লকডাউনে সুস্থ থাকার উপায়

মহামারি করোনাভাইরাস তাণ্ডব চালাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। দেশে দেশে চলছে লকডাউন৷ সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে বলা হচ্ছে বাসায় থাকতে৷ কিন্তু এই অবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় কী?

১) দিনের নিয়ম ঠিক রাখুন

বাসায় বসে অফিস করুন, বা ছুটিই কাটান, স্বাভাবিক নিয়ম থেকে বের হয়ে গেলে শরীর-মনে তার বাজে প্রভাব পড়তে পারে৷ ফলে শরীরের ঘড়ি ঠিক রাখার জন্য সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, গোসল করা, খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷

২) সুষম খাবার খান

এই সময়ে কেবল শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও চাঙ্গা থাকা দরকার৷ তাই শুধু সুস্বাদু নয়, বরং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম, এমন খাবার বেশি করে খান৷

৩) ঘুমের ওপর গুরুত্ব দিন

বাসার বাইরে যেতে হচ্ছে না বলেই ইচ্ছে মতো রাত জাগা বা দেরি করে ওঠা আপনাকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে৷ ফলে ঠিক সময়ে ঘুমাতে যান, ঠিক সময়ে উঠুন৷ ঘুম যাতে পর্যাপ্ত হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিন৷

৪) ব্যায়াম করুন

বাসার বাইরে বের না হওয়া মানে স্বাভাবিক হাঁটাচলাও বন্ধ হয়ে যাওয়া৷ ফলে বাসাতেই ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিন৷ প্রয়োজনে ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে নতুন কিছু যোগাসনও শিখে নিতে পারেন৷ এতে শরীর থাকবে চাঙ্গা, মন থাকবে ফুরফুরে৷

৫) বিকল্প সামাজিক যোগাযোগ

বাইরে গিয়ে সশরীরে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলেও অনলাইনেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিন৷ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমরা এমনিতেই অনেক বেশি পরস্পরের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত৷ এর পুরো সুবিধা নেয়ার সময় এখনই৷

৬) শখের সময়

অনেকের অনেক ধরনের শখ থাকে৷ কেউ বাগান করতে পছন্দ করেন, কেউ গান গাইতে, কেউ ছবি আঁকতে৷ এ সময়ে নিজেকে আরো ঝালিয়ে নিন৷ লকডাউন শেষ হতে হতে হয়তো আপনি দক্ষ শিল্পী হয়ে উঠতে পারেন৷

সূত্র- ডি ডব্লিউ।




আত্রাইয়ে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার লাশ উদ্ধার

নওগাঁর আত্রাইয়ে থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) এর মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।

শনিবার দিবাগত রাত ১০টায় উপজেলার ভরতঁতুলিয়া গ্রামের সেভেন স্টার শপিং মলের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি উপজেলার ভরতঁতুলিয়া গ্রামের নাছির উদ্দিনের ছেলে।

নিহতের পরিবার জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় আব্দুর রাজ্জাক বাড়ি থেকে মােটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে যায়। রাত ১০টায় ভরতঁতুলিয়া গ্রামের সেভেন স্টার শপিং মলের পাশে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়।

আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মােসলিম উদ্দিন বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রােববার সকাল নওগাঁ মর্গ প্রেরণ করা হয়েছে। মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন আছে। দূর্ঘটনাজনিত আঘাত বা অন্যকােন কারণ হতে পারে।

তবে ময়না তদন্তের রির্পােট পেলে প্রকৃত বিষয় জানা যাবে। ঘটনায় থানায় অপমত্যুর মামলা হয়েছে।




যেভাবে দাফন হবে করোনায় প্রথম মৃত ব্যক্তির

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তি মারা গেছেন। বুধবার বিকেলে মহাখালীতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, অতি দুঃখের সঙ্গে বলছি, করোনায় আক্রান্ত একজন মারা গেছেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ওই ব্যক্তির বয়স ছিল ৭০ বছরের ওপরে এবং তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিসহ আরো বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।

তিনি বলেন, এই রোগী একজন ইতালি ফেরত ব্যক্তির মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দশজন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন। গতকাল তাঁর অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আজ সকালে তিনি মারা গেছেন। তিনি জানান মৃত এই ব্যক্তিকে দাফন করা হবে। সূত্র- পূর্বপশ্চিম

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনায় মৃত এই ব্যক্তির দাফন হবে ‘বিশেষ প্রক্রিয়ার’ মধ্যদিয়ে। আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই প্যাকেট করে দেবেন এবং পরিবহনের ব্যবস্থাও করবে। মৃত ব্যক্তির লাশ প্যাকেট করার আগে আমরাই ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, গোসল করিয়ে দেব। এরপর কাফনের কাপড় পড়িয়ে প্যাকেট করা হবে। সেই প্যাকেট কোনও অবস্থাতেই কেউ খুলতে পারবে না। প্যাকেট খুলে আত্বীয়-স্বজন লাশের মুখ দেখার সুযোগ নেই।

ফ্লোরা বলেন, লাশ প্যাকেট করার পর তা খোলা হলে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই যেভাবে আমরা প্যাকেট করে দেবো সেভাবে আমাদের লোক দিয়ে আমাদের ব্যবস্থাপনায় কবর দেওয়া হবে।

মৃত এই ব্যক্তির জানাজায় অংশ নিতে বাধা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাভাবিক ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, একজন মৃত ব্যক্তির জন্য যে ধরনের জানাজার প্রয়োজন হয় তাতে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। লাশ সামনে রেখে জানাজা পড়া যাবে এবং তাতে অংশ নেওয়া যাবে।

আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও চারজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী, তিনজন পুরুষ। দুইজন ইতালি থেকে এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছে। এছাড়া একজন ইতালি থেকে আসা একজনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জন।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিন করতেই হবে। সেই নির্দেশনা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।




কুড়িগ্রামের ডিসিকে প্রত্যাহার করা হবে: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও সাজা দেয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ওই ঘটনার তদন্ত করিয়েছি। এতে ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাকে প্রত্যাহার করা হবে। এর পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। কর্ম অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংশ্লিষ্ট ফাইল অনুমোদন করলে ডিসিকে প্রত্যাহারের আদেশ জারি করা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ।

‘তদন্তে অনেক অনিয়ম দেখেছি। বিভাগীয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অহেতুক সেখানে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তার সত্যতা পেয়েছি; বিধায় ডিসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’-যোগ করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। সূত্র- যুগান্তর

শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে আনেন জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট। তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে সাংবাদিক আরিফের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদারের অভিযোগ, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে একদল লোক দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে ‘তুই খুব জ্বালাচ্ছিস’ বলে আরিফুলকে পেটাতে থাকে। এ সময় তাকেও গালাগাল করা হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন মিলে টেনেহিঁচড়ে আরিফকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে জামাও পরতে দেয়া হয়নি। সকালে তিনি জানতে পারেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আরেক দফা মারধরের পর সাজানো অভিযোগে আরিফুলকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কেএম তারিকুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্ব দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী রোববার সকালে জানিয়েছিলেন, বিভাগীয় প্রতিবেদনটা আমাদের কাছে আসবে। সেটি যাচাই করে একটি সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। একটা পদক্ষেপ আমরা নেব। দুপুরের পর হয়তো যে সিদ্ধান্ত নেয়ার আমরা নিতে পারব।

স্থানীয়রা জানান, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই ডিসি আরিফের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

বিসিএস ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা সুলতানা ২০১৮ সালের ৩ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলার ডিসির দায়িত্ব নেন।

এদিকে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা রোববার সাংবাদিক রিগানের জামিন মঞ্জুর করেছেন। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাদণ্ড দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও হয়েছে।




করোনা ভাইরাস থেকে পরিত্রাণের উপায়

চীনে নতুন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়ছে আতঙ্ক। গত ডিসেম্বর থেকেই এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে চীনে। এটি অনেকটা সার্স ভাইরাসের মতো মানুষের মৃত্যু ডেকে আনছে।

ভাইরাসটি নিউমোনিয়া ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং তারপর অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় সাড়া দেয় না। ভাইরাসটিতে সংক্রমণের লক্ষণ হচ্ছে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। এছাড়া জ্বর ও মাথাব্যথাও হতে পারে। এসব সমস্যা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ, বয়স্ক ও শিশুদের এই ভাইরাসে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসনালীর সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিপদ এ কারণে যে, এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। বিশেরভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো আপনা আপনি চলে যায়। চিকিৎসকরা ব্যথা বা জ্বরের ওষুধ দিয়ে উপসর্গগুলো থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারেন। গরম পানিতে গোসল গলাব্যথা বা কাশি থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হতে পারে।

এ সময় প্রচুর তরল পান করুন, বিশ্রাম নিন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান। রোগের উপসর্গগুলো যদি সাধারণ ঠান্ডার তুলনায় বেশি কিছু বলে মনে হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

নতুন করোনা ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। মার্স ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট নতুন করোনা ভাইরাসটির ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। কিন্তু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
আপাতত প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এই ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, সবসময় সাবান দিয়ে হাতে ধোয়া; অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে।

সচেতন থাকাটাই মূল বিষয়। হাঁচি ও কাশি দেওয়ার সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন। বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। পোষা প্রাণি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। অনেক সময় এটি মানুষের জন্যও প্রাণঘাতী রোগের কারণ হতে পারে।

মেপ্র/আরপি




বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন জন

বাংলাদেশে প্রথমবারের মত তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

আক্রান্তদের মধ্যে দুজন পুরুষ, একজন নারী; তিনজনই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে দুজন ইতালির দুটি শহর থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে একজনের সংস্পর্শে আসায় পরিবারের আরেক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা রোববার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, “তাদের সবার অবস্থাই স্থিতিশীল। তিনজনকেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

ওই তিনজনের সংক্রমণের বিষয়ে শনিবার নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, “দুজন দেশে আসার পর তাদের উপসর্গ দেখা দেয়। আমাদের হটলাইনে ফোন দিলে আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাই। সেখানে দুজনের পজেটিভ আসে।

“তাদের কন্টাক্টে থাকা চারজনকে পরীক্ষা করেছি। একজন পজেটিভ। বাকিরা নেগেটিভ এসেছে।”

নভেল করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

নভেল করোনাভাইরাস এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণ এড়াতে চাইলে ঘন ঘন হাত ধোয়া ভালো। সেই সঙ্গে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীও নিরাপদ রাখতে হবে।

গত ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, যা ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ১০০ দেশ ও অঞ্চলে।

বিশ্বজুড়ে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি মানুষ এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে; মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৫ জনের।

এর আগে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইতালিতে সাতজন বাংলাদেশি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম কারও মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়লো।

মেপ্র/আরপি




গাংনীর নাজমুলের সেরা সাংবাদিকতা সম্মাননা পুরুষ্কার লাভ

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন মাদক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার পেয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল সাঈদ। দুপুরে তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির মাদক বিরোধী কার্যক্রমের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার হাতে ক্রেষ্ট, সনদ ও আর্থিক সম্মানার চেক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জান খান।

১৯৯০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত মাদক বিরোধী ও সচেতনতামূলক রিপোর্ট আহ্বান করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। এর মধ্যে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাজমুল সাঈদের দুটি বিষয়ের উপর মোট ছটি প্রতিবেদন বিচারকদের নজরকাড়ে এবং তাকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করেন।

২০১৮ সালে দেশের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের উত্থান, ভবিষ্যত অগ্রযাত্রা, সীমাবদ্ধতা ও নানা অনিয়ম নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনে চার পর্বের রিপোর্ট প্রচারিত হয়।

এরপরই যমুনা টেলিভিশনে চলে আসেন এ রিপোর্টার। এর পরে কাজ করেন মাদকাসক্ত চালকদের নিয়ে। তিনি অনুসন্ধান করে বের করেন চালকদের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তিনি তার প্রতিবেদনে দেখান, কিভাবে চালকরা মাদক গ্রহণ করে চালকের সিটে বসেন। এই রিপোর্ট দুটি ২০১৮ সালে প্রথম আলো মাদক বিরোধী সেরা প্রতিবেদন পুরস্কার অর্জন করেন।

প্রতিক্রিয়ায় নাজমুল সাঈদ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের বড় ধরণের ভুমিকা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এসব মাদকবিরোধী প্রতিবেদন করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে এ ধরণের প্রতিবেদন আরও করা হবে বলে জানান তিনি।

২০০৬ সালে সাংবাদিকতা শুরু করা নাজমুল সাঈদ দৈনিক আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতি, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলামেইল টোয়েন্টিফোর ডট কম, দ্য রিপোর্ট২৪ ডটকম, বৈশাখী টেলিভিশনে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি যমুনা টেলিভিশনে ক্রাইম বিভাগে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন।

মেপ্র/আরপি




মেহেরপুরের ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

মেহেরপুরের তিনটি উপজেলার ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। দেশপ্রেম, ভাষা প্রেম, নাগরিক চেতনা গড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা একুশে ফ্রেব্রুয়ারির চেতনা থেকে দুরে থেকে যাচ্ছে।

একুশ পেরোনোর ৬৮ বছর পরেও সেই অব্যক্ত ক্ষুধা থেকেই যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে জেলা প্রশাসন থেকে আগামি বছর জেলার সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাধ্যতা মুলকভাবে শহীদ মিনার বাস্তবায়ন করার কথা জানানো হয়।

মেহেরপুর জেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে মাধ্যমিক ও কলেজ রয়েছে ১৬৮টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩০৮টি এবং কিন্ডার গার্টেন রয়েছে ১৬৯টি। সব মিলিয়ে ৬৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ জেলায়। এর মধ্যে মাত্র ৪৯টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। প্রাইভেট ও কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠান গুলোর একটিতেও নাই শহীদ মিনার।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরের তিনটি উপজেলায় নিম্ম মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, কলেজে মাদ্রাসা, ভোকেশনাল ও স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে ১৬৮টি।

এর মধ্যে মেহেরপুর সদর উপজেলায় নিম্ম মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৯টি, কলেজ রয়েছে ৪টি, মাদ্রাসা রয়েছে ১১টি, ভোকেশনাল ১টি, স্কুল এন্ড কলেজ ৩টি। এর মধ্যে ১২টি শহীদ মিনার রয়েছে।

গাংনী উপজেলায় নিম্ম মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫টি, কলেজ রয়েছে ৮টি, মাদ্রাসা রয়েছে ১০টি, ভোকেশনাল ১টি, স্কুল এন্ড কলেজ ৩টি। এর মধ্যে ২০টিতে শহীদ মিনার রয়েছে।

মুজিবনগর উপজেলায় নিম্ম মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৬টি, কলেজ রয়েছে ২টি, মাদ্রাসা রয়েছে ৪টি, ভোকেশনাল ১টি। এর মধ্যে ১৩টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।

এদিকে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তাদের চিত্র আরো করুণ। জেলার তিন উপজেলায় ৩০৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ১০৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২টিতে, গাংনীতে ১৬১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১টিতে এবং মুজিবনগর উপজেলায়৩৮টির মধ্যে ১টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে।

জেলা জাসদের সভাপতি ওমর আলী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার না থাকা অত্যন্ত দু:খজনক ও লজ্জাস্কর। বর্তমান সরকারের দ্রুত এ দিকে নজর দেওয়া উচিত।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহা. ফজলে রহমান বলেন, ৩০৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। বিদ্যালয় গুলোতে ভবন নির্মানের প্রকল্পে শহীদ মিনার নির্মান ট্যাগ করে দিলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মান করা সম্ভব ।
জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আমান উদ্দিন মন্ডল বলেন, জেলার এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নাই সেটি বোধগম্য নয়। আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন মহলকে জানানো হবে।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি বলেন, শতকরা ৯০ শতাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই এটি খুবই দু:খজনক। ইতিপূর্বে বিষয়টি অনুধাবন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে জেলা পরিষদ থেকে বেশ কিছ’ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরি জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদে প্রকৌশলী না থাকায় সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামি বছরের ২১ শে ফেব্রুয়ারির আগেই জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে তোলা হবে।




দশ লক্ষ টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতার প্রতীক ফুলের চাহিদা কোন কালেই কম ছিল না। ফুলের প্রতি মানুষের ভলোবাসা চিরন্তর। যে কোন উৎসব বা দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা থাকে ব্যাপক।

এবার ভালোবাসা দিবসে মেহেরপুরে ফুলের চাহিদা বেশ চোখে পড়ার মত। সেই চাহিদা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে বসন্ত উৎসব। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ একই দিনে হওয়ায় উৎসবের আমেজটা একটু বেশি।

এবছর মেহেরপুরে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রির আশা করছে ব্যবসায়ীরা। তবে ছুটির দিন থাকায় একটু হতাশাও প্রকাশ করেছে তারা। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণকে কেন্দ্র করে জেলায় গড়ে উঠেছে স্থায়ী অস্থায়ী প্রায় অর্ধশত ফুলের দোকান।

গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, মল্লিকা, জারবেরা ইত্যাদি নানা রকম ফুলের সমাহার এইসব দোকান গুলোতে।

স্বার্নালী ফুল ঘরের মালিক রাশেদুজ্জামান বলেন, এবার ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উৎসব একই দিনে হওয়ায় ব্যাপক ফুলের জোগান দিয়েছি। আশা করছি লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে। এবছর ফুলের দাম একটু বেশি। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় একটু একটু ভয়ে ভয়ে আছি, দেখা যায় শেষ পর্যন্ত কি হয়।

টুটুল ফুল ঘরের মালিক বলেন, গত বছর প্রায় একলক্ষ টাকার ফুল বিক্রি করেছিলাম এ বছর হয়তো হবে না। স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়েরাই বেশি ফুল কেনে। শুক্রবার ছুটির দিনে এইসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, তাই এবছর ফুল হয়তো বেশি বিক্রি হবে না।

মুজিবনগর থেকে শাকিল রেজা জানান, ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে ভিন্নরুপে সেজেছে মুজিবনগর। সেই সাথে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ফুলের দোকান। বাহারি সব ফুলে সজ্জিত এইসব দোকান গুলো। মেহেরপুরের সব চেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় এখানে লোকের সমাগম হবে প্রচুর। সেই লক্ষে শুধু মুজিবনগরেই ২ লক্ষ টাকার ফুল বিক্রি হওয়ার টার্গেট করছে ব্যবসায়ীরা।

গাংনী থেকে শাহিন সিদ্দীকি জানান, গাংনীতে ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব কে কেন্দ্র করে বেশ উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত তরুন-তরুনীদের মাঝে আমেজটা বেশি। প্রিয় মানুষটাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে তারা। সেই লক্ষে ফুল বিক্রেতারাও বাহারি সব ফুলের সমাহার ঘটিয়েছে দোকানিরা। রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ফুলের দোকান।

মেপ্র/আরপি




‘খাস আদায়’ করছেন দুই যুব মহিলা লীগ নেত্রী

মেহেরপুরের মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের পিকনিক কর্ণার থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। গত দুই বছর ধরে বেসরকারী ব্যক্তিদের দিয়ে খাস কালেকশনের দায়িত্ব দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটছে।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে টেন্ডার করা হলেও অজ্ঞাত কারণে টেন্ডার ছাড়াই পিকনিক কর্ণারটি লিজ দেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে কিছু লোককে সুবিধা পাইয়ে দিতে উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী আকলিমা খাতুন ও সাধারণ সম্পাদিকা তহমিনা খাতুনকে এই লিজ দেওয়া হয়েছে। তাদের দুইজনের নেতৃত্বে এগারো জন খাস কালেকশনের দায়িত্বে আছেন।

গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বাস প্রতি চারশ টাকা, মিনিবাস দুইশো টাকা, নছিমন-করিমন ও অটো ৫০ টাকা এবং মোটরসাইকেল প্রতি ১০ টাকা করে খাস আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ গাড়ি প্রতি চুলার নাম করে অতিরিক্ত একশো টাকা আদায় করা হচ্ছে যা রিসিপ্টে উল্লেখ নাই। পিকনিকের এই মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে একশ টি গাড়ি এই পিকনিক কর্ণারে আসছে। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাস জুড়ে গড়ে একশোটি গাড়ি আসে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান। তবে অন্যান্য মাসগুলোতেও একশ নাহলেও প্রতিদিনই অনেক গাড়ি আসে।

ফলে প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ মাসে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা আদায় হয়। দুই বছর আগে ওই পিকনিক কর্ণারটি ভ্যাটসহ ২৭ লাখ টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছিল। অথচ গত বছর খাস আদায় করে ১১ লাখ টাকার মত পেয়েছিল সরকারি রাজস্ব খাতে। এবছরও খাস আদায় করা হচ্ছে। ফলে গত দুই বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার । অপরদিকে, গুটিকতক রাজনৈতিক নেতা যারা লিজ নিয়েছেন তারা পকেটস্থ করছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

যশোরের খাজুরা বাজার থেকে পিকনিকে আসা মিহির ঘোষ ও আলকামা বিশ^াস জানান, গাড়ি প্রতি পাঁচশ টাকা নেওয়া হলেও রশিদ দেওয়া হচ্চে চারশ টাকার। এছাড়া কোন কথা বলতে গেলে তারা খুব খারাপ আচরণ দেখাচ্ছে।

নাটোরের কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম লিটনের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের বার্ষিক শিক্ষা সফর হিসেবে দুটি গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন মুজিবনগরে। তিনি জানান, দেশের অন্যান্য পর্যটন স্থানের মত মুজিবনগর এক করলে হবে না। মুজিবনগর আমাদের চেতনার জায়গা। এই মুজিবনগরে আসতে পথে পথে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়েছে। মেহেরপুর জেলায় প্রবেশ করেই এই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। মুজিবনগওে পৌছাতে গিয়ে প্রায় নয়শ থেকে এক হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এটা খুবই দু:খজনক।

মুজিবনগর পিকনিক কর্ণারের একটি দোকানের মালিক ইছাহাক মল্লিক জানান, মুজিবনগরে আসা পর্যটকদের কাছে থেকে কোন টাকা নেওয়ায় উচিৎ নয়। এটা আমাদের স্বাধীনতার জায়গা। আমি ১৯৯৬ সাল থেকে এখানে ব্যবসা করি। আগে একশ টাকা নেওয়া হত। এখন চারশ থেকে পাঁচশ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, পিকনিক কর্ণারের আম বাগানে গাছ রয়েছে প্রায় ৩শ টি। হায়াত আলী নামের এক ব্যক্তির কাছে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকায় বাগানটি বিক্রি করা হয়েছে। সৌচাগারটিও ফ্রি লিজ ফ্রি থাকলেও ৩০ হাজার টাকা দিয়ে লিজ দেওয়া হয়েছে।

মুজিবনগরনাজমুল ইসলাম নামের অন্য দোকান দার জানান, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি গাড়ি আসে পিকনিক কর্ণারে। সে হিেেসব চারশ টাকা করে গাড়ি প্রতি হলে দুই মাসে আয় হয় ২৪ লাখ টাকা। এছাড়াও ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কমবেশি গাড়ি আসে এই পিকনিক কর্ণারে।

মৌখিকভাবে খাস আদায়ের লিজ গ্রহিতা মুজিবনগর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী তকলিমা খাতুন ও সাধারণ সম্পাদিকা তহিমনা খাতুন জানান, ইউএনও স্যার আমাদের শ্রমিক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা টাকা তুলে উনার কাছে জমা দিব। উনি আমাদের কত কি দিবেন আমরা জানি না। আমরা এগারো জন এই খাস আদায়ের দায়িত্বে রয়েছি। আজ (গত শনিবার) সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ৮৪টি গাড়ির খাস আদায় করেছি।

মেহেরপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে তিনি কম মূল্য দেওয়ায় টেন্ডার পাননি। তার বিপরীতে ২৭ লক্ষ টাকা ডাক দিয়ে আরিফুল এনাম বকুল টেন্ডার পেয়েছিলেন। কিন্তু দুই বছর টেন্ডারের জন্য তাকে কিছু জানানোও হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা জানান, কিছু জনকে এই সুবিধা দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে কৌশলে তাদের দায়িত্ব দিয়ে খাস আদায় করাচ্ছেন। এতে সরকার প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উসমান গনি বলেন, কাঙ্খিত মুল্য না পাওয়ায় ডিসি স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক অভিজ্ঞ কিছু লোককে দায়িত্ব দিয়ে খাস আদায় করা হচ্ছে।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি বলেন, মুজিবনগর স্মৃতি কমেপ্লক্স দেখভালের জন্য কোন অর্গানোগ্রাম নাই, কোন লোকবলও নাই। তিন বার টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় নিয়মানুযায়ী খাস কালেকশন করা হচ্ছে। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে পূর্বের অভিজ্ঞতা আছে এমন কয়েকজনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বাগান ও সৌচাগার লিজের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

মেপ্র/ইএম