এই সময়ে কেমন এসি চাই

প্রায় সব অফিসেই সহকর্মীদের মাঝে এমন দুয়েক জনকে পাওয়া যায়, যারা এসি’র ‘অত্যাচারে’ অতীষ্ঠ হয়ে থাকেন। বাকিরা যখন গরমে কাবু, তখনও এই ‘কুল’ কলিগদের দেখা যায় এসি থেকে দূরে, রুমের এক কোণায় জ্যাকেট বা হুডি’র আশ্রয় নিচ্ছেন। বাড়িতে বা বন্ধুদের আড্ডাতেও তাদের হরহামেশাই খুঁজে পাওয়া যায়, এসি’র রিমোটের দখল নিয়ে একেকজন যেন রীতিমতো যুদ্ধ করে বেড়াচ্ছেন!

পুরোনো ধাঁচের এয়ার কন্ডিশনারে ঠান্ডা বাতাস সঞ্চালনের দিক নিয়ন্ত্রণের সুবিধা না থাকায় সরাসরি হিম শীতল বাতাস সংবেদনশীল ব্যবহারকারীদের গায়ে কাঁটার মত লাগতে পারে। মানুষ অনেক শখ করে বাড়িতে এসি লাগান বাইরের তীব্র গরম ভুলে একটু আরামদায়ক পরিবেশ পাওয়ার জন্য। সেই এসিই উল্টো অস্বস্তির কারণ হয়ে বসলে কারই বা ভালো লাগবে? এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হালের আধুনিক এসিতে ‘উইন্ডফ্রি’ ধাঁচের ফিচার যুক্ত করা হয়ে। কিন্তু ঠিক কীভাবে কাজ করে এই উইন্ডফ্রি সুবিধা?

স্বস্তিতে থাকুন, বিদ্যুৎ বিলের লাগামও টেনে ধরুন 

নতুন প্রযুক্তির এয়ার কন্ডিশনারগুলো কেনার ক্ষেত্রে বাজারে ক্রেতারা প্রথমেই খোঁজ করেন, এমন একটি অনন্য ফিচার হয়ে উঠেছে উইন্ডফ্রি। সাধারণ এসি’র সাথে এর পার্থক্য হল, সাধারণ এসি থেকে ঠান্ডা বাতাসের ধারা বা ওয়েভ একেবারে সরাসরি প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে, উইন্ডফ্রি কুলিং অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র বা ‘এয়ার হোল’এর মাধ্যমে শীতল বাতাস চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। শীতল ও সতেজ বাতাস ধীরে ধীরে চারদিক থেকে পুরো রুমকে সমানভাবে ঠান্ডা করে তোলে। সরাসরি ঠান্ডা বাতাসে অস্বস্তি বোধ করেন এমন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বেশ স্বস্তিদায়ক একটি ফিচার।

আধুনিক এসি’র আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, এগুলো অনেকাংশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। বর্তমানে ইলেকট্রনিক অ্যাপ্লায়েন্স কেনার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ডিজিটাল ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এখন বেশিরভাগ এসিই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করে। এটি একটানা ঠান্ডা করা ছাড়াও তাপমাত্রাকে স্থির রাখতে পারে, ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎবিল সাশ্রয় করতে পারে এবং পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনতে পারে।

চাই ‘বুদ্ধিমান’ এসি

ভেবে দেখুন তো, কর্মব্যস্ত দীর্ঘ একটি দিনের ক্লান্তি শেষে আপনি বাসায় ফিরলেন, আর সাথে সাথেই আপনার ঘরের এসি’টি আপনার পছন্দসই তাপমাত্রা আর সুবিধা অনুসারে নিজ থেকেই চালু হয়ে গেল?

বর্তমানে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)’এর ব্যবহার এমন অনেক স্বাচ্ছন্দ্য আর সুবিধার সুযোগ তৈরি করেছে, যা অতীতে কল্পনাও করা যেত না। নিজেদের নতুন ‘উইন্ডফ্রি’ ও ‘স্টেপ-আপ’ মডেলের এসিতে এআই, ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে স্যামসাং। ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করে অপারেশনের ধরণ পাল্টাতে পারে এই আধুনিক এসিগুলো, নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর জন্য দিতে পারে বিশেষায়িত সমাধান। এমনকি ব্যবহারকারী বাসার বাইরে থাকলেও মোবাইল ফোনে স্মার্টথিংস অ্যাপের মাধ্যমে আধুনিক এয়ার কন্ডিশনারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। অ্যাপের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ ও সাশ্রয় সম্পর্কেও জানা যায়। নতুন মডেলের এসিগুলোতে ওয়েলকাম কুলিং, ভয়েস কন্ট্রোল, অটো ফিল্টার কুলিং অ্যালার্ট, মাল্টিপল প্রোগ্রাম স্কেজ্যুলের মতো স্মার্ট ফিচার যোগ করা হয়েছে। এর এধরণের এসি প্রি-সেট রেডিয়াস সুবিধার কারণে এসি’র কাছাকাছি আসা মাত্রই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালুর সুবিধাও দিয়ে থাকে।

এত দামে কিনলেন, টিকবে তো?

হিট এক্সচেঞ্জারের সেরা পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে স্যামসাংয়ের নতুন মডেলের এসিতে শতভাগ কপার কনডেন্সার ব্যবহার করা হয়। এতে আরো রয়েছে প্যাটেন্ট করা ডুরাফিন প্লাস, যা মরিচা প্রতিরোধী আবরণ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও গ্রাহকদের মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে এয়ার কন্ডিশনারের ডিজিটাল ইনভার্টার কম্প্রেসরে ১০ বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে স্যামসাং।

ভাবছেন, এতো চমৎকার সব ফিচার সহ এসি কোথায় পাওয়া যাবে? ওপরের সবগুলো ফিচার সহ সর্বপ্রথম উইন্ডফ্রি এয়ার কন্ডিশনার বাজারে নিয়ে এসেছে শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড স্যামসাং। তাই ঘরে বসে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুভি দেখা, ছুটির দিনে বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডাবাজি কিংবা স্রেফ খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়ার জন্য বাসার পরিবেশ আরামদায়ক করে তুলতে স্যামসাং এসি’র এই সর্বাধুনিক ফিচারগুলোর সুবিধা নিতে পারেন আপনিও।




নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তায় করণীয়

মানুষের ৪টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য। বিশেষ করে মানব দেহের বৃদ্ধি গঠন ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে খাদ্য অপরিহার্য।

তবে চলমান শতাব্দীতে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তা ছাড়া সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও দেহকে কর্মক্ষম, চলনসই রাখার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। তাই সকলের উচিত খাদ্য তালিকায় আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি এই সবগুলো উপাদান নিশ্চিত করা।

যাকে বলা হয় সুষম খাবার। তাই শুধু পেট ভরার জন্য খাওয়া এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন,দেশে দেশে যুদ্ধ, সংঘাত, মরুময়তা,লবণাক্ততায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপদনে সংকটকাল অতিবাহিত করছে। তাছাড়া করোনা অতিমারির ভয়াবহতা, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্ব দুঃসহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটে বিশ্বের অনেক দেশ বিপর্যস্ত। উৎপাদন পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং চলমান সংকটের কারণে ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ অত্যাসন্ন বলেছেন সংস্থা। বাস্তবে সুদান, সোমালিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েটি দেশে খাদ্যের জন্য মানুষের আহাজারি, নারী শিশুর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব।

অবশ্য খাদ্য সংকটের বৈশ্বিক অবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশে মিল নেই। জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম এবং এটা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু এ অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে নানা মুখীসংকট বিরাজ করছে। এরমধ্যেও গত কয়েক দশকে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কর্মকা মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশ ব্যস্ত খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এমন এক প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে পালিত হয় বিশ্ব খাদ্য দিবস। বিগত সময়ে করোনাভাইরাস মহামারিতে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা ব্যাহত করেছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। ফলে জীবিকা ও আয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও
বৈষম্যও বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উন্নত উৎপাদন, উন্নত পুষ্টি, উন্নত পরিবেশ ও উন্নত জীবনযাত্রার জন্য আরো দক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমুলক, স্থিতিশীল ও টেকসই কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থায় রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে। আমাদের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাও এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন সবার জন্য পর্যাপ্ত সাশ্রয়ী, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বর্তমান অবস্থার প্রতিপ্রেক্ষিতে ও আন্তর্জাতিক খাদ্যবাজারে অস্থিরতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সংকটকালে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। দেশের মাটি, পানি, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং নিজস্ব প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তা করতে হবে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাপ খাইয়ে উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।

একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য খাদ্যমূল্য নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। আবার সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্যই যদি অখাদ্যে রূপান্তরিত হয়, তা গ্রহণের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ খাদ্য যদি আমাদের জীবন-জীবিকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে আমরা যে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির শিকার হব তা কিন্তু যুদ্ধ ও মহামারীর ভয়াবহতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কাজেই এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।

প্রসঙ্গত: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গত দেড় বছর ধরে বিশ্ব সর্বোচ্চ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এমনি অবস্থায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত খাদ্য সংকটের ইঙ্গিত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ সবাই একযোগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলে আগ্রাসনের কারণে হতে যাওয়া এ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের ফলে শুধু ইউক্রেন,ফিলিস্তিনই নয়; হাজার হাজার মাইল দূরবর্তী দেশগুলোর মানুষেরও মৃত্যুর আশঙ্কা করছে এসব আন্তর্জাকিত সংস্থাসমূহ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সংশোধিত বার্ষিক পূর্বাভাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি নানাবিধ কারণে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে সংস্থাটি ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য কমার ইঙ্গিত দিয়েছে,যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। উপরন্তু জ্বালানি, খাদ্য ও সারের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ
সংকট বাড়াচ্ছে।

অন্যদিকে, জানুয়ারিতে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত ১৫তম কৃষিমন্ত্রীদের সম্মেলনে বিদ্যমান খাদ্য সংকট পরিস্থিতিতে সংকটকালীন খাদ্যব্যবস্থা, জলবায়ু সহনশীল খাদ্য, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং টেকসই বৈশ্বিক খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তাতে আরো বলা হয়, অদূর ভবিষ্যতে একটি অত্যন্ত দুর্যোগময় সময় এগিয়ে আসার এবং বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা : আশু করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বাপা’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ওই বাঁধগুলি মেরামত করতে হবে।

জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের মালিকানায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তারা বলেন, ‘সুন্দরবন বুক পেতে যদি আমাদের রক্ষা না করতো তাহলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হতো। সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে; সুন্দরবনকে রক্ষা করবে কে? সুন্দরবনের উপর যদি মানুষ অত্যাচার না করে তাহলে সুন্দরবন নিজ থেকেই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি।, ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে উপকূলে সুপেয় পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আগামীতে আমন ধান চাষ, পাট ও শাক সবজি চাষে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য নতুন মাত্রায় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে দেশের উপকূলীয় জেলা উপজেলা সমুহে পানিতে অধিক মাত্রায় লবণাক্ততা,আবার কোথাও কোথাও মরুময়তা। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশে সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত চ্যালিঞ্জিং। অবশ্য সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এমনি অবস্থায় সরকারের পক্ষে সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলা করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমুদ্র উপকূলবর্তী মিঠাপানির জলাশয় থেকে দ্রুত লবণাক্ত পানি অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সদ্য ঘূর্ণিঝড় রিমালে দেশের সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানার পর থেকে প্রায় ৫০ ঘণ্টা অবস্থান করেছে। এতে বাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। তাছাড়া সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে লবণ বয়ে এনে তা উপকূলের পুকুরে,জলাশয়ের পানিকে লবণাক্ত করে তোলে। যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং খাদ্য সংকটের বৈশ্বিক সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশে এই
পরিস্থিতিকে আরো সংকটে ফেলছে।

দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে ,মাটিতে অধিক মাত্রায় লবণাক্ততা এবং দেশের উত্তরাঞ্চেলের ১৬ জেলায় বিরাজমান মরুময়তা। কারণ উপকূলের মাটি পানিতে লবণাক্ততায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয় মারাত্মক ভাবে। একই ভাবে দেশের উত্তরাঞ্চেরের ১৬ জেলায় গ্রীষ্মে অতিমাত্রায় মরুময়তায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয় সমভাবে। অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিক স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফোরামে বক্তব্য কালে সম্ভাব্য এ বৈশ্বিক মন্দা বা দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন খাদ্য চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনাবাদি সব জমিকে আবাদের আওতায় আপনা,উৎপাদনস বৃদ্ধি,উৎপানে বৈচিত্র্য আনায়নের। এমনি অবস্থায় , দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ১৭টি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হবে এমনি প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিমন্ত্রণালয় তার আওতাধীন সংস্থাসমূহের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন খরচ কমানো, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, আবাদি জমি বাড়ানো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু পরিবর্তন উপযোগী প্রযুক্তি ও ফসল উদ্ভাবন, আন্তফসল, মিশ্র ফসল, রিলেফসল, রেটুন ফসল চাষ করা, সেচের জমি বৃদ্ধি করা, উফশী ও হাইব্রিড ফসল চাষ করা, শস্য বহুমুখীকরণ করা, জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ও প্রচুর চারা উৎপাদন করা, রোগবালাই দমন করা। প্রতি ইঞ্চি জমি চাষ করা। ধানক্ষেতে মাছ চাষ, পুকুরে মাছ-মুরগি-হাঁসের সমন্বিত চাষ করা, রোগ ও পোকা দমনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, পশুপাখির জন্য জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভর্তুকি বাড়ানো, সংরক্ষণাগার বাড়ানো, কৃষি উপকরণ সরবরাহ, শস্যবিমা চালু করা ও পতিত জলাশয়ে মাছ চাষের বহুমুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রত্যাশা সরকারি উদ্যোগে গৃহীত এসব কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, রিনাপদ খাদ্যেও নিশ্চয়তা করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক হারে জনসচেতসতা সৃষ্টি,খাদ্যের অপচয় রোধে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথাযথ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। তাহলেই সম্ভব সকালের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা এবং নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার বিধান করা।

# পিআইডি ফিচার

লেখিকা : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত।




মেহেরপুরে পেকিং জাতের হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা

মেহেরপুরে ব্রইলার টাইপের পেকিং জাতের হাঁস পালন করে সাবলম্বি হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা । সল্প বিনিয়োগ ও অল্প সময়ে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম ব্রইলার টাইপ পেকিং প্রজাতির হাঁস পালন। সহজ ব্যাবস্থাপনা ও ভালো বাজার দরের কারণে ব্রইলার টাইপ পেকিং জাতের হাঁস পালন জেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীদের সৌখিন ও পছন্দের পেশায় পরিনত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পরিবারের মাংসের চাহিদা পুরণ হছে অন্যদিকে বাড়তি আয়ের উৎস বলেও মনে করছেন গৃহিনীরা।

খামারী পর্যায়ে পেকিং জাতের হাঁস পালনে গ্রামের অস্বচ্ছল নারীদের সাবলম্বি করতে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পল্লী কর্ম- সহায়ক ফাউন্ডেশন। অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে পালন করেও লাভবান হচ্ছে। কারিগরি সহযোগিতায় কাজ করছে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি নামের বেসরকারি সংস্থা। নারীদের পাশাপাশি বেকার যুবকেরাও এগিয়ে আসছে এ জাতের হাঁস পালনে। ।

গাংনী উপজেলার রাইপুর গ্রামের আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী রিনা খাতুন বলেন, আমার অভঅবের সংসার। স্বামীর রোজাগরের টাকায় সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হতো। ছেলে মেয়েদের হাতে দুএক টাকা দিতে পারতাম না। পরে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির লোকজন আমার দুরবস্থা দেখে পেকিং জাতের হাঁসের বাচ্চা দেয় এবং তা পালনের জন্য বিভিন্ন উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা করেন। আমার বাড়িতে এখন ৩৫টি পেকিং জাতের হাঁস রয়েছে। এ হাঁস পালনে পানির প্রয়োজন হয়না। এই জাতের হাঁস পালনের বিশেষ বৈশিষ্ঠ হচ্ছে, এই জাতের হাঁস দ্রত বর্ধনশীল। দুই মাসে প্রায় ৩ কেজি ওজন হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম এবং মাংস সুস্বাদু। প্রাকৃতিক জলাশয়ের প্রয়োজন পড়েনা পাশাপাশি স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ। এখন আমার সংসারের টুকিটাকি খরচ আমি নিজেই হাসের ডিম ও মাংস বিক্রি করে করতে পারি।

বেতবাড়িয়া গ্রামের মিনুয়ারা খাতুন বলেন, বাড়িতেই পেকিং হাঁস পালন করি। কোন সসম্যা হলে সংস্থার পাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে জানায়। তিনি আমাদের সার্বিক সহায়তা দেন। সংস্থার কাছ থেকে বিনামূল্যে পেকিং জাতের হাঁসের বাচ্চা দিয়েছিল। হাঁস ও ডিম বিক্রি করে আমার সংসারের অনেক স্বচ্ছলতা এসেছে।

তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর জাকিরের স্ত্রী সাথিয়ারা জানায়, স্বামীর রোজগারে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগানো খুবই কষ্ট হতো। এখন আমার বাড়িতে ৩৫টি পেকিং জাতের হাঁস পালন করি। প্রতিদিনই প্রায় সব হাঁসেই ডিম দিচ্ছে। ডিম বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া খরচ ও পোশাক কিনে দিতে সমস্যা হচ্ছেনা। আমার হাত খরচের টাকাও আর স্বামীর কাছ থেকে নিতে হয়না। আমার সংসারে অনেকটাই আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। তবে বানিজ্যিক ভাবে খামার করার চেষ্টা করছেন উপকারভোগী নারীরা।

জানা গেছে, সারা দেশে সমন্বিত কৃষি ইউনিট ভুক্ত প্রাণিসম্পদ খাতের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পিকেএসএফ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে পেকিং প্রজাতির হাঁস পালন প্রকল্পটি চালু করে। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)।

কর্মসূচির আওতায় গাংনী উপজেলাতে খামারীদের স্বল্প সময়ে মাংস ও ডিম উৎপাদনে ব্রইলার টাইপ পেকিং হাঁস পালন বিষয়ক ৬৩ টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে। এছাড়াও খামারিদের মাঝে পেকিং হাঁস পালনের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি খামারিদের পেকিং হাঁস পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, খামার দিবস, পরামর্শ কেন্দ্র এবং ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)। এ প্রকল্পের আওতায় শতাধিক অস্বচ্ছল পরিবার এখন আর্থিক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পলাশীপাড়া পিএসকেএস এর নির্বাহী পরিচালক মুহা: মোশাররফ হোসেন বলেন, পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা পুরুনে পেকিং জাতের হাঁসপালন প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করছি। এতে অনেকের সংসারে স্বচ্ছলতা আসছে। খামারী পর্যায়ে পেকিং জাতের হাঁস পালনে গ্রামের অস্বচ্ছল নারীদের সাবলম্বি করতে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পল্লী কর্ম- সহায়ক ফাউন্ডেশন। অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে পালন করেও লাভবান হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া মানুষকে আর্থিক স্বচ্ছলতায় সক্ষম করতে আমাদের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা: নাসিমা খাতুন বলেন, আমাদের সমাজে অনেক পরিবার আছে যারা অনেক অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে সংসার চালায়। তাদের আমরা সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখি করে সাবলম্বী করে তুলছি। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি অনেক বেসরকারি সংস্থাও নারীদের কর্মমুখী করতে নানা কর্মসুচি হাতে নিয়েছে। তেমনি একটি সংস্থা পিএসকেএস। পেকিং জাতের হাঁস পালন করে অনেক নারীরা তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে। অনেকেই এখন সংসারে আত্ননির্ভরশীল হচ্ছে।




নীলচাষিদের আর্তনাদের স্মৃতি চিহৃ ‘আমঝুপি নীলকুঠি’

“ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে মীরজাফর ও ষড়যন্ত্রীদের শেষ বৈঠক হয়েছে এবং তার ফলে শুধু নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিপর্যয় ঘটেনি বাঙালী হারিয়েছিলো তার স্বাধীনতা।’’

এই জনশ্রতি দিয়েই ঐতিহাসিক স্থাপনা আমঝুপির নীলকুঠির কালিমা লেপে ইতিহাস বিকৃতি করা হলো ১৯৭৯ সালের ২৬ মার্চ। তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান ভূইয়াঁর একটি ফলক নীলকুঠিতে স্থাপন করার পর থেকে এই নীলকুঠিসহ পুরোগ্রামটিকে ষড়যন্ত্রীদের অংশি হিসেবে ইতিহাসের কালো অধ্যায় রচনা করা হলো। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইতিহাস বিকৃতি করে একটি বই লিখে তাকে সহযোগীতা করছিলেন লেখক আবুল আহসান চৌধুরী।

বিভিন্ন লেখকের বই থেকে জানা গেছে, ১৮১৮ থেকে ১৮২০ খৃস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে মেহেরপুরের আমঝুপি, ভাটপাড়া, কাথুলি, বামন্দীসহ বেশকিছু স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়।

ইতিহাস বলে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাপতি লর্ড ক্লাবের নেতৃত্বে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। পলাশীর যুদ্ধে কয়েকবছর পর লর্ড ক্লাইভ ইংল্যাণ্ডে ফিরে যান এবং ১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর তিনি ইংল্যাণ্ডে আত্মহত্যা করেন।

কিন্তু বিকৃত ইতিহাসে জনশ্রুতির দোহায় দিয়ে বলা হয়েছে, পলাশীর যুদ্ধের আগে মাঝে মধ্যে লর্ড ক্লাইভ আমঝুপি নীলকুঠিতে আসতেন এবং এই নীলকুঠিতে মীরজাফরের সাথে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হারানোর নীল নকশা করেন। যে নীলকুঠি জন্ম হয় ১৮১৮ সালে অর্থাৎ পলাশী যুদ্ধের ৬১ বছর পর। সেই নীলকুঠিকে কিভাবে লর্ড ক্লাইভ-–মীরজাফরের ষড়যন্ত্রের নীলনকশার বৈঠকখানা বলা হয় ?

আমঝুপি নীলকুঠি

নীলকুঠির ভবনের উত্তর দিক

নীলকুঠি কেন স্থাপন করা হয়

১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে এ বঙ্গে কোম্পানী আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় মেহেরপুরসহ সমগ্র নদীয়া ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাষনভুক্ত হয়। পরবর্তিতে ১৭৭৮ সালে ক্যারেল ব্লুম নামের এক ইংরেজ মেহেরপুর সহ বিভিন্ন স্থানে নীল চাষ শুরু করেন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের ব্যবসায়ীক প্রসারের কারণে উনিশ শতকের শুরুর দিকে আমঝুপি নীলকুঠিসহ বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ করে। ইংরেজ কুঠিয়াল কেনি, সিম্পসেন, ফার্গুসেনের সতীর্থদের অত্যাচার আর শোষণের স্থান ছিলো এই নীলকুঠি।

নীলকরদের অত্যাচার আর নির্যাতনের সাক্ষী আমঝুপি নীলকুঠি। কর পরিশোধ না করতে পারলে নীলচাষিদের উপর চলতো নানা নির্যাতন, এমনকি হত্যা করে লাশ মূত্যুকুপে নিক্ষেপ করে উল্লাস করা হতো। নীলকুঠিতে এখনো সে সকল নির্যাতনের স্মৃতি চিহৃ আকাশে বাতাসে বয়ে বেড়ায়। শুনশান নিরবতায় প্রাকৃতিক নির্জনতার প্রতিটি পরতে রয়েছে সে নির্যাতনের ক্ষত চিহৃ।

জানা যায়, অত্যধিক লাভজনক হওয়ায় ১৭৯৬ সালে মেহেরপুর অঞ্চলে নীল চাষ শুরু হয়। এ সময় বিখ্যাত বর্গী দস্যু নেতা রঘুনাথ ঘোষালির সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে গোয়ালা চৌধুরী নিহত হলে মেহেরপুর অঞ্চলে রানী ভবানীর জমিদারীভুক্ত হয়। রানী ভবানী নিহত হলে কাসিম বাজার অঞ্চলটি ক্রয় করেন হরিনাথ কুমার নন্দী। পরে হাত বদল হয়ে গোটা অঞ্চলটি মথুরানাথ মুখার্জির জমিদারীভুক্ত হয়। এক সময় মথুরানাথ মুখার্জির সঙ্গে কুখ্যাত নীলকর জেমস হিলের বিবাদ বাধে। মথুরানাথ-এর ছেলে চন্দ্র মোহন বৃহৎ অঙ্কের টাকা নজরানা নিয়ে মেহেরপুরকে জেমস হিলের হাতে তুলে দেন। চন্দ্র মোহনের ছেলে মহেষ মুখার্জি জেমস হিলের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ইতিহাসে ইনিই নীলদর্পণ নাটকে গুপে দেওয়ান নামে পরিচিত।

নীল গাছ পচা পানি জ্বালিয়ে তৈরি করা হতো নীল রঙ। এক বিঘা জমিতে আড়াই থেকে তিন কেজি নীল উৎপন্ন হতো- যা উৎপাদন করতে ব্যয় হতো ১২-১৪ টাকা। অথচ চাষীরা পেতো মাত্র তিন-চার টাকা। চাষীদের দাদন দিয়ে নীল চাষে বাধ্য করা হতো যাতে তারা জমিতে নীল চাষ বাদি দিয়ে অন্য চাষ না করতে পারে। ফলে বলা হয়, নীল গাছ থেকে যে রঙ তৈরি করা হতো তা ছিল চাষীদের বুকের পুঞ্জ্ভিূত রক্ত। জমাটবাঁধা ক্ষোভে নীলচাষিরা আস্তে আস্তে আন্দোলন গড়ে তোলে। এক সময় দুর্বার আন্দোলনে নীলকররা আমঝুপি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

আমঝুপি নীলকুঠি নীলকরদের শত অত্যাচারের একটি ঐতিহাসিক স্থান। নীলকুঠিয়াল মিকেনী, সিম্পসন, ফার্গুসেন, জেমস হিল এদের আনন্দের হোলি আর কৃষকদের নির্যাতিত হওয়ার কাহিনী আমঝুপি নীলকুঠির আকাশে-বাতাসে এখনো জড়িয়ে আছে।

আমঝুপি বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে আধা কিলোমিটার পিচঢালা পথ যেতেই নীলকুঠির প্রধান ফটক দেখা যাবে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ডিসি ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগে নেওয়া হয় ২০১৮ সালের দিকে। সে সময় এই ফটকটি নির্মাণ করা হয়। ইকোপার্কের জন্য নীলকুঠির স্থাপনাগুলো কিছু সংস্কার করা হয়। তবে পার্কটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। প্রধান ফটক পেরিয়ে সড়ক বরাবর সেই নীলকরদের শোষণের স্মৃতিচিহৃ নীলকুঠি ভবন। ভবনের আগে সড়কের দুই পাশে আম ও লিচুর বাগান। ভবনের উত্তর দিকে কাজলা নদী। কাজলা নদীর সাথে ব্রীজের মাধ্যমে ভবনের সংযোগ রয়েছে। নীল উৎপাদন করতে প্রচুর পানি লাগতো এবং যোগাযোগ সহজ করার জন্য নীলকুঠিগুলো ইংরেজরা বানিয়েছিলো নদীর পাড়ে। নীলকুঠিতে পৌছালেই এক প্রাকৃতিক নির্জনতা লক্ষ্য করা যায়। নীলকুঠির বিভিন্ন স্থানে ইংরেজদের সেই নীল গাছ চোখে পড়ে। সারি সারি নারিকেল গাছ চোখ জুড়াবে। ভবনের উত্তর-পূর্ব দিকে দুটি বড় আকারের কড়ুই গাছ পুরো নীলকুঠির সৌন্দর্য্যকে আকড়ে ধরে রয়েছে। আম, লিচুসহ বিভিন্ন গাছে পাখিদের আনাগোনা বেশ। একটু কান পাতলেই পাখিদের ডাক শোনা যায়। কখনো কখনো মনে হয় নিজর্নতায় নীলচাষীদের করুণ আর্তনাদও শোনা যাচ্ছে।

আমঝুপি নীলকুঠি

নীলকুঠি ভবন থেকে কাজলা নদীতে যাওয়ার ব্রীজ

নীলকুঠির মূল ভবনে যা আছে

আমঝুপি নীলকুঠির মূল ভবনটি আয়তাকার আকৃতির। নদীপথের যাত্রার সুবিাধায় ভননটি কাজলা নদী মুখ করে উত্তরমুখী করা হয়। তবে বর্তমানে দক্ষিনমুখী হয়ে প্রবেশ করতে হয়। ভবনটিকে দুদিক থেকেই সামনের দিকে মনে হয়। ৩৭ মিটার দৈঘ্য এবং ২২ মিটার প্রস্থের এ ভবনটিতে ছোটবড় ১৩টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শয়ন কক্ষ, নাচঘর, স্নেকপ্রুফ কক্ষ, মৃত্যুকুপ। প্রচলিত আছে, ইংরেজদের মনোরঞ্জনের জন্য নতর্কীদের নাচতে হতো। কোন প্রজা খাজনা কিংবা নীলচাষে অনীহা প্রকাশ করলে তাকে হত্যা করে মূত্যুকুপে নিক্ষেপ করা হতো। স্নেকপ্রুফ কক্ষটি এত মসৃণ যে সাপ কিংবা পিপড়া চলতে পারবে না। নীলকুঠিতে আরো রয়েছে পুরাতন রেকর্ড রুম, কয়েদখানা, কাচারী ঘর, নায়েবদের আবাসন।

১৯৭৮ সালে ভবনটিকে নতুন করে ৮২ লাখ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয় এবং পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এলাকার উন্নয়নের নাম করে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান ভ’ইয়া ১৯৭৯ সালের ২৬ মার্চ ওই বিকৃত ইতিহাসের ফলক লাগিয়ে দেন ভবনটিতে। পরবর্তিতে ২০১৭ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিনে প্রথ্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নীলকুঠি মূলভবন সহ ৩ একর ৬১ শতক জমি অধিগ্রহণ করে। ভবনটির ভিতরে নতুন করে কিছু সংস্কার করা হয় এবং একটি জাদুঘর করা হয়। তবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বাকি ৬১ একর জমি। পরিচর্যার অভাবে বাগানের জৌলুস হারাচ্ছে।
ঐতিহাসিক এ নীলকুঠিতে প্রায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা যান। বছরে প্রায় ২০ হাজার পর্যটক নীলকুঠি পরিদর্শন করেন। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নীলকুঠিকে প্রসারিত করতে হলে কিছু সুবিধা বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন তারা।

নীলকুঠি চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে চায়ের টং দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন সামসুল হক মিলন। চা খেতে খেতে মিলনের সাথে কথা হয় নীলকুঠি সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে । মিলন বলেন, সপ্তাহে সাধারণত শুক্রবার ও শনিবার পর্যটক আসে। মহিলা পর্যটকদের জন্য অসুবিধা পড়তেই হয়। এখানে কোন টয়লেটের (ওয়াশরুম) ব্যবস্থা নেই। অনেকটা বাধ্য নীলকুঠির পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে তাদের সে ব্যবস্থা করতে হয়। মিলন আরো বলেন, ২০১৮ সালে সরকারিভাবে একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পানির ব্যবস্থা না করতে পারায় সেটা নাকি উদ্বোধন করা গেল না।

মেহেরপুরের সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও স্থানীয়রা বারবার আমঝুপি নীলকুঠির বিকৃতি ইতিহাসের ফলক মুছে সঠিক ইতিহাসে স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজও সে ফলক রয়ে গেছে।

আমঝুপি নীলকুঠি

নীলগাছ

কিভাবে যাবেন আমঝুপি নীলকুঠি

ঢাকাসহ দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বাসযোগে মেহেরপুর জেলা শহওে আসতে হবে। জেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বে আমঝুপি নীলকুঠির অবস্থান। জেলা শহর থেকে রিক্সা বা ইজিবাইকে করে খুব সহজেই যেতে পারবেন নীলকুঠিতে। সপ্তাহে প্রতি রবিবার পূর্নদিবস এবং সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে নীলকুঠির মূলভবন। অন্যান্য দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে ঘুরে দেখতে পারবেন ঐতিহাসিক নীলকুঠি ভবনটি।




দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অটিজম দূর করতে চান পুতুল

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের (এসইএআরও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হলে এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য নীতি ও অনুশীলনে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করার পরিকল্পনা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সম্প্রতি এসইএআরও আঞ্চলিক পরিচালক পদে তাকে মনোনয়ন দেয় সরকার।

এসইএআরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়টি আঞ্চলিক অফিসের মধ্যে একটি, যা সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত। এর সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব তিমুর।

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, একটু মমতা পেলেই তারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন। এ দেশে এমনই এক বাস্তবতা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য উত্তরসূরি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রথমসারির ব্যক্তিত্ব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই সদস্য যুক্তরাষ্ট্রেরে ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্বে স্নাতকোত্তার এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি নেন স্কুল মনস্তত্বে। সেখানে পড়তে পড়তে গবেষণা শুরু করেন বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন নিয়ে। তাঁর এই গবেষণা শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স।

ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শেষে অটিজম নিয়ে কাজ শুরু করেন পুতুল। ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁকে হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দেয়। একজন স্বীকৃত মনোবিজ্ঞানী এবং অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেই তাঁর এ অর্জন। শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন ২০০৮ সালে। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়।

আমাদের দেশে দেড় দশক আগেও অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের উদাসীনতা যে কোন পর্যায়ে ছিল তা জানেন একমাত্র ভুক্তভোগীরাই। শুধু যে মর্মান্তিকভাবে তারা অবহেলিত হয়েছে তাই নয়, হতে হয়েছে পরিবার ও সমাজের চরম নেতিবাচক মানসিকতার শিকার। পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে গিয়েছিল যে, অটিস্টিক শিশুরা যেনো সমাজের বোঝা। সেই সব পরিবারকে আশার আলো দেখিয়েছেন পুতুল। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের ওপর দৃষ্টিভঙ্গিগত ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন তিনি। এখন সাধারণত কেউ অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের লুকিয়ে রাখে না।

পুতুল সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল বলেছিলেন, ‘পুতুল তাঁর নিজের দেশ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অ্যাজেন্ডায় অটিজম ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে যে কাজ করছেন তা অভূতপূর্ব। একই সঙ্গে অটিজম বিষয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক মনোযোগ আকর্ষণ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কাজের উপর ভিত্তি করে, বাংলাদেশে অটিজম দূর করার কর্মসূচি নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।’

ড. ক্ষেত্রপাল বলেন, ‘পুতুলের চেষ্টায় এই অঞ্চলের ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অটিজম নিয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। দশটি মেডিক্যাল কলেজে শিশুদের অটিজমজনিত সমস্যা শনাক্ত করার জন্যে বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে।’

শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ড দেয় ২০১৪ সালে। বিশ্বখ্যাত এই মনস্তত্ত্ববিদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নের জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডেরও সভাপতি তিনি। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন ২০১৩ সালে।

পুতুলের পৃথিবী অনেক বড়। বাংলাদেশ তাঁর কারণেই অটিজম সচেতনতায় বিশ্বের কাছে মডেল। এশীয় অটিজম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অটিজম বিষয়ক ‘শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন তিনি।

২০২০ সালে পুতুল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিমেটিক রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হন। করোনা মহামারির সময় ফোরামের কাজে তাঁর সম্পৃক্ততা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যেও সারাবিশ্বে তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থ-সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল তাঁর উদ্যোগেই। কয়েক বছর আগে জাতিসংঘে প্রতিবন্ধি বিষয়ক এক সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি একজন প্রতিবন্ধীর জীবন বদলে দিতে পারে। এটি সভ্যতার দায়িত্ববোধও বটে।’

নিজের প্রতিভা, চেষ্টা ও শ্রম দিয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও কুসংস্কার এড়িয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করছেন পুতুল। অনগ্রসর এসব মানুষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করছেন। যাতে তারা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের মূল ধারায় যুক্ত হতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের ১৩টি মন্ত্রণালয় অটিজম সমস্যা সমাধানে একযোগে কাজ করছে। অটিজমের উপর ছয় স্তরে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

অটিজম দূর করতে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা-শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিল্ড্রেন সেন্টার’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি’ বিভাগ এবং অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট চালু করা হয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, চিকিৎসক, সেবাদানকারী ও মা-বাবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া অটিস্টিকদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীসহ তাদের সৃষ্টিশীল মনের বিকাশে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

২০১৭ সালে প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন পুরস্কারে ভূষিত হন পুতুল। নিজের সক্রিয়তার জন্য ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট প্রাক্তন শিক্ষার্থী পদক প্রাপ্ত হন। দ্যা রয়েল হাউস অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, চ্যাথাম হাউজের এসোসিয়েটেড ফেলো তিনি। এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশের সরকারকে টেকসই, নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গাড়ায় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে। অটিজম নিয়ে অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বিশেষ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়।




বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণ, অতঃপর দুই হতভাগ্য নারীর গল্প

রেখা রানী বিশ্বাস। বয়স ৪০। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকরে খোরদো শাখা থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ নেওয়ার মাস দুয়েক পরেই কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি, মাঠের ফসল পানিতে ডুবে যায়। গ্রামের অন্যদের সঙ্গে রেখা রানী স্বামী সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন পাকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

দু’দিন পরেই আশ্রয় কেন্দ্রে রেখা রানীর কাছে কিস্তির জন্য হাজির হন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীরা। বসে থাকেন রাত ১০টা পর্যন্ত, ভয় দেখান থানা-পুলিশের। এক পর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠকর্মীর কাছ ঋণ গ্রহীতা রেখা রাণী প্রশ্ন করেন, ঋণী সদস্য মারা গেলে তার কিস্তি কে দেয়? মাঠকর্মী বলেন, তার ঋণ মাফ করে দেওয়া হয়। ঠিক পর দিনই আশ্রয় কেন্দ্রের পাশে কাঁঠাল গাছে রেখা রানীর ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়। এই গল্পটি ২০০৮ সালে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছিলেন ওই আশ্রয় কেন্দ্রের অন্য বাসিন্দারা।

এরকম গল্প আমাদের দেশে অহরহ। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রাম থেকে ক্ষুদ্র ঋণ ছড়ানোর পর আজ পর্যন্ত কত রেখা রানী আত্মহত্যা করেছেন তার কোন গবেষণা হয়নি। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কেন মানুষকে আত্মহত্যা করতে হয় এই কারণ কেউ খুঁজে বের করেনি। কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণের বাজার বড় হয়েছে । এক গ্রামীণ ব্যাংককে অনুসরণ করে সারাদেশে হাজার দুয়েকের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এখন আরও একটি গল্প বলবো। গল্পটি ২০০৭ সালের। এর আগের বছর বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য দেখিয়ে ড. ইউনূস এবং তার গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাই এই কনসেপ্টের ফলাফল সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন ডেনিশ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা টম হেইনম্যান। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ফিল্ম তৈরির জন্য ঢাকার অদূরে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা জাহানারা নামে এক নারীর সাথে দেখা করেন তিনি। হেইনম্যান যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই ওই নারী তার ঝুপড়ি বাড়িটি বিক্রি করে দেন। কারণ তিনি ঋণের কিস্তির চাপ সহ্য করতে পারছিলেন না।

সে সময় জাহানারা বর্ননা করেছিলেন কিভাবে গ্রামীণ ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের ঋণ কর্মকর্তাদের দ্বারা ভয়ভীতি, হয়রানি এবং খারাপ ব্যবহারের শিকার হয়েছিলেন তিনি। এরপর আরও কয়েকবার কলাকৌশলীসহ টম হেইনম্যান বাংলাদেশে এসেছিলেন জাহানারার অবস্থা জানতে। কিন্তু তাকে খুঁজে পাননি। পরে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকেদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সাংবাদিকরাও জাহানারার খোঁজ দিতে পারেননি। আমাদের প্রথম গল্পের রেখা রানী তো মরে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু জাহানারা কোথায় তা আজও কেউ জানে না।

পরে বাংলাদেশ, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মেক্সিকোর ওক্সাকা রাজ্যের দরিদ্র মানুষদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়ে তৈরি হয়েছিল ফিল্ম ‘দ্যা মাইক্রো ডেবিট’। হেইনম্যানের সেই ফিল্মে জাহানারার সাথে সাক্ষাৎকার ছিল প্রথমে। এতে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীরা বেশিরভাগেরই বিভিন্ন এনজিও এবং মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনে অসংখ্য ঋণ নিয়েছেন। অনেকে পুরানো ঋণ শোধ করতে নতুন ঋণ নেওয়ার আশঙ্কার কথা জানান। কেউ কেউ ৩০-২০০% পর্যন্ত বার্ষিক সুদ শোধ করার কথাও বলেন। তাদের বর্ণনায় উঠে আসে চরম সামাজিক চাপ এবং সাপ্তাহিক কিস্তি আদায়ের নিষ্ঠুরতার চিত্র।

গ্রামীণ ব্যাংক যেখান থেকে শুরু সেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জোবরা গ্রামে যায় হেইনম্যানের কলাকুশলীরা। স্থানীয়দের সহায়তা সেখানে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা এবং আশপাশের মানুষজনের সাথে কথা বলেন তারা। এতে ওঠে আসে গ্রামীণ ব্যাংকের অমানবিক আচরণ এবং মিথ্যাচারের ভয়ঙ্কর সব তথ্য। তথ্য চিত্রে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে হিলারি ক্লিনটন পরিদর্শনে গিয়ে ৬০ জনকে ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে দেওয়া হয় ৫ থেকে ৬ জনকে। জোবরা গ্রামে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৫০ থেকে ৮০ জন। তাদের মধ্যে সফল হন মাত্র ৪ থেকে ৫ জন। তাদের অনেকে ভিটেমাটি বিক্রি করেছে, কেউ ঘরের চালের টিন বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

এই ফিল্মে সাক্ষাৎকার দেন বাংলাদেশের নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির, বেসরকারি সংগঠন অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনালের শহিদুর রহমান এবং অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান। বক্তব্যে নিউ এজ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ক্ষুদ্রঋণে সুদের হার ৪০-১২৫%। যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সুদের হার ১৩-১৪%। ক্ষুদ্রঋণ অনেক বড় ব্যবসা বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি। হেইনম্যানের ফিল্মে অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনালের শহিদুর রহমান বলেন, ক্ষুদ্রঋণে রিটার্নের পরিমান অনেক বেশি। আর খলিকুজ্জামানের মনে করেন কিস্তি দিতে গিয়ে অন্যান্য মৌলিক বিষয় যেমন- স্যানিটেশন, শিক্ষা, সুষম খাবার চাহিদা পূরণ করতে পারে না ঋণ গ্রহিতারা।

নব্বইয়ের দশক থেকে পরবর্তী দুই দশক দারিদ্র্য দূরীকরণের সমাধান হিসাবে বাংলাদেশে আসে ক্ষুদ্রঋণ। পাড়ায় পাড়ায় নারীরা জোটবদ্ধ হয়ে সমিতির সদস্য হন। এনজিওগুলোর প্রশিক্ষিত মাঠ কর্মীদের যুক্তির কাছে পরাজয় মানতে বাধ্য হন তারা। জামানত ছাড়া ঋণের বিষয়টিকে ব্রান্ডিং করা হয় ক্ষুদ্রঋণে। সমিতির সদস্যদের বলা হয় গ্রামীণ ব্যাংকে সুদের হার ২৬-৩১%। আপত দৃষ্টিতে এই সুদের হার কিস্তি অনুপাতে কম মনে হলেও চক্রবৃদ্ধির কারনে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

আর আমাদের গণমাধ্যমের তথ্য খবর অনুযায়ী ক্ষুদ্র ঋণব্যবস্থা বাড়ায় রেখা রাণী ও জাহানারাদের সংখ্যা। কারণ আর কিছু নয়, একসময় যখন তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা ছিল না, তখন এসব বিষয় সহজে জানতে পারতো না তৃণমূলের মানুষ। ঋণ নেয়ার পর থেকেই শুরু হতো কিস্তি শোধের সপ্তাহ গণনা। কয়েকজনের গ্রুপ করে ঋণ দেয়ায় কখনও কখনও একজনের কিস্তি অন্যকে শোধ করতে হতো। দেখা যায় ঋণের টাকা তোলার সাথে সাথে অনেকের কাছ থেকে কেটে নেওয়া হতো গ্রুপের অন্য সদস্যদের কিস্তির টাকা। এই বিষয়গুলো উঠে আসে হেইনম্যানের ছবিতে। ‘দ্যা মাইক্রো ডেবিট’ নামে ওই তথ্যচিত্রে মূলত হেইনম্যান বলতে চান, ক্ষুদ্রঋণকে অনেক বড় এবং মহৎ সামাজিক ব্যবসা হিসেবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বহির্বিশ্বে প্রচার করা হয়। দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অনুদান আনা হয়। এদিয়ে বাড়ানো হয় এনজিওর পরিধি। গত ১০ বছরে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে ক্ষুদ্র ঋণের তাণ্ডব কিছুটা কমলেও এখনো এর প্রভাব কমেনি।




আজ বিশ্ব গাধা দিবস

“গাধা” আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত শব্দ। জীবনে একবার হলেও এই শব্দটি শোনেনি এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবেনা। কারণ, ভুল হওয়াটা মানুষের জীবনে একটি সহজ ব্যাপার। মানুষের ভুল হবেই তাই, কেউ ভুল করলে বা কোনো বোকামি করলে ‘গাধার সঙ্গে তুলনা’ করা হয় হারহামেশাই। আবার গাধা নিয়ে অনেক রুপক কথাও শোনা যায়। যেমন “গাধা সবই করতে পারে, শুধু ভাতের লাকড়ি বইতে পারেনা”। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, গাধা কি আসলেই বোকা? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা নেই। যাইহোক গাধা বোকা হোক বা চালাক হোক, আজ কেউ গাধা বললে রাগ করবেন না। কারণ আজ ৮ মে গাধা দিবস।

গাধা শুধু ভারই বহন করে না, এই প্রাণীটি ওষুধ শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল উৎপাদকও। গাধার চামড়ার মধ্যে থাকা বিশেষ ধরনের আঠা জিলাটিন চীনে ইজিয়াও নামের প্রচলিত ওষুধের প্রধান কাঁচামাল। এ ওষুধ অ্যাজমা থেকে ইনসোমনিয়ার মতো নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তাই প্রাণীটিকে শুধু অবহেলাই করবেন না, অবজ্ঞা করবেন না ভালোও বাসবেন।

গাধার রয়েছে অবিশ্বাস্য স্মৃতিশক্তি। ২৫ বছর আগে দেখা এলাকা, এমনকি বহু বছর আগে দেখা গাধাদের তারা সহজেই চিনতে পারে। পাশাপাশি, গাধা প্রচণ্ড জেদি, আত্মরক্ষা করার প্রবল ক্ষমতা রাখে। গাধাকে ভয় দেখিয়ে বা জোর করে কোনো কাজ করিয়ে নেয়া খুব কঠিন ব্যাপার।

কোনো ঘটনায় গাধা সহজে চমকে ওঠে না। এরা প্রখর কৌতূহলী। গাধার চিন্তাধারা ঘোড়ার থেকে স্বাধীন। একটি গাধা মরু পরিবেশে ৬০ মাইল দূরে থেকে অন্য গাধার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে। ঘোড়ার থেকে তাদের আছে অনেক বড় কান, যা তাদের শরীর শীতল রাখে।

বিশ্ব গাধা দিবসের প্রচলন করেছিলেন আর্ক রাজিক। তিনি একজন বিজ্ঞানী এবং মরুভূমির প্রাণী নিয়ে কাজ করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন গাধারা মানুষের জন্য যে পরিমাণ কাজ করে, সেই পরিমাণ স্বীকৃতি পাচ্ছে না। এ জন্য তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেন। তারপর সেখানে গাধা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য প্রচার করতে শুরু করেন।

আর্ক রাজিকের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে প্রথম বিশ্ব গাধা দিবস উদযাপন করা হয়। তখন থেকে প্রতি বছর ৮ মে গাধা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো গাধাকে নিয়ে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রাণীটি কীভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে তা তুলে ধরা।




পাঠা বলিতে মেতে উঠেছে  হিন্দু সম্প্রদায়  

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি পূজা হলো সিদ্ধেশ্বরী পূঁজা। ।হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারও নারী পুরুষ মেতে উঠেছেন পূঁজা উদযাপনে। শুধু মেহেরপুর নয়, এ সম্প্রদায়ের নানা বয়সী নারী পুরুষ এসেছেন পার্শ্ববর্তি বিভিন্ন জেলা থেকে।

আজ রবিবার (১৫ মে)  মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী বড়বাজার সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ সিদ্ধেশ্বরী পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

এটি মূলত মান্নত পূরণের জন্য পাঠা বলির পূঁজা বলে জানালেন গাংনী থেকে আসা শ্রী লালন  কুমার দাশ।

মেহেরপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায়, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা ঝিনাইদহ থেকে এসছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা সাগর মন্ডল, চঞ্চল ও আকাশ জানান, এটি একটি ঐতিহ্যবাহি ধর্মীয় উৎসব এবং উৎসব উপলক্ষে দিনব্যাপি মেলা। মেলায় অনেক ঘুরেছি। ভাল লাগছে এখানে এসে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী গ্রামের ইন্দ্রজিৎ হালদার জানালেন, ছোট মেয়ে সূচনার জন্য মান্নত করেছিলাম। আমার পরিবারের সবাই এসেছি এখানে। পাঠা বলি দিয়েছি। পুরোহিতের কাছে পাঠা দিয়ে পুঁজা সম্পন্ন করে এখন মেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরছি।

গাংনী উপজেলার নিত্যনন্দপুর গ্রাম থেকে আসা পদ্দা হালদার বলেন, আমার ছেলে শ্রী মনজোনের চোখে সমস্যা আছে। তাই তার জন্য মান্নত করেছি। আমরা সন্ধ্যা হালদার ও পদ্দা হালদারের সাথে এসছি।

গাংনী থানার চাঁদপুরের মহল দাস বলেন,করোণার কারণে গত দুই বছর এই সিদ্ধেশরী পূজাঁ বন্ধ ছিল। এবছর জাঁকজমক ভাবেই পূজাঁ ও মেলা হচ্ছে। আমরা পরিবারের সাথে ঘোরাঘুরির আর পূজা দেখার জন্যই এসেছি।

দৌলতপুর থেকে আসা শ্রী স্বাধীন কুমার বলেন, গত দু বছর মেলাটি বন্ধ ছিল। আগের বছরগুলোতে মেলায় প্রচুর মানুষজন আসতো। এবছর মেলা ও পুজাঁ এক সাথে হলেও   আগের মতো মেলার সেই জৌলুস আর নেই।

মেহেরপুর সিদ্ধেশরী কালি মন্দীরের পুরোহিত তপন ব্যনার্জি জানালেন, সিদ্ধেশরী পুজাঁ উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য এটা একটি উৎসবও বটে। মেহেরপুর জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ই নয় এ জেলার আশে পাশের জেলাগুলো থেকে শত শত মানুষ আসেন এ উৎসবে।

বিভিন্ন রোগ ভোগের কারণে ঠাকুরের কাছে মান্নত করেন। তারা ঠাকুরের উদ্যেশ্যে পাঠা বলি দিয়ে থাকেন। অন্যান্য বছরে আমাদের পাশের দেশ ভারত থেকেও অনেক ভক্তগণ আসতেন। করোণার কারনে গত দুই বছর মেলাটি বন্ধ ছিল। এবছর আবারও শুরু করা হয়েছে।




দামুড়হুদায় বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির বাসা

দামুড়হুদায় বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির বাসা। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার সুদর্শন বাসা। এক সময় এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং আত্মনির্ভশীল হতে উৎসাহ দিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও পরিবেশে বিপর্যয়ের কারণে পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। একসময় গ্রাম-গঞ্জের তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছে এরা বাসা বেঁধে থাকতো। প্রকৃতি থেকে তাল আর খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে।

একসময় দামুড়হুদা তিন প্রজাতির বাবুই পাখি দেখা যেত। দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। তবে বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কিছু দেশি বাবুই দেখা যায়,তবে বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির প্রথম পছন্দ তাল গাছ। তাল গাছ প্রায় বিলুপ্তর সাথে সাথে দেশি বাবুই পাখি প্রায় বিলুপ্ত। বাবুইপাখি নারিকেল, সুপারি ও খেজুর পাতা, খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে বাসা বাঁধে। বাসার গঠনও বেশ জটিল, তবে আকৃতি খুব সুন্দর। বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত।

বাসা তৈরির শুরুতেই বাসায় দুটি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। অর্ধেক বাসা বাঁধার পর তার সঙ্গীকে খোঁজে। স্ত্রী বাবুইটির পছন্দ হলে মাত্র চার দিনে বাসা বাঁধার কাজ শেষ করে। বাসার নিম্নমুখী একটি গর্ত বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে নেয়। অন্যটি খোলা রাখে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে-বাইরে কাদা লাগিয়ে রাখে। ফলে প্রবল ঝড়ে বা বাতাসেও টিকে থাকে বাসা। রাতে বাসা আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে এনে রাখে। সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে পুরুষ বাবুই। স্ত্রী বাবুইকে নিজের প্রতি আকর্ষিত করতে খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফূর্তিতে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে।

সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। তাই এদের ঠোঁটের আকৃতি সহজে বীজ ভক্ষণের উপযোগী চোঙাকার। আর ঠোঁটের গোড়ার দিকটা মোটা। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।

দামুড়হুদার স্থানীয় দুই সাংবাদিক তানজীর ফয়সাল ও শমসের আলী জানান, আগে সোনালি ও সবুজ রঙের বাবুই পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যেত সন্ধ্যা ও সকালে। এ পাখি যেমন শিল্পী; তেমন ঘুম জাগানিয়া।বাবুই চমৎকার সুরে মানুষের ঘুম ভাঙাতো। এখন সে ভাবে আর বড় তাল আর নারিকেল গাছ দেখা যায় না। বাসা বাঁধার জায়গা না থাকায় এ পাখি বংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়না,বংশ রক্ষার্থে পারি জমিয়েছেন অন্যত্র। সরকারের কৃষি ও বন বিভাগের উদ্যোগে পরিবেশ ও পাখি সংরক্ষণের জন্য তাল, নারিকেল গাছ রোপণ করা জরুরি।এছাড়াও অবৈধভাবে পাখি স্বীকার করে এ পাখি বিলুপ্ত করে থাকেন।

উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা জানান,উপজেলাতে ব্যাপকভাবে তালবীজ রেপন করা হয়েছে। এসকল বীজ যখন তাল গাছে পরিনত হবে। তখন বাবুইপাখি আবাসস্থল তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।এছাড়া সমাজের সকলের উচিত জমির চারপাশে বা বাড়ির আঙ্গিনায় বেশি করে খেজুর ও নারিকেল গাছ রেপন করা। গাছগুলো রেপন করলে একদিকে যেমন আর্থিক সহায়তা অন্যদিকে শরীরের পুষ্টি চাহিদা যোগাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকবে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মশিউর রহমান দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন কৃষকরা ক্ষেতে ও বীজতলায় কীটনাশক ব্যবহার করায় বাবুই পাখি মারা যায়। বংশ রক্ষার্থে তারা এলাকা ত্যাগ করেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাবুই পাখির বংশ বিস্তারে তাল, খেজুর ও নারকেল গাছ রোপণ করতে হবে। সেই সাথে কীটনাশকের অপব্যবহার রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’




মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন কুষ্টিয়ার সন্তান

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম যোগদান করেছেন।
গতকাল সোমবার প্রথম কর্ম দিবসে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাদের সাথে মতবিনিময় করেন।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নবনিযুক্ত সচিবকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। মো: সায়েদুল ইসলাম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা এর আগে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে এ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করে।
তিনি ১৯৯১ সালে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করে সহকারী কমিশনার হিসেবে কুমিল্লা কালেক্টরে যোগদান করেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কাউন্সিলর (লেবার) হিসেবে বাংলাদেশ হাই কমিশন মালায়েশিয়াতে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন।
তিনি বিভিন্ন দেশে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মো: সায়েদুল ইসলাম ১৯৬৪ সালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী সাবিহা পারভীন বাংলাদেশ সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক।