মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন বলেছেন, “বাংলাদেশের অপর নাম জিয়াউর রহমান” বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এদেশের মানুষ যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন সেই আন্দোলনের চুড়ান্ত রুপ জুলাই আগস্টের রক্তাক্ত গণঅভ্যুথান। ছাত্র জনতা রক্ত দিয়ে এদেশ থেকে সৈরাচার শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে গাংনী উপজেলা শহরের হাসপাতাল বাজার এলাকায় আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
গাংনী উপজেলা বিএনপি আয়োজিত মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ও বিশাল গণমিছিলে প্রধান অতিথির রাখছিলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ অরুন আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য গত ১৫ বছর যাবৎ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপির হাজার হাজার নেতা কর্মী মামলা হামলা জেল জুলুম, হুলিয়া মাথায় নিয়ে লড়াই, সংগ্রাম করেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম খুনের স্বীকার হয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন যে লড়াই শুরু হচ্ছে এলড়াই বিএনপিকে বাঁচানোর লড়াই, ধানের শীষ রক্ষা করার লড়াই। এ লড়াই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারেক রহমানকে এদেশে ফিরিয়ে এনে ১৮ কোটি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার লড়াই।
তিনি বলেন, অনেকেই চাঁদাবাজির মাধ্যমে শেখ হাসিনার দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। যারা হাসিনার দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে মেহেরপুরে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কমিটি গঠণের ষড়যন্ত্র করছেন তাদের বিরুদ্ধে গণধোলাইয়ের কর্মসূচি দোবো। কেউ রক্ষা পাবেননা, আগামি ১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো যোগ করেন তিনি। ।
ইউএনও, ওসিসহ সরকারি সকল কর্মকর্তাদের উদেশ্যে মাসুদ অরুন বলেন, জুলাই আগস্টের রক্তপাতের কথা মনে রেখে ৫ তারিখের আগের সব কথা ভুলে যান। এখন থেকে জনগণের কথা শুনতে হবে। ৫ তারিখে এদেশের মানুষ যে রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে, গণঅভ্যুথানের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের চেষ্টা চলছে সেই নির্মাণের চেতনা ধারণ করে জনগণের কথা শুনতে হবে। নাহলে এদেশের মানুষ আবারও একত্রিত হয়ে জনবিরোধী কর্মকান্ড রুখে দেবো।
তিনি বলেন, বিএনপিকে বাঁচানোর সংগ্রাম ও নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানে এখন থেকে গ্রামে গ্রামে ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সমাবেশ হবে। সেখানে সকল শ্রেনীর জেলে, মুজুর, কামার, শ্রমিক সবাইকে যুক্ত করা হবে।
মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি সমন্ধে তিনি বলেন, কমিটি হয়েছে শুক্রবারের কমিটি। শুক্রবার আসলে ছুটি থাকে, ঢাকা থেকে আসতে পারেন রাজনীতি করতে। এখন থেকে শুক্রবারের রাজনীতি বন্ধ। শুক্রবার বলে কোনো রাজনীতি এখন আর হবেনা। সাদা কাগজের কালো অক্ষরের কোনো কমিটি মানা হবেনা।
তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, নতুন কমিটির নামে যারা চাঁদাবাজি করছেন তাদের সেটা বন্ধ করতে হবে। ১ ফেব্রুয়ারির পর আর কোনো অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ড হলে আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হবো।
মাসুদ অরুন বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, “দলকে বাঁচাতে হবে, দলকে সংগঠিত করতে হবে, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, শ্রমজীবি মানুষের সাথে থাকতে হবে, নতুন প্রজন্মের ছাত্র যুবককের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, মেধাবীদের সামনের কাতারে আনতে হবে।”
প্রধান বক্তা, জেলা বিএনিপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন বলেছেন, বিগত ১৭ বছরে দেখা যায়নি, পাওয়া যায়নি, ৫ তারিখের পর এক শ্রেনীর নেতার উদয় হয়েছে।
তিনি বলেন, রোদে পুড়ে পানিতে ভিজে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে রাজপথে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কখনো জনগণকে ফেলে যায়নি। এই জনগণও আমাদের ছেড়ে যাবেনা।
আমজাদ হোসেন আরও বলেন, দলের জন্য, জেল জুলুম হুলিয়া খেটেছেন তাদেরকে নিয়েই আগামিতে বিভিন্ন স্তরের কমিটি থেকে শুরু করে দলীয় সকল কর্মকান্ড করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করে দলের জন্য যারা পরিশ্রম করেছেন, বিএনপির সেসব ত্যাগি রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে কমিটি তৈরী করার ক্ষমতা আহবায়ক কমিটির নেই। বিএনপির ত্যাগি নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কেউ গ্রাম গঞ্জে বিএনপির কোনো কমিটি করতে গেলে তাদের প্রতিহত করতে হবে যোগ করেন তিনি।
আমজাদ হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলায় নিয়মের বাইরে কোনো কমিটি হলে সেটা আমরা মানবনা। ঘরে বসে সাদ কাগজের উপর কালো কলি দিয়ে পকেট কমিটি করবেন সেটাও আমরা মানবোনা।
তিনি বলেন, ষোল বছরের দু:শাসনর অবসান ভারতের মানুষ এসে করে দিয়ে যায়নি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মানুষ করেছে। শুধু অবসান নয়, সৈরাচারকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন। বিতারিড়ত সৈরাচার আবারও বাংলাদেশে ফিরে এসে মাতববারী করবে করবে এটা মানুষ মেনে নেইনি, ভবিষ্যতেও নেবেনা।
তিনি বলেন, তাদের দোসর হিসেবে ষড়যন্ত্রের যে জাল বিস্তারর করার চেষ্টা করছেন। বিএনপিকে দূর্বল করে রাস্ট্রিয় ক্ষমতায় আসার যে ষড়যন্ত্র করছেন সেটা বাস্তবায়ন হবেনা।
তিনি বলেন, দিল্লীতে বসে ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বেন, সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হবেনা।
গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, মেহেরপুর জেলা কৃষক দলের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাহবুব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শিল্পপতি সেলিম আহমেদ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন, কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মোল্লা, বামন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, বীরমুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম, সাবেক যুবদল নেতা সাজেদুরর রহমান বুলবুল, মেহেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজমুল হুসাইন,। এসময় অন্যান্যদেও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিএনপি মহিলা দলের নেত্রী আসমা তারা, বিএনপি নেত্রী সামিরন নেছাসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেত্রীবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, গাংনীর বিএনপির নেতাকর্মীরা যতদিন আছেন ততদিন আমি আপনাদের মাঝে আছি। বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান তারেক রহমানন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রতিটি ওয়ার্ড, প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিটি উপজেলায় দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি দেওয়া হবে। সেখানে তারেক রহমানের নির্দেশনা না মেনে সৈরাচারী কায়দায় কমিটি করেছে। যারা এভাবে কমিটি করেছেন তারা বিএনপির দুশমন।
তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছর আওয়ামীলীগের দু:শাসন, নির্যাতন, হামলা ও ৩৪ টি মামলার আসামি হয়েছি। বারবার কারাবরণ করেছি। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের যখন জেল ডাকা হয়েছিল সেইদিন আমার নেতৃত্বে গাংনীতে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সেই মামলায় আমি কারাবরণ করেছি। অথচ, এখন ষড়যন্ত্র করে আমাদের বাদ দিয়ে সৈরাচারী কায়দায় বিএনপির কমিটি গঠণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এই সৈরাচারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবো।
তিনি বলেন, সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে নাম লিখলেই নেতা হওয়া যায়না। নেতা হতে হলে কৃষক, শ্রমিক, কুলি মজুর ও পা ফাটা মানুষের পাশে থাকতে হবে। মানুষের বিপদের সময়ে পাশে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বার বার বলেছেন, আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেটা অত্যন্ত কঠিন নির্বাচন হবে। জামায়াত ইসলাম আমাদের শরীক দল ছিল। তারা আওয়ামীলীগকে মাফ করে দিয়েছে। তারা মনে করে আওয়ামীলীগের ভোট তাদের বাক্্রে যাবে।
পরে একটি বিশাল গণ মিছিল সমাবেশ স্থল থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এর আগে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী, ধানের শীষ, ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসেন নেতাকর্মীরা।