ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর মাহবুবা প্রাঃ হাসপাতালে অপারেশন করতে এসে ভুল চিকিৎসার শিকার হলেন সাহিদা আক্তার লিপি (৪০) নামে এক নারী । ডাক্তাররা তার জরায়ূর টিউমার অপারেশন করতে গিয়ে কেটে ফেলেছেন মূত্রথলি। বিষয়টি জানার পরেও দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসার নামে তার সাথে প্রতারনা করেছেন ডাঃ ও সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ । লিপি ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, বেশকিছু দিন ধরে তার জরায়ূতে টিউমার হওয়ার কারণে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। এ অবস্থায় গত ২৭ মে তিনি কোটচাঁদপুর শহরের বলুহর বাসষ্টান্ড এলাকায় অবস্থিত মাহবুবা জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিন বিকালে ডাঃ রাকিবুল ইসলাম ও ডাঃ আনিচুর রহমান তার অপারেশন করেন। অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তাররা তার মূত্রথলি কেটে ফেলেন। অপারেশন শেষে প্রায় দশ দিন হাসপাতালে থাকার পরও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। মূত্রথলি কেটে ফেলার কারণে সারাক্ষণ প্রস্রাব বের হতে থাকে। সাথে সাথে পেটেও প্রচন্ড জ্বালা যন্ত্রণা শুরু হয়। গত ১০ জুন তিনি তার সমস্যা নিয়ে ডাঃ রাকিবুলের পরবর্তিতে তিনি ২৫ জুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অবস এন্ড গাইনী) ডাঃ আকলিমা খাতুনকে দেখান। এখানে পরীক্ষায় লিপির মূত্রথলি কাটা ধরা পড়ে। ডাঃ আকলিমা খাতুনের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার পরও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। নিরূপায় হয়ে ১৪ আগষ্ট তিনি ফরিদপুরে ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইউরোলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ জে.সি সাহা’র কাছে যান। সেখানেও পরীক্ষায় মূত্রথলি কাটা ধরা পড়ে। এ অবস্থায় ডাক্তার পুনরায় অপারেশনের পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে ফোটায় ফোটায় প্রস্রাব পড়ে তার পেটের ভিতরে ইনফেকশন হয়। কিন্তু লিপি আর্থিক দৈন্যতার কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপারেশন করাতে ব্যর্থ হন। অবশেষে দিন মজুর স্বামী তার স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে ধার-দেনা ও হালের গরু বিক্রি করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানকার চিকিৎসক ডাঃ শোভা বর্ধনের অধীনে লিপি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দীর্ঘ সময় পার হওয়ার কারণে পেটের ইনফেকশন বেড়ে যাওয়ায় পুনরায় অপারেশন করতে বিলম্ব হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। তার প্রথম অপারেশনের সময় ডাক্তাররা লিপির মূত্রথলি কাটার বিষয়টি নিশ্চিত জানার পরও দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসার নামে তাকে ঘুরাতে থাকেন।
লিপি জানান, ডাঃ রাকিবুল ইসলামের সাথে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে অপারেশন করান। চুক্তির টাকা নেয়ার পরও তিনি তার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি নেন। তিনি বলেন, টাকা বেশি নেয়ায় আমার কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু ভুল অপারেশন করে আমাকে যে কষ্ট ও অর্থদন্ড করেছে আমি তার বিচার চাই। এ ব্যাপারে রাকিবুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমি অপারেশন করিনি। অপারেশনের কাজে ডাঃ আনিচুর রহমানকে আমি সহায়তা করেছি। ডাঃ আনিচুর রহমান জানান, লিপির অপারেশন আমি করেছি। এ জাতীয় অপারেশন করতে গেলে কখনও কখনও ভুলত্রুটি হয়। রোগীকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তার অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেব। সার্জন ছাড়া অপারেশন করতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাঃ ফজলে আকবরের মৃত্যুর পর রিমোট এরিয়ার অপারেশনগুলো আমিই করছি। তিনি আরও বলেন আমি এ পর্যন্ত প্রায় ৪’শ অপারেশন করেছি। সাহিদা আক্তার লিপি’র অভিযোগ, ডাঃ রাকিবুল ইসলাম ও হাসপাতাল মালিক লিটনের সাথে কথা বলেই আমরা তাদের চুক্তিতে সম্মত হয়েই অপারেশনের জন্য সেখানে ভর্তি হই। অথচ তারা অপারেশনের নামে আমাকে বিপদে ফেলে কেউ কোন দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না। তিনি এ সমস্ত কথিত ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবি জানিয়েছেন। ভুল চিকিৎসার শিকার সাহিদা আক্তার লিপি (৪০) জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের আশাদুল হকের স্ত্রী।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তা ডাঃ আব্দুর রশিদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, কোটচাঁদপুর হাসপাতালকে ঘিরে ১৭টি ক্লিনিক, ৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এখানকার ক্লিনিকগুলোতে নেই নিয়মিত ডাক্তার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেই সরকারি অনুমোদন। যে কারণে রোগী মৃত্যু, ভুল অপারেশন ও ভুল রিপোর্ট দেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অথচ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যথা নেই।