ফোন অফ করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) সুলতান আলী জানান, অনেক পূর্বের ঘটনা লোকমুখে শুনেছি তবে বিস্তারিত জানা নেই, তিনি নতুন এসেছেন অভিযোগ আসলে তদন্ত করা যাবে।