কুষ্টিয়ায় করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড প্রতিদিনই ভঙ্গ করেছে। এ পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোয়া ৩’শ মানুষের প্রাণ গেছে। এদিকে সরবরাহ না থাকায় কুষ্টিয়া জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামাল জাতীয় নাপা ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে রোগীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসে প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নাপা জাতীয় ঔষধের চাহিদা কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফার্মেসির মালিকরা।
দু’ এক ফার্মেসিতে পাওয়া গেলেও দ্বিগুণ দাম নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভোক্তারা। তবে ফার্মেসিগুলোতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বেক্সিমকো কোম্পানীর নাপা (প্যারাসিটামল) ওষুধের। দাম বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এক সপ্তাহ ধরে প্যারাসিটামল ওষুধের বিক্রি বেড়েছে। ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
শনিবার শহরের কলেজ মোড়, হাসপাতাল মোড়, রাজ্জাক সুপার মার্কেট, এনএস রোড, হাসপাতাল গেট, লাহিনী বটতলা, বারখাদা ত্রিমোহনীসহ মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। শাহজাহান মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ছেলের গত তিন দিন যাবত জ্বর। নাপা ওষুধ এলাকার একাধিক দোকানে খুঁজে পাইনি। দোকানদার শুধু বলেন সরবরাহ নেই। এতে আমার ছেলের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জিয়ানামের এক যুবক বলেন, আমার বাবার কয়েকদিন যাবত জ্বর ও শরীর ব্যথায় ভুগছি। অনেক দোকানেই নাপা নেই। দু’এক দোকানে পেলেও দাম দেড় থেকে দুই গুণ বেশি নেয়। এক পাতা নাপা ওষুধ ২০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। তাও আবার পাওয়া যায় না।
বেদেনা ফার্মেসীর স্বত্ত্বাধিকারী মো. মোক্তার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাপা জাতীয় ওষুধের চাহিদা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই সপ্তাহযাবত ক্রেতারা নাপা, নাপা সিরাপ, নাপা এক্সট্রা চাইলে দিতে পারি না। বাজারে এসব ওষুদের চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ না থাকায় বিক্রিও করতে পারি না।
মিরপুরের পপুলার ফার্মেসীর প্রোপাইটর রাকিব রায়হান বলেন, সরবরাহ না থাকায় পাইকারি ও খুঁচরা ক্রেতাকে ওষুধ দিতে পারছি না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নাপা জাতীয় ঔষধের চাহিদা কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তিনি আরও জানান, আগের জুন মাস জুড়েই কোন নাপা জাতীয় ওষুধ সাপ্লাই দিতে পারেনি বেক্সিমকো ফার্মার প্রতিনিধি।
যার ফলে এই জুলাই মাসেও অর্ডার করলে তীব্র সংকট দেখিয়ে সরবরাহ নেই বলে জানান কোম্পানীর প্রতিনিধি। তবে এসব সংকট কি কৃত্রিম সকট এসব বিষয় নিয়ে কোম্পানির লোকদের বললে তারা বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
সামাজিক সংগঠন নিয়ে কাজ করা বিপুল হোসেন বলেন, সামাজিক বিড়ম্বনার ভয়ে উপসর্গ থাকার পরও অনেকে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারেও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ প্রবণতাকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বেক্সিমকো ফার্মার বিক্রয় প্রতিনিধি শাহ আলম জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়া এবং করোনাভাইরাসে প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নাপা জাতীয় ঔষধের চাহিদা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। জুন মাসে ক্লোজিং এর কারনে আমরা ঠিকমতো অর্ডার নেইনি।
তাছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন সংকট ছিলো স্বীকার কলে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে জেলা এব উপজেলার প্রতিটি ফার্মেসীতেই অন্ত এক দুই বক্স করে এসব নাপা জাতীয় ওষুধ সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, মাসখানেক হলো নাপা জাতীয় সকল ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে চাইলে আমি তাদের মানা করেছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে সমাধান করা হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদু ইসলাম বলেন, করোনা মহামারিতে কোনো ফার্মেসি ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেতে পারবেন না। এ জন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ওষুধের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ পেলে ওই ফার্মেসি মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।