মেহেরপুরের মুজিবনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা পর্যায়ের মুখ্য সংগঠক ও উপজেলার বাগোয়ান গ্রামের হারু শেখের ছেলে শাওন শেখের উপর হামলার ঘটনায় মুজিবনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে শাওন শেখ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মেহেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম মিঠুন এবং মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল হাসানকে মেহেরপুর আদালত চত্বর থেকে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে মুজিবনগর থানা ও ডিবি পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৫ দিন আগে ভিজিএফ কার্ডে চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে মোবাইল ফোনে শাওন শেখকে হত্যার হুমকি দেয় মিঠুন। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাওন শেখ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ চার রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে হামলার ঘটনা ঘটে।
সেসময় বাগোয়ান গ্রামের কাহিরুলের ছেলে এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিঠুন (৩২), বিশ্বনাথপুর গ্রামের রাহিন বিশ্বাসের ছেলে রুবেল হাসান (২৮), শিবপুর গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুল হাসান রাহুল (৩৫), গৌরিনগর গ্রামের সেলিম হোসেনের ছেলে ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আকিব জাবেদ সেনজিরসহ আরও ২-৩ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি শাওন শেখের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, জেলা ছাত্রদল সভাপতি সেনজিরের নির্দেশে মিঠুন শাওনের কলার চেপে ধরে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে মাথায় কিল-ঘুষি মারে। রুবেল বাঁশের লাঠি দিয়ে পিঠে আঘাত করে এবং রাহুলও এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে।
শাওনের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা শাওনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে মামলার বিষয়ে অভিযুক্ত জেলা ছাত্রদল সভাপতি আকিব জাবেদ সেনজির বলেন, “কিছুদিন আগে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত চেয়েছেন—এমন একটি নিউজ যমুনা টিভিতে প্রকাশ হয়। সেই নিউজে শাওন শেখ অশ্লীল ও আপত্তিকর মন্তব্য করে। সোমবার রাতে মিঠুন তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি শান্ত করি এবং শাওনকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিই। আমি এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নই। এটি একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা।”
সেনজির দাবি করেন, “শাওন শেখ জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং অতীতে কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলনেও অংশ নেননি। তার বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।”
তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলেন, “ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা থাকলেও সরকারের পক্ষে থাকা ফ্যাসিবাদী ইউনিটের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এই মামলা প্রত্যাহার এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।”