মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের সম্প্রসারণ কাজের জন্য নতুন করে মেহেরপুরের অংশে পল্লী বিদ্যুতের খুটি স্থাপনের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্দিষ্ট মাপের থেকে কম পরিমানে পোতার অভিযোগ উঠেছে। আর এ অনিয়মের মাধ্যমে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন হাশেম আলী নামের এক ঠিকাদার। তবে পল্লী বিদ্যুতের কর্তৃপক্ষ বলছে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেওয়া হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর- কুষ্টিয়া সড়কের সম্প্রসারণ কাজের জন্য মেহেরপুর থেকে খলিসাকুণ্ডি পর্যন্ত ৫৮৭টি বিদ্যুতের খুটি ও সংযোগ স্থাপনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্প তৈরি করে। সে অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগ পল্লী বিদ্যুতের অনুকুলে ওই টাকা জমা করে। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি থেকে দরপত্রের মাধ্যমে চার জন ঠিকাদার বিদ্যুৎ খুটি স্থাপনের কাজ পায়। এর মধ্যে হাশেম আলী পিয়াদা মেহেরপুর থেকে বামন্দি পর্যন্ত ৭টা লটে ৪৩৭টি খুটি স্থাপন বাবদ কাজ পেয়েছেন ৭০ লাখ টাকার। এছাড়া তাজুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক ও মামুনুর রশিদ একটি করে লটে ১০ লাখ টাকা করে ৩০ লাখ টাকা কাজ পান। এছাড়া বাকি ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার কাজ পল্লী বিদ্যুৎ নিজস্ব ভাবে সম্পন্ন করবে। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক, তারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রয়েছে। যে কাজগুলো খুটি স্থাপনের পর শুরু হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার দিঘীর পাড়া থেকে মদনাডাঙ্গা পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, প্রতিটি খুটিতে নির্দিষ্ট মাপ মত পোতার জন্য চিহৃ দেওয়া থাকলেও কোনটি দুই ফুট কোনটি এক ফুট কম পোতা হয়েছে।ফলে বৃষ্টি বা ঝড়ে খুটিগুলো হেলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন, খুটির নিচে ৩৩ কেভি গ্রাউণ্ডিং প্লেট দেওয়ার কথা থাকলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে গ্রাউণ্ডিং প্লেট গুলো দেওয়া হয়নি। ফলে ঠিকাদার ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা মিলে যার যার মত করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (ই এন্ড সি) প্রকৌশলী নাজমুন নাহার জেরিন জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেহেরপুরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় থেকে খলিসাকু্িড পর্যন্ত ৫৮৭ টি নতুন খুটি স্থাপন ও বিদ্যুত সংযোগ স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন মাপের খুটি রয়েছে। ২৫ ফুট খটি ৫ ফুট, ৩০ ও ৩৫ ফুট সাইজের খুটি সাড়ে ৫ফুট, ৪০ ফুটের খুটি ৬ ফুট, ৪৫ ফুটের খুটি সাড়ে ৬ফুট, ৫০ ফুটের খুটি ৭ ফুট এবং ৬০ ফুটের খুটি ৮ফুট মাটির নিচে স্থাপন করতে হবে। কোন ঠিকাদার যদি এর ব্যত্যয় করেন তাহলে নতুন করে আবার স্থাপন করিয়ে নেওয়া হবে।
তবে গ্রাউণ্ডিং প্লেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারদের সরবরাহ করা হয়েছে। যখন কাজ দেখে নেওয়া হবে তখন নিয়মানুযায়ী সব দেখে তারপর বিল দেওয়া হবে।
ঠিকাদার হাশেম আলী পিয়াদা তিনিই একাই পেয়েছেন ৭টি লটের ৪৩৭ টি খুটি স্থাপনের জন্য ৭০ লাখ টাকার কাজ। তিনি জানান, পল্লী বিদ্যুতের নিয়মানুযায়ী খুটি পোতা হয়েছে। তবে যে যে যায়গায় পোতা সম্ভব হয়নি সেখানে ততটুকু পোতা হয়েছে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু রায়হান বলেন, নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী খুটি না পোতা হলে বৃষ্টি বা ঝড় হলে হেলে যায়। যেখানে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। যে কারণে নির্দিষ্ট মাপমত খুটি পোতা জরুরি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারের কাছে থেকে এখনো কাজ বুঝে নেওয়া হয়নি। যখন কাজ বুঝিয়ে দেবে, তখন কোনো ত্রুটি পেলে দরপত্রের নিয়মানুযায়ী কাজ বুঝে নেওয়া হবে।