দখল আর দুষণে ঝিনাইদহের নদ-নদীগুলো এখন মরা খাল

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। জেলার ৬ টি উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ১২ টি নদ-নদী। কিন্তু খননের অভাব আর দখলদারদের কারণে নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে।

এখন আর যৌবন নেই নদ নদীগুলোতে। পাওয়া যায়না দেশীয় প্রজাতির মাছ। শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকেনা। সেখানে চাষ করা হয় ধান, পাট, সরিষাসহ নানা ফসলের।

এই সুযোগে নদীর পাড়ের জায়গা দখল করতে ব্যস্ত দখলদাররা। ঝিনাইদহে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে গেছে নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, বুড়ী ও ফটকী নদ-নদী। যার মোট আয়তন ১ হাজার ৬’শ ৪১ দশমিক ৭৫ হেক্টর।

ঝিনাইদহ শহরের বুকচিরে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী। বিভিন্ন স্থানে নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ড্রেনের ময়লা আবর্জনা গিয়ে পড়ছে নদীতে।

এসব কারণে একদিকে যেমন কমছে নদীর প্রশস্ততা, সেই সঙ্গে মাছসহ জলজ প্রাণী ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। তাই দ্রুত সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি স্থানীয়দের।

ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চন নগর এলাকার ষাটোর্ধ রাশেদ মালিতা বলেন, ছোটকালে দেখেছি নবগঙ্গা নদীতে বড় বড় নৌকা আসত। ধোপাঘাটা ব্রীজ এলাকায় নৌকা নোঙর করে ব্যবসায়ীরা ঝিনাইদহ শহরে আসতো।

কিন্ত সেই নদীতে এখন ডিঙ্গি নৌকাও চলে না। বর্ষা মৌসুমে একটু পানি থাকলেও শীত মৌসুমে পানি থাকে না। হেটেই নদী পার হওয়া যায়।

একই এলাকার পার্থ মল্লিক নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, দখল হওয়া জায়গা দখলমুক্ত করে নদী খনন করা হলে নদীগুলো তার নাব্যতা ফিরে পেত। এ জন্য জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ঝিনাইদহ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও নদী রক্ষা কমিটির নেতা মিজানুর রহমান বলেন, জেলার সবগুলো নদীই এখন দখলদারদের দখলে।

এ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য আমরা প্রশাসনকে বার বার তাগাদা দিচ্ছি। তাদের সাথে মিটিং করছি, স্মারকলিপি দিচ্ছি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে আজ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন প্রদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। সারাদেশের ন্যায় ঝিনাইদহে নদীগুলো দখলমুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, নবগঙ্গা নদীর উৎসমুখ চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে আসা এ নদীটির মুখ বন্ধ হয়ে আছে বহুবছর ধরে।

এবার চুয়াডাঙ্গা জেলাকে অনুরোধ করা হয়েছে উৎস্যমুখ খনন করার জন্য। সেখানকার জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন উৎসমুখ খনন করার জন্য মন্ত্রনালয়ে প্রস্তবনা পাঠিয়েছেন।

সেখানে খনন করা হলে চিত্রা, বেগবতি আর নবগঙ্গা কিছুটা হলেও পানি পাবে। এছাড়াও যেসব স্থানে অবৈধ দখলদার রয়েছে সেখানে দ্রুতই অভিযান চালিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।




২২ জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট

আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট (ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট) বিতরণ শুরু হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সকল প্রস্তুতি ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের (ডিআইপি) মহাপরিচালক (ডিআইজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ আজ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আগামী ২২ জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট বিতরণ উদ্বোধন করতে কাজ করছি।

আগামী ২২ জানুয়ারি এ বিষয়ে নগরীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করবেন বলে তিনি আশা করছেন।

ডিআইজি বলেন, ডিআইপি প্রাথমিকভাবে আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ি এবং উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সবর্ত্র ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে।

তিনি বলেন, বিখ্যাত জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস জিএমবিএইস দেশে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট নিয়ে কাজ করছে।

তিনি আরো জানান, ই-পাসপোর্টের সূচনা দিয়ে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেন (আইসিএও)’র মতে বিশ্বের একশ’টিরও বেশি দেশ বর্তমানে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। পাসপোর্ট বুকলেটে একটি ইলেক্ট্রনিক চিপ ব্যবহারের মাধ্যমে চিরাচরিত ননইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের চেয়ে ইলেক্ট্রনিক পাস পোর্ট অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

এতে পাসপোর্টের দুটি পেজে দৃশ্যমান বায়োগ্রাফিকেল তথ্য ভাণ্ডার ও একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা ফিচার থাকে। ডিজিটাল ফিচার হচ্ছে কোন দেশের সুনিদিষ্ট ডিজিটাল স্বাক্ষর। এই ডিজিটাল স্বাক্ষরগুলো প্রতিটি দেশে একক এবং স্ব স্ব সার্টিফিকেটের মাধ্যমে এটি যাচাই করা যাবে।

প্রকল্প তথ্য অনুযায়ী, “বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু এবং অটোমেটিক বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট” প্রজেক্টটি ৪,৫৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব তহবিলে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পযর্ন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

দশ বছরে মোট ৩০ মিলিয়ন পাস পোর্ট সরবরাহ করা হবে। এই ই-পাসপোর্ট ইস্যু করার মাধ্যমে ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতার সমস্ত প্রক্রিয়াই অনলাইনে সম্পন্ন হবে।

তথ্যসূত্র মতে, দুই মিলিয়ন পাস পোর্ট তৈরি হবে জামার্নিতে। ফলে যারা আগে আবেদন করবেন, তারা জামার্নীর তৈরি পাস পোর্ট পাবেন। ই-পাস পোর্টের মেয়াদ হবে ৫ থেকে ১০ বছর।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের জন্য ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডিআইপি এবং ভেরিডসের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।




পাওয়া যাচ্ছে ভিভো এসওয়ান প্রো

ভারতে ভিভো তাদের মিড রেঞ্জ ফোন Vivo S1 Pro ফোনটি ভারতে লঞ্চ করেছে এই ফোনে আছে স্ন্যাপড্র্যাগন 665 SoC। আর এই ফোনটি শাওমি Mi A3, Oppo A9 2020 র সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। আর এই ফোনে আছে 6.38 ইঞ্চির ডিসপ্লে আর সঙ্গে আছে ইনডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সার। আর এই ফোনটি আপনারা মিস্টিক ব্ল্যাক, জেজি ব্লু আর ড্রিমি হোয়াইট কালার অপশানে পাবেন।

VIVO S1 PRO ফোনের স্পেক্স আর ফিচার্স

Vivo S1 Pro ফোনের ফিচার যদি আমরা দেখি তবে দেখা যাবে যে এই ফোনে আছে 6.38 ইঞ্চির সুপার AMOLED ডিসপ্লে আর এটি ফুল HD+ রেজিলিউশানের ফণ। আর এই ফোনে আপনারা পাবেন কোয়াল্কম স্ন্যাপড্র্যাগন 665 SoC। ফোনে আছে 8GB র্যাম আর এর সঙ্গে আছে 128GB র ইন্টারনাল স্টোরেজ। আর এইফোনে আপনারা পাবেন ফানটাচ OS 9.2। আর এই ফোনে আছে অ্যান্ড্রয়েড 9 নির্ভর 4500mAh য়ের ব্যাটারি। আর এই ফোনটিতে আপনারা 18W ডুয়াল ইঞ্জিন ফাস্ট চার্জ প্রযুক্তি পাবেন। এটি USB Type C পোর্টের সঙ্গে এসেছে।

আর এর সঙ্গে Vivo S1 Pro ফোনে আছে 48MP র মেন সেন্সার আর এই সঙ্গে ফোনে পাবেন 8Mp র ক্যামেরা আর 2MP র দুটি ক্যামেরা। আর এই ফোনের ফ্রন্টে পাবেন 32MP র ফ্রন্ট ক্যামেরা।

VIVO S1 PRO ফোনটা পাওয়া যাচ্ছে
Vivo S1 Pro ফোনটি একটি ভেরিয়েন্টে এসেছে এই ফোনে 8GB র‌্যামের সঙ্গে 128GB স্টোরেজ ভেরিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে। এর দাম 19,990 টাকা। আর এই ফোনটি তিনটি রঙে পাওয়া যাবে। আর এই ফোনটি 4 জানুয়ারি থেকে ভিভো ইন্ডিয়ার ই স্টোর, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, ফ্লিপকার্ট অন্য অন্য ইকমার্স স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে।




মাদকের অভয়ারণ্য তেঁতুলবাড়ীয়ার বিভিন্ন সীমান্ত (পর্ব-১)

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম মাদক ব্যবসার নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তেঁতুলবাড়িয়া, খাস মহল, রংমহল, সহড়াতলা, কল্যানপুর, নওদাপাড়া, পলাশীপাড়া, মথুরাপুর, করমদি গ্রামের বেশ কিছু পরিবারের সদস্যরা জড়িয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসার সাথে। গাঁজা, ফেন্সিডিল, মদ সহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য ভারত থেকে এনে ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট কমিশন দিয়ে ভারত থেকে মাদক দ্রব্য আনা হয়। প্রতি ১০০ বোতল ফেন্সিডিল আনতে কমিশন হিসেবে দিতে হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। প্রত্যেক ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা নিয়ে ম্যানেজ করা হয় কিছু প্রশাসনের লোকদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সহড়াতলা গ্রামের আজের আলীর ছেলে লাইনম্যান বাদশা ও তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত আকেববার আলীর ছেলে এলাকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা মোখলেছুর রহমান মোখলেছ ঐ এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এলাকার চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবেও পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে মোখলেছ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানান, আমি একজন রাজনৈতিক নেতা। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ উঠেছে সেটা সঠিক না।

এছাড়াও এক বা একাধিক মাদক মামলার পলাতক আসামী এখনো চুটিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, করমদি গ্রামের আফেল উদ্দিন এর ছেলে আব্দুল হান্নান। যার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা ও তিনটি মাদক মামলা রয়েছে। পুলিশের ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

সহড়াতলার হারুন-অর-রশিদ এর ছেলে মাদান। ২০১৬ সালে ১১২ পিচ ভারতীয় শাড়ি সহ মাদান আটক হয়। শাড়ী চোরাচালান এর দায়ে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

সহড়াতলা গ্রামের আজের আলীর ছেলে বাদশা। সে লাইনম্যান হিসেবে কাজ করে। ২০১২ সালে ১২ বোতল ফেন্সিডিলসহ পুলিশের হাতে ধরা খায়। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসার মুল নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

কল্যানপুর গ্রামের সামসুল এর ছেলে শরিফুল। যার বিরুদ্ধে গাংনী থানায় ২টি মাদক মামলা আছে। ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখে ৫৯ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক হয়। একই সাথে নজরুল এর ছেলে রুবেলও আটক হয়।

নওদাপাড়ার মেহের শেখ এর হামিদুল। ২০১২ সালের মারামারি মামলার আসামী। এখন সে ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী।

মথুরাপুরের রবিউল এর ছেলে রজব। এবছর মার্চ মাসের ৭ তারিখে ১৮ বোতল ফেন্সিডিল সহ আটক হয়। তার বিরুদ্ধে গাংনী থানায় ২ টি মাদক মামলা আছে।

মৃত ওয়াজিল শেখ এর ছেলে কালু। তার বিরুদ্ধে ২ টি মাদক মামলা আছে। পলাশীপাড়ার গোলাম রসুল ওরফে ফড়ুর ছেলে সেলিম। ২০১০ সালে স্বর্ন চুরি মামলায় আটক হয়।নখাসমহলের মৃত চাঁন্দর ছেলে মফিজ। তার বিরুদ্ধে ৩টি মাদক সহ গাংনী থানায় ৪টি মামলা আছে।

এছাড়াও সহড়াতলার আতর আলীর ছেলে আসাদুল, মথুরাপুরের মৃত ইব্রাহীম এর ছেলে সাইদ, মৃত কামাল খাঁ এর ছেলে আশরাফ, তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের জানালির ছেলে মোসা, মনিরুল ফকির এর স্ত্রী রাহিমা, সামেক উদ্দিন এর ছেলে রহিম।

বেশ কিছু চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে হারান শেখ এর ছেলে লোকমান। চলতি বছর জুলাই মাসে ৫০ বোতল ফেন্সিডিল সহ আটক হয়। তার বিরুদ্ধে গাংনী থানায় মাদক মামলা আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি জানান, এলাকার প্রভাবশালী নেতা মখলেছ ও লাইনম্যান বাদশার নেতৃত্বে চলছে মাদক ব্যাবসা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরাসরি ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসছে। রাতে ভারত থেকে কাঁটাতারের বেড়া পার করে সকালের ভিতর বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌছে দেওয়া হয়। বড় বড় চালান আসলে সেগুলো বিভিন্ন যান বাহনে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ি ২০১৯ সালের শুধু ডিসেম্বর মাসেই ১৬ জন মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মাদক দ্রব্যসহ আটক করা হয়েছে। সেই সাথে মাদক সেবনের অপরাধে ২ জনকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

এরপরও কিন্তু থেমে যায়নি মাদক ব্যবসা। মামলায় আটক করা হলেও আদালত থেকে জােিন মুক্ত হয়ে যায় আসামীরা। ফিরে এসে আবার শুরু মাদক ব্যবসা। কেনইবা থামানো যাচ্ছে না মাদক ব্যবসাকে, দুর্বলতা কোথায়, এ ব্যর্থতার দায় কি শুধু প্রশাসনের নাকি অন্য কারও, এমন প্রশ্ন এলাকার সচেতন মহলের?

সহড়াতলা বিজিবি ক্যাস্প কমান্ডার খায়রুজ্জামান বলেন, আমি সবে মাত্র এখানে যোগদান করেছি। তারপরও নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আপনারা জানেন ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার মাদক দ্রব্য আটক করেছি। যারা এর সাথে জড়িত তাদেরকেও আটক করে আইনের আওতায় হবে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুর রহমান বলেন, মাদক এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করা হয়েছে। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক নির্মুলে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে গাংনী থানা পুলিশ এবং সে মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি রবিউল ইসলাম জানান, আমরা মাদক মুক্ত মেহেরপুর গড়তে বদ্ধ পরিকর। আপনারা জানেন প্রতিনিয়ত জেলা গোয়েন্দা পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। ইতি মধ্যে মাদক সম্রাটদের আটক করে তাদের চালান দেওয়া হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। (চলবে)

-বিশেষ প্রতিনিধি




গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি ৩৩ জাত নিয়ে আশাবাদ বিশেষজ্ঞদের

গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। ছত্রাকটির বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনাপরথি অরাইজি (পাইরিকুলারিয়া অরাইজি) প্যাথোটাইপ ট্রিটিকাম। গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে এ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

তবে এ মৌসুমে গমে শীষ বের না হওয়ায় এখনো এখনো রোগের সংক্রমণ বোঝা যায়নি। এ রোগের কারণে গমের ফলন বিপর্যয় হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ফলন একেবারেই কমে যায়।

মেহেরপুরসহ দেশের ৬টি জেলায় গত চার বছর ধরে এ রোগটি দেখা দিয়েছে। পরপর দুই বছর এ রোগের সংক্রমন থেকে মুক্তিপেতে সরকারি ভাবে গম চাষের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তারপরও কিছু চাষী গম চাষ করায় ব্লাষ্ট রোগটি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্লাষ্ট রোগটি নির্মূলে এবং এর প্রতিরোধী গমের জাত নির্নয়ে গত ৩তন বছর ধরে মেহেরপুরে গবেষনা চলছে।

আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমিট, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটউট, বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইন্সটিটউট, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গত তিন বছর ধরে মেহেরপুরে ব্লাষ্ট নির্মূল ও প্রতিরোধী জাত তৈরিতে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বারি ৩৩ জাত সহ কয়েকটি প্রতিরোধী জাতও উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

রোগের ইতিহাস ও লক্ষণ

১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে দেখা যায়। পরে ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা এসব দেশে এর বিস্তার হয়। বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর গমের জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয় এবং ফলন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, যা মোট গম আবাদি জমির প্রায় ৩ শতাংশ। তবে মেহেরপুরের গমের ব্লাস্ট রোগের কারণে প্রকৃত ক্ষতির মাত্রা ছিল আরো ভয়াবহ। সরকারিভাবে এই রোগটি প্রথম সনাক্ত করা হয় মেহেরপুরের মুজিবনগরে।

এ রোগের কারণে আক্রান্ত গমের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কমে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো ক্ষেতের ফসল প্রায় সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্লাস্ট আক্রান্ত গম খেতের কোনো কোনো স্থানে শীষ সাদা হয়ে যায় এবং অনুকূল আবহাওয়ায় তা অতি দ্রুত সমগ্র খেতে ছড়িয়ে পড়ে। গমের কিছু শীষের উপরিভাগ শুকিয়ে সাদাটে বর্ণ ধারণ করে যা সহজেই নিম্নভাগের সবুজ ও সুস্থ অংশ থেকে আলাদা করা যায়।

আবার কোনো কোনো শীষের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই শুকিয়ে সাদাটে হয়ে যায়। এটি গমের ব্লাস্ট রোগের আদর্শ লক্ষণ। প্রধানত গমের শীষে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। কৃষি বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, আক্রান্ত বীজ এবং বাতাসের মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়। বৃষ্টির কারণে গমের শীষ ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা ভেজা থাকলে এবং তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা এর বেশি হলে এ রোগের সংক্রমণ হয় এবং রোগের জীবাণু দ্রুত বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রাদর্ভাবের জন্যে আবহাওয়া সব সময় সুনির্দিষ্ট কোন নিয়মের আওতায় পড়েনা।

২০১৬ সালে গমের ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার ফলে, মেহেরপুরের বারাদি বিএডিসি খামার ও চিতলা বিএডিসি খামারের সকল গমসহ এবং চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ খামারের ২১০ হেক্টর গম আক্রান্ত গম বীজ খেতের সমস্ত জমি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সেইসাথে সরকারিভাবে গম আক্রান্ত সকল জেলাতে ২০১৭ সালে গম চাষ না করার জন্যে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং ২০১৮ সালের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। এরপরও কৃষকরা তাদের জমিতে গম চাষ করায় পুনরায় মেহেরপুরে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়।

গবেষণা

গমের ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার পর থেকে, ২০১৭ সাল হতে মেহেরপুর জেলাকে ব্লাস্ট রোগের ‘হটস্পট’ বিবেচনা করে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্র বা সিমিট এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি গবেষণা ফাউণ্ডেশন (কেজিএফ)।

দেশি বিদেশি বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গমের ব্লাস্ট নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটউট ,বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইন্সটিটউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ব বিভাগ এবং গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ব্লাস্ট নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে এবং আক্রান্ত জমিতেও এ গবেষনা পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিগত ২০১৮ সালে মেহেরপুর জেলার সদর উপজেলার দিঘিরপাড়া এলাকায় কৃষকের জমি লিজ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউট, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট।

মেহেরপুর সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গার কৃষকের জমিতে গবেষণা পরিচালনা করেন যৌথভাবে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ব বিভাগ এবং সদর উপজেলার উজলপুরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

এসব গবেষণার নেতৃত্ব দেন উদ্ভিদ রোগতত্ব গবেষক প্রফেসর ড. বাহাদুর মিয়া, প্রফেসর ড. তোফাজ্জেল হোসেন, প্রফেসর ড. আলী হোসেন, ড. নরেশ দেব বর্মা, ড. পরিতোষ মালাকার।

এছাড়াও ব্রিটিশ রয়েল সোসাইটি ফেলো প্রফেসর ড. নিকোলাস ট্যালবোট, প্রফেসর ড. সোফিয়ান কামাউন, ড. মোরিশিও, ড. পবন সিং, ড. টি পি তেওয়ারি নানাভাবে এসব গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

এ গবেষনা দলকে সহায়তা করছেন এবং মুখ্য ভুমিকা পালন করছেন মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কিটতত্ত্ববিদ ড. আখতারুজ্জামান।

একটি টিম চলতি বছরও মেহেরপুর সদর উপজেলার ২টি এবং গাংনী উপজেলায় ১টি স্থানে গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।

চাষীদের কথা

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুল পুর গ্রামের গম চাষী মসলেম উদ্দিন জানান, গম চাষ না করলে খাবার সংকটে পড়তে হয়। সে কারণে গম চাষ করতেই হয়। গম চাষ বন্ধ না করে কিভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে সরকারকে জোর দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে ব্লাস্ট রোগের কারনে গমে কোন ফলন হয নি। ২০১৮ সালেও কিছুটা আক্রান্ত হয়। এবছরও গমে চাষ করেছি । এখনো বলা যাচ্ছেনা কি হবে।

ঝাউবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির জানান, গমে ব্লাস্ট রোগের কারণে গত বছর অর্ধেক ফলন হয়েছে। এবার প্রায় দেড় বিঘা জমিতে গমের চাষ করা হয়েছে। গমের চাষ না করলে আমাদের মত চাষীদের বাজার থেকে গম কিনে সংসার চালানো সম্ভব না। দ্রুত এর সমাধান বের করতে হবে।

কৃষি কর্মকর্তার কথা:

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, গবেষণা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে বছরব্যাপী গমের ব্লাস্ট বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন কিন্তু গ্রীণ হাউজ ফ্যাসিলিটিজ না থাকার কারণে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা পরিচালনা করবার জন্যে পুরো একটা বছর অপেক্ষা করতে হয়।

তিনি জানান, প্রাপ্ত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটউট ইতোমধ্যে ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি গম ৩৩ নামক একটা জাত উদ্ভাবন করেছেন এবং বোরলগ ১০০ নামে আরেকটি ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত অবমুক্তির পর্যায়ে রয়েছে। সিমিট এর গবেষণা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে পরীক্ষিত প্রায় ৫হাজার গমের জাত থেকে আরো কিছু ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত পাবার আশা করা হচ্ছে।

ড. আখতারুজ্জামান জানান, গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা করা না গেলেও প্রতিরোধক হিসেবে ভাল কীটনাশক উৎপাদক ও আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের ঞবনঁপড়হধুড়ষব ৫০%+ঞৎরভষড়ীুংঃৎড়নরহ ২৫% কম্বিনেশনের ছত্রাশনাশক বেশ ভালভাবে কাজ করছে বলে গবেষকেরা নিশ্চিত করেছেন।

ওদিকে সিমিটের তত্বাবধানে ব্রাজিলের গম বিজ্ঞানী ড. মোরিশিও একটা মডেল দাঁড় করানোর নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারত গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী কিছু জাত উদ্ভাবনের দাবী করছে, সেসব জাতের বীজ আমদানীরও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ড. আখতারুজ্জামান আরো জানান, এ বছর মেহেরপুরে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে ব্লাস্ট প্রতিরোধী বারি গম ৩৩ জাতের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোর সহায়তায়।

গত বছরে উৎপাদিত বীজ থেকে বেসরকারিভাবে আরো ১০০ বিঘার অধিক জমিতে কৃষকরা বারি গম ৩৩ জাতের গম চাষ করেছেন।

ফলে আশা করা হচ্ছে বারি গম ৩৩ জাতের যে পরিমাণ বীজ এ বছরে মেহেরপুর জেলাতে উৎপাদিত হবে তাতে করে আগামী বছর মেহেরপুরের সর্বত্র গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধি বারি গম ৩৩ জাতটি ছড়িয়ে পড়বে। তাই গমে চাষের ব্যাপারে ২০১৬ সাল থেকে কৃষকদের মধ্যে যে অনীহা ও ভীতি ছিল সেটা আগামী বছর থেকে দূর হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

-নিজস্ব প্রতিবেদক




বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত মোটরসাইকেল এখন বাজারে

বিশ্বে প্রথমবারের মতো উড়ন্ত মোটরসাইকেল আনছে আরব আমিরাত ভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন কম্পানি ‘ইতিসালাত’। দুবাইয়ে চলমান ‘জিটেক্স টেকনোলোজি উইক’ এ মোটারসাইকেলটি প্রদর্শন করা হয়েছে।

সোমবার ইতিসালাত টুইটারে তাদের অফিসিয়াল আইডিতে উড়ন্ত মোটরসাইকেলের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে এ তথ্য জানিয়েছে।

চার সিলিন্ডার টারবাইন ইঞ্জিনের এ মোটরসাইকেলের নাম দেয়া হয়েছে ‘লাজারেথ এলএম৮৭৪’। এটি মাত্র ৬০ সেকেন্ডেই সড়ক থেকে শূন্যতায় উঠে যেতে পারে।

মোটরসাইকেলটিতে দুই ধরণের মোড রয়েছে। একটি হচ্ছে, রাইডিং মোড। এই মোডে রেখে সড়কে চালানো যাবে। দ্বিতীয় মোড হচ্ছে, ফ্লাইং মোড। সড়ক থেকে ওড়ার জন্য এই মোড ব্যবহার করতে হবে।

লাজারেথ এলএম৮৭৪ মোটরসাইকেল সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি পঞ্চম প্রজন্মের (৫জি) মোটরসাইকেল। এর চারটি চাকা রয়েছে। এতে ভি৮ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ৪৭০ বিএইচপি শক্তি উৎপাদন করতে পারে। মোটরসাইকেলটির ওজন ১৪০ কেজি। ওড়ার সময় এটি ২৪০ কেটি পর্যন্ত বহন করতে পারে।

লাজারেথ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, মোটরসাইকেলটির জন্য জিটেক্স টেকনোলোজি উইকে প্রিঅর্ডার নেয়া হচ্ছে। এর দাম ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

সূত্র: গালফ নিউজ




আলোর পথের যাত্রী

নাসির উদ্দীন মিরু ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা গেছেন।
নাসির উদ্দীন মীরুর স্বরণে:
মানবমুক্তির নহবত শুনে যে জীবনের যাত্রা সে জীবনকে আরো বর্ণাঢ্য ও আলোকিত করে তুলেছিলেন নাসির উদ্দীন মীরু শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য জগতে পদচারণার মধ্য দিকে। ষাটের দশকে রবীন্দ্রনাথের জন্ম শত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, স্কুলে দেয়ালিকা প্রকাশ, অমর একুশে স্মরকপত্র ও কবিতাপত্র বের করার মধ্য দিয়ে তার সংস্কৃতি জগতে প্রবেশ। এরপর পাঁচ দশক ধরে শিল্প সাহিত্য সাংবাদিকতা রাজনীতির নানাদিক নিয়ে নানা ধরনের কাজ করে চলেছেন।
নাসির উদ্দীনের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯৪৬ অবিভক্ত নদীয়ার করিমপুর থানার ফাজিলনগর গ্রামে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে তার পরিবার মেহেরপুর শহরে চলে আসে। তার পিতা নকিব উদ্দীন ছিলেন সচ্ছল কৃষক। নাসির উদ্দীন মেহেরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। মেহেরপুর কলেজ থেকে আই কম ও বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। বাল্য কৈশোর থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলি তার ব্যক্তি চরিত্রে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ক্রমশ বিকশিত হতে থাকে তার সাংগঠনিক দক্ষথা ও সৃজন বৈশিষ্ট্য। স্কুল-কলেজে ছাত্রাবস্থায় ‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাজে তিনি ছিলেন অগ্রণী। তাঁর পরিমিতিবোধ, দক্ষতা, শিল্পবোধ, চারিত্রিক, দৃঢ়তা তাকে আকর্ষনীয় ও উদাহরণ তুল্য সংগঠকে পরিণত করে। তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৪ সালে আব্দুল আওয়ালকে সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কে সম্পাদক করে মেহেরপুর ছাত্র ইউনিয়নের যে কমিটি গঠিত হয় তাতে নাসির উদ্দীন ছিলেন মূল সংগঠন। এ সময় আবু বক্কর, আহমদ আলী, শাখাওয়াত মুন্সীরা, ভাষানী-ন্যাপ সংগঠিত করছেন। আর আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আছেন এ্যাড. আবুল হায়াত, সহিউদ্দীন, মফিজুর রহমান প্রমুখ। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও সক্রিয় থেকেছেন যুগপৎ। ষাটের দশকে তিনি উদার, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে ‘মধুচক্র’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। সে সময় এ সংগঠনের উদযোগে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র-নজরুল, সুকান্ত জন্ম জয়ন্তী, মধুসূদন উৎসব সহ নানা সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়ে তিনি অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন সনদ বা স্বীকৃতি চাননি তিনি। কারণ তার দৃষ্টিতে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক দালালরা ছাড়া এদেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক পীড়িত ও ক্ষুদ করে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালেও তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে সরে থাকেননি। মেহেরপুরে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তিনিই প্রথম প্রনয়ন করেন। নাসির উদ্দীন একজন আপদমস্তক রাজনীতি কর্মী। তবে রাজনীতিকে কখনও ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেননি। ১৯৭৮ সালে অধ্যাপক আনসার উল হক, আলী ওবায়দুর রহমান মেরাজ কে নিয়ে তিনি মেহেরপুর থেকে সাপ্তাহিক প্রবাহ বের করতেন। ’৮০ দশকে পত্রিকার ওপর সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন নিষেধজ্ঞা আরোপ করলে, এটি বন্ধ হয়ে যায়।
নাসির উদ্দীনের ব্যক্তি জীবন, সংস্কৃতি ভাবনা ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড এক সূত্রে গাঁথা। জীবনের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে তার বসবাস গ্রন্থপাঠ, বিশ্লেষণ ও সে আলোকে কিছু করার ভাবনা থেকে। এ সুযোগ পেয়েছিলেন সরকারি গণ গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে এবং বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব পালনের সূত্রে। তিনি কুষ্টিয়া বসবাসের সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিষদের হয়ে কাজ করেছেন, আবার বিজ্ঞান চেতনা পরিষদেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আলোর পথের যাত্রী হিসেবে তিনি সারা জীবন আলো দিয়ে আলো জ্বালার কাজটি করে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষকে বুলেটবিদ্ধ না করে যুক্তি ও ভালবাসা দিয়ে জয় করার কথা বলছেন তিনি সব সময়। নিজেই মার্কসীয় ধারার রাজনীতি করেছেন, তথাপি ভিন্ন মতাবলম্বীদের সখ্য সম্পর্ক রেখেছেন।
রাজনৈতিক কারণে কখনও কারো সাথে দ্বন্দ্ব-হানাহানিতে লিপ্ত হননি। তিনি জানতে হিংসা হানাহানিতে কোন সমস্যার সমাধান নেই। তাই মানুষের অন্তনির্হিত শুভ প্রত্যয়ের উজ্জীবনের ওপর জোর দিতেন আর তার সব কর্ম প্রয়াস ও উদযোগ চালিত হয়েছে মানুষকে ঘিরে এবং শুভবোধ উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে।
নাসির উদ্দীন লেখালেখি জগতের সাথে থাকলেও নিজে তেমন লেখেননি। পড়াশুনার প্রতিই তার বরাবর আগ্রহ। প্রথম যৌবন মাক্স লেনিন মাও জে দং নিয়ে পড়াশুনা করেছেন এবং মার্কসীর দর্শনের আলোকে গড়ে ওঠা সমাজকে শ্রেষ্ঠ সমাজ বলে গন্য করেছেন। তবে সমসাময়িক অন্যান্য তাত্ত্বিকের মতো গোঁড়ামিরা সংকীর্ণতায় আচ্ছন্ন ছিলেন না। অখন্ড মানবিক দর্শনের পক্ষে সব সময় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। নাসির উদ্দীন পাশ্চাত্য সাহিত্য-দর্শন নিয়ে যেমন পড়েছেন। তেমনি আফ্রো-ঐশীয় লাতিন আমেরিকার সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। সমকালীন সাহিত্যিকদের লেখা পড়েছেন গভীর মনোযোগে। মেহেরপুরের লোক সাহিত্য, ইতিহাস জীবনে নানা কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন। তবে সুস্থ, সাংস্কৃতিবান, আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য করি কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, অভিনেতা, চিত্র শিল্পী, সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন বেশি।
অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী এই শ্রমী পুরুষের সাড়ে ছয় দশকের জীবনে যেমন সাফল্যের গৌরব আছে, তেমনি আছে ব্যর্থতার গ্লানি। সাফল্যের গৌরব প্রাণিত করলেও ব্যর্থতা তাকে পীড়িত বা বিপন্ন করে না। বরং ‘বিপন্ন বিস্ময়’ নিয়ে এগিয়ে যান আঁধার ছেঁড়া সংকল্পে নিঃসংশয়ে নির্ভয়ে।
——-জেলা শিল্পকলা একাডেমির একটি প্রকাশনা থেকে।




জীবননগরে ৪ গুণীকে স্বারক সম্মাননা দিল প্রমিত বাংলা পরিষদ

জীবননগরে শিক্ষা বিস্তার, ক্রীড়াঙ্গন, সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় ৪ গুণী ব্যাক্তিদের প্রমিত বাংলা স্মারক সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টার সময় জীবননগর প্রমিত বাংলা পরিষদ জীবননগর উপজেলা শাখার আয়োজনে উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ স্বারক সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রমিত বাংলা পরিষদের জীবননগর শাখার সভাপতি এম আর বাবুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে গুনীজনদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান ।
সম্মাননা পেলেন যারা, শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ অবদান রাখায় শওকত আলী, বাংলা ভাষা গবেষনায় বিশেষ অবদান রাখায় ড.মনজুর রহমান, সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় সাংবাদিক কামাল সিদ্দিক বাবু এবং খেলাধুলায় বিশেষ অবদান রাখায় মোজাম্মেল হক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু মোঃ আব্দুল লতিফ অমল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঈশা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকী, সাবেক শিক্ষক নজরুল ইসলাম, প্রমিত বাংলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন মল্লিক, প্রমিত বাংলা পরিষদের জীবননগর শাখার সাধারন সম্পাদক শিক্ষক মোমিন উদ্দিন সহ আরো উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক ওয়াহেদ বিশ্বাস, মুন্সী নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
উক্ত অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন মুন্সী আবু সাইফ মুকু।




বজ্রপাতে মেহেরপুরের তিন শ্রমিক নিহত

গাংনী নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :

মেহেরপুর সদর উপজেলার কলাইডাঙ্গা গ্রামের তিনজন বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। শনিবার বিকাল ৫ টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খোরদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতেরা হলেন কলাইডাঙ্গা গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে হুদা (৩২),বরকত আলীর ছেলে হামিদুল (৩৫) ও মকবুল হোসেনের ছেলে আল আমিন (৩৪)। আলমডাঙ্গা থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুন্সী জানান,নিহতেরা সকলেই একটি ট্রাকে কলা বোঝাই করছিলো। আকস্মিক বজ্রপাতে তারা আহত হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন। নিহতদের লাশ তাদের গ্রামে পাঠানো হয়েছে




গো-বন্দনা

সভ্যতারও অনেক আগে, প্রকৃতপক্ষে মানব জীবনের সুচনালগ্ন থেকেই মানুষ আর গরু একত্রে সংসার করে আসছে। মানুষ ব্যতিত গরু যদিও বা কল্পনা করা যায়, কিন্তু গরু ছাড়া মানবসমাজ সম্ভবপর নয়। অবশ্য গরুর কথা বললেই বাঙালি মুসলিম মানসে ভেসে ওঠে ভুনা ভুনা গো-মাংসের ছবি, যদিও মাংস উৎপাদনই গরুর একমাত্র কাজ নয়। গরুর সমগোত্রীয় আরেকটি প্রাণী হল মোষ, অথচ গরু নিয়ে সারা দুনিয়ায় যে পরিমাণ মাতামাতি হয়, মোষের ক্ষেত্রে তার কানাকড়িও নয়!

গরু বিপন্ন শ্রেণির জন্তু না হলেও, নিজেদের জাত চেনার স্বার্থে ছাত্রছাত্রীদের উঠতি বয়সেই গরু রচনা মুখস্ত করিয়ে নেওয়া হয়। কারণ শিক্ষকের দৃষ্টিতে ছাত্ররা ওই শ্রেণির চতুষ্পদ বৈ তো নয়! মানুষের মতো গরুদের মধ্যে ধর্ম চর্চা না থাকলেও, তাদের মধ্যে জাতিভেদ, বর্ণভেদ বিদ্যমান। দেশি জাতের গরু ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রিজিয়ান, সিন্ধি, সুইস, নেপালিসহ বিভিন্ন জাতীয়তা এবং চমরী গাই, গয়াল, নীল গাইয়ের মতো কয়েকটি গোত্রের গরু আছে। দেশি গরুর শারীরিক গঠন ও উৎপাদনশীলতা আমাদের মতোই স্বল্পকায় এবং নামসর্বস্ব।

বৃক্ষের মধ্যে যেমন কাঁঠালের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে, কাঁঠালের পাতা, ডালপালা, ফলের আবরণ, বীজ কোনোকিছুই যেমন ফেলনা নয়; এমন কি, এর শেকড় পর্যন্ত ঔষধি কাজে লাগানো হয়। প্রাণীকুলের মধ্যে গরুও তেমন সর্বগুণে মহিমান্বিত বহু ব্যবহারোপযোগী জন্তুবিশেষ। মানুষ এদের থেকে মাংস ও দুধ আহরণ ছাড়াও এদের চামড়া, হাড়, নাড়িভুঁড়ি, গোবর সব-ই কাজে লাগাচ্ছে। এমন কি বিশেষ মতাবলম্বী এক শ্রেণির মানুষ, গরুর প্রস্রাবকে ওষুধ হিসেবে সরাসরি গলাধঃকরণ করছে।

আধুনিক সমাজে, ব্যস্ত সময়ে গরু ছাড়া একটি ধাপ ফেলার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ থাকবেও বা কীভাবে? গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি জুতোতে পা গলিয়েই না হাঁটতে হবে! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা সঙ্গে নিতে হলেও সেই চামড়ার তৈরি ওয়ালেট লাগবে। ইজ্জত কষে বেঁধে রাখতেও কোমরে চামড়ার বেল্ট আঁটতে হবে। উৎসবে-পার্বণে, আনন্দ আয়োজনে গরুর দুধের ছানা ফেটা মিষ্টি তো চাই-ই চাই। জীবনের প্রয়োজনে ফসল ফলাতে যেমন গোবর সারের দরকার হয়, তেমন জীবন রক্ষাকারী ক্যাপসুল তৈরিতেও গরুর হাড় চাই। গরুর হাড় আর ক্ষুরা দিয়ে আরোও কত কী যে তৈরি হয় তার খবর রাখে ক’জন? একালে গোবর শুকিয়ে জ্বালানি বানানোর চল না থাকলেও বায়োগ্যাস উৎপাদন করে একই কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে।

পেছন ফিরেও যদি দেখি; আমাদের জীবনধারণের অবলম্বন কৃষি ও কৃষকের দিকে, কৃষকের অবলম্বন ছিল গরু। জমিতে হাল বইতে, মই দিতে যেমন গরুর বিকল্প ছিল না। তেমন ফসল ওঠার পরে মাড়াই করতে ওই গরুই ছিল নীলমণি। ভোজনবিলাসি বাঙালির রান্নার তৈল উৎপাদনের কলু ঘোরাতেও ওই গরুর দ্বারস্থ হওয়া ভিন্ন পথ ছিল না। রাজাধিরাজরা ঘোড়া গাড়িতে চড়ে বেড়ালেও গণপরিবহন বলতে যা ছিল, তা হল গরুর গাড়ি। ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানে যখন নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন গলা মিলিয়েছিলেন, সেই সময় কত তরুণী এমন গরুর গাড়িতে চেপে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখত তার ইয়ত্তা নেই! ইলিয়াস কাঞ্চন এখন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ সড়কের দাবীতে, উনি কি দুর্ঘটনার আশঙ্কামুক্ত সেই গরুর গাড়িই আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছেন কি না, তা অবশ্য আমার জানা নেই।

গরু যে শুধু স্থুল পার্থিব কাজেই ব্যবহৃত হয়, তা নয়। ধর্ম-কর্মের ভেতরেও গরুর বেশ সুদৃঢ় একটি অবস্থান রয়েছে। পবিত্র কুরআনের সর্ববৃহৎ সুরা বা অধ্যায়টির নাম, বাকারাহ। যার অর্থ গাভী। ইসলামে অবশ্য গরুকে পূজনীয় করা হয়নি, বরং ইহুদিদের গরু বিষয়ক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিরোনাম করা হয়েছে। গরুর প্রতি ইহুদি জাতির দুর্বলতা অনেক পুরনো। নবীর অনুপস্থিতিতে তারা উর্বর মস্তিষ্ক ব্যবহার করে একবার বাছুর পূজো করে। এর জরিমানা হিসেবে তাদের দিয়ে একটি গাভী কুরবানি করানো হয়। ইহুদি জাতি এখনো ‘রেড হফার’ নামক এক লাল গরুর সন্ধানে আছে। এই গরু পেলে সেটির বদৌলতে তারা নাকি পুরো বিশ্বকে পদানত করতে পারবে। অবশ্য বর্তমানে আমরা যেভাবে তাদের কাছে গরুর মতোই বশ্যতা স্বীকার করে বসে আছি, তাতে আবার আলাদা করে গরু খোঁজার কী প্রয়োজন সেটি আমার বোধগম্য নয়!

হিন্দু ধর্মে তো গরু একটি কিংবদন্তী নাম। দেবকুল শিরোমণি শিবের বাহন ছিল গরু। ভগবানের বিমূর্ত রূপ শ্রী কৃষ্ণকেও বেষ্টন করে থাকত কয়েকটি গরু। হিন্দু ধর্মমতে গরু দুগ্ধদায়ি মাতা, যেহেতু মাতা তাই পূজ্য। যেহেতু পূজনীয়, তাই জবাই করে খাওয়া নিষিদ্ধ। ব্রিটিশ ভারতে গরু খাওয়া নিয়ে কত যে দাঙ্গাহাঙ্গামা, কত যে অনর্থ হয়েছে তার সীমা পরিসীমা নির্ণয় কঠিন।  অধুনা ভারতেও গরু নিয়ে হাঙ্গামা বিদ্যমান, তবে সেটি একতরফা। একসময় তো দেশে ব্যক্তির ধর্ম পরিচয় চিহ্নিত হতো গরু দিয়ে; ব্যাপারটা এমন ছিল, যেহেতু সে গরু খায়, অতএব সে মুসলমান। হালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রসারের ফলে বাঙালিরা ধর্ম নির্ণয়ের এ মহা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে! কুদৃষ্টি থেকে বাঁচতে অনেকে কুরবানি করা গরুর চোয়াল বাসায় টানিয়ে রাখে। যদিও এটি কুসংস্কার হিসেবে বিবেচিত, তবুও সংস্কার তো বটে!

গরু নিয়ে ধর্মীয় আবেগ থাকবে, আর তা নিয়ে সমাজে চালবাজি হবে না, রাজনীতি হবে না তা আশা করা বোকামি। একচেটিয়া মুসলিম সমাজে গরু নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকলেও, হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে এর প্রভাব চরম। শরৎচন্দ্র তাঁর ‘মহেশ’ গল্পে সেই বিষয়টি বেশ ভালো করেই এঁকেছেন। ভারতে গো-রক্ষা ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করে যারা ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করেন, তারা-ই আবার গো-মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে রপ্তানি বাণিজ্যে শীর্ষে ওঠার কসরতে কসুর করেন না। ভারতে গরু নিয়ে যা যা ঘটে তা লিপিবদ্ধ করতে হলে প্রমাণ সাইজের একটি গ্রন্থ রচনা ছাড়া উপায় নেই। গরুকে কেন্দ্র করেই সমাজে রাখাল, গোয়ালা, ঘোষ প্রভৃতি পরিচয় জ্ঞাপক বিশেষ্যের উদ্ভাবন ঘটেছে।

বাংলা লোককথা কিংবা সাহিত্যেও গরুর অবস্থান দুর্বল নয়। উস্তাদ আহমদ ছফা তো ‘গাভী বিত্তান্ত’ শিরোনামে উপন্যাস লিখে বাঙালি এলিট শ্রেণির গরুপ্রীতি উন্মোচন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। মীর মশাররফ হোসেন অবশ্য তাঁর ‘গো-জীবনে’ ইনিয়ে বিনিয়ে গরু খাওয়া থেকে মুসলমানদের সরে আসার আন্দোলন করে গিয়েছেন। গরু নিয়ে বাংলা ভাষায় অনেক বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন ছড়িয়ে আছে। বাংলা জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতের একটি হল ভাওয়াইয়া, আর এর উৎস হল গরুগাড়ি। ওয়েস্টার্ন গল্প আর ছায়াছবির প্রায় সব-ই গরুময়। তৎকালীন টেক্সাস আর মেক্সিকোতে যে মানুষের সভ্যতা আবর্তিত হতো গরুকে কেন্দ্র করে, এখান থেকে সেটি বিলক্ষণ উপলদ্ধি করা যায়!

দেশের বর্তমান অর্থনীতিতে গরু অনেক শক্তিশালী একটি উপাদান। গরু এবং গরু থেকে প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন উপকরণ জিডিপি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট অবদান রাখছে।  প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র লাঘবেও গরুর ভূমিকা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই সভ্যতা বিনির্মাণে মানুষের পরে যে প্রানীটির অবদান, সেটি গরু!

গরু বিষয়ক কড়চা শেষ করার আগে দুটি কথা। আমাদের সমাজে নিরীহ নির্বিবাদী লোকদের কেতাবি ভাষায় ‘গো-বেচারা’, ভদ্রলোকি ভাষায় ‘গরু’ আর সাধারণার্থে ‘বলদ’ বলে সম্বোধন করা হয়। ‘বলদ’ গরু সমাজের একজন সদস্য। আক্ষরিক অর্থে যে গরুটির পুরুষত্বহীনতা ঘটানো হয়, সেটি বলদ হিসেবে বেড়ে ওঠে। কিন্ত প্রচলিত অর্থে বোকা বা অগভীর বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বলদের যে বৈশিষ্ট্য, সমগ্র গরুসমাজ সেই দোষে দুষ্ট। মানবজাতির উপকারার্থে তাদের বশ্যতা মেনে নিয়ে নিজেকে বলিদান দেওয়াটাই বলদের বা গরুর ধর্ম। সেই হিসেবে বলদ গালি নয়, প্রশংসা। গরুর চরিত্র যদি মানুষের মতো হতো, তাহলে কবি লিখতেন, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে গাই।’

এম এম জাকির হোসেন প্রকৌশলী, ত্রাণ শাখা zakirkhalid776@gmail.com