হার্টের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন পড়ে। হার্টে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালি যদি বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে যদি রক্ত হার্টে পৌঁছতে না পারে, তাহলে হার্টের মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না। আর তখনই হয় হার্ট অ্যাটাক।
প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ এভাবে মারা যায়।
এই সমস্যায় মৃত্যু হঠাৎ করে হলেও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কিন্তু অনেক আগে থেকেই জানান দেয়। শরীরে দীর্ঘ দিন লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ মানুষের রোগটির পূর্ববর্তী লক্ষণ সম্বন্ধে সঠিক ধারণা নেই। তাই হঠাৎ বিপদ দেখা দেয়। তাই অ্যাটাকের আগের উপসর্গ সম্বন্ধে জানা থাকা খুব জরুরি।
অ্যাটাক আগে জানান দেয়
হার্ট অ্যাটাকের পূর্ববর্তী লক্ষণ হিসেবে ভোররাতে হঠাৎ বুকের বাম দিকে অস্বস্তি ভাব, বুকে ব্যথা, আপার অ্যাবডোমিনাল অর্থাৎ পেটে ব্যথা, যাকে গ্যাসের ব্যথা ভেবে ভুল করা হয়, সেই ব্যথাটি বাঁ হাত ও পিঠে ছড়িয়ে পড়লে, চোয়ালে ব্যথা, বুকে ভারী ভাব, প্রচণ্ড ঘাম ইত্যাদি ৩০ মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী হলে রোগীর হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ শুরু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। অল্পতেই ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যাওয়া, গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল সমস্যার মতো উপসর্গে দেরি না করেই তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
উপসর্গ দেখা গেলে কী করবেন
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ইসিজি করে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় করা হয়। অনেক সময় ইসিজিতে ৫০ শতাংশ রোগীর সঠিক রিপোর্ট আসে না।
যে রোগীর হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়, তার প্রথম ইসিজি রিপোর্ট সঠিক হলে আধঘণ্টা অন্তর অন্তর ইসিজি করে রিপোর্টে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, দেখা হয়।
স্নায়ুরোগের উপসর্গ কী
ইসিজিতে এসটি লেভেল বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো রোগীর হার্টের সমস্যা শুরু হয়ে গেছে। হার্টের পেশি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা দেখার জন্য বুকে ব্যথা বা অস্বস্তির তিন ঘণ্টা পর ট্রপ-টি নামক পরীক্ষা করা হয়। যদি এই পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসে তবে নিশ্চিতভাবে রোগীর হার্ট অ্যাটাক শুরু হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তখন অতি সত্বর রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
এই পর্যায়ে চিকিৎসা করলে সাময়িকভাবে হার্ট অ্যাটাক আটকানো সম্ভব। তা ছাড়া ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে ওয়াল মোশন অ্যাবনর্ম্যালিটিজ দেখে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
সুস্থতায় যা মেনে চলবেন
হার্ট অ্যাটাকের মতো বড় বিপদকে প্রতিহত করার জন্য কিছু ভালো অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে এর কবল থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করা, লিপিড প্রোফাইলে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা পরীক্ষা করে নেওয়া ও চিকিৎসা করা, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের ওষুধ নিয়ম করে খাওয়া উচিত। মেডিটেশন ও মর্নিং ওয়াক এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাইরের ফাস্ট ফুড, তৈলাক্ত খাবার, ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণ বর্জন করলে ভালো।
উল্লেখ্য, মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সের পর কন্ট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া হার্টের জন্য মিউজিক থেরাপি ও স্বাস্থ্যকর স্থানে ভ্রমণ খুবই উপকারী।
সূত্র: কালের কন্ঠ