“ভাত চাই না, কাজ চাই” এই স্লোগানে সকল ইটভাটা চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইটভাটায় কাজ করা প্রায় ২ হাজার শ্রমিক ও মালিক।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে মুজিবনগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির ব্যানারে মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বরাবর শ্রমিকদের দাবি তুলে ধরে একটি স্মারকলিপি মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে তুলে দেন ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা।
উক্ত স্মারকলিপিতে মোট ৭টি দাবি তুলে ধরা হয়। ১. ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে জিগজ্যাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও, উক্ত আইনের ৮(৩)(৫) এবং ৮(৩)(খ) উপধারায় “দূরত্ব নির্ধারণের” কারণে দেশের কিছু জিগজ্যাগ ইটভাটার মালিকগণ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিল্ন এবং টানেল কিল্নের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১০০০ মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারণ করেছে। সুতরাং, আমাদের জিগজ্যাগ ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮(৩)(ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮(৩)(খ) ধারায় বন থেকে দূরত্ব ৭০০ মিটার নির্ধারণ করে লাইসেন্স ও ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারি করার আবেদন জানাচ্ছি। ২. জিগজ্যাগ ইটভাটায় কোনো প্রকার হয়রানি বা মোবাইল কোর্ট করা যাবে না। অন্যথায়, আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবো। ৩.কোনো ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে বন্ধ করতে হবে। ৪. মাটি কাটার জন্য ডিসির প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার বিধান বাতিল করতে হবে। ৫. পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডিসি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র ইস্যু/নবায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করছি। ৬. ইটভাটাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ৭. ইটভাটা পরিচালনার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন মুজিবনগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তছলিমুল ইসলাম।
তারা বলেন, “আমরা, বাংলাদেশের ইটভাটা মালিকগণ, বিগত ৩৫-৪০ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ইটভাটা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত ইট সরবরাহ করে আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি।”
তারা আরও বলেন, “এই শিল্পে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছে, যা ৫০ লাখ পরিবারের তথা প্রায় ২ কোটি মানুষের রুটি-রোজগারের ব্যবস্থা করেছে। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এই শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বে। এছাড়াও, প্রতিটি ইটভাটার বিপরীতে প্রায় ১ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ রয়েছে, যা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার সমান। ইটভাটা বন্ধ হলে এই ঋণ অনাদায়ী থেকে যাবে।”
তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান অত্যন্ত আন্তরিক হলেও, বর্তমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জিগজ্যাগ ইটভাটার সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইটভাটা পরিচালনার একটি যৌক্তিক সমাধান হবে।”