দশম শ্রেণির ক্লাস বর্জন

গাংনী জেটিএস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে ক্লাস বর্জন করেছে ছাত্রীরা। গত ৫দিন ধরে তারা এ দুনীর্তি অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও কোন ফল না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা।

জানা গেছে, গত ১৮ তারিখ বুধবার স্কুল কতৃপক্ষ দশম শ্রেণিতে একটি নোটিশ দেয়। নোটিশে পরীক্ষা ফ্রি, বকেয়া বেতন ও উন্নয়ন ফ্রিসহ মোট ১৫র্শ টাকা বিদ্যালয় কতৃপক্ষ প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেয়। নোটিশ দেখে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা পরদিন বিদ্যালয় প্রধানের নিকট অতিরিক্ত টাকার বিষয়টি জানতে চায়। তিনি কোন সদউত্তর দিতে না পারায় তারা টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। বিদ্যালয় কতৃপক্ষ

নোটিশের টাকা পরিসোধের জন্য জোর করলে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের ক্লাস বর্জন করে। গত ২১-০৯-২০১৯ তারিখ থেকে গতকাল বুধবার পযন্ত দশম শ্রেণির কোন ছাত্রী বিদ্যালয়ের ক্লাসে অংশ নেয়নি। কিন্তু কতৃপক্ষ আন্দোলনরত শির্ক্ষাথীদের কোন প্রকার আলোচনা না করে তাদেরকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম-দূনীর্তিকে বৈধ করতে গিয়ে শিক্ষা অফিসকে উন্নয়ন ফ্রির টাকার কথা বলেছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনরত ছাত্রীরা।

এব্যাপারে জেটিএস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ জাহাঙ্গীরের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব নেওয়া হয়নি।

গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার বলেছেন, পরীক্ষার ফ্রি ৪র্শ টাকা, বকেয়া বেতন ও সাড়ে ৭র্শ টাকা উন্নয়ন ফ্রি নেওয়ার কথা শুনেছি। আগামীকাল বিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে। যদি কতৃপক্ষ অপরাধ করে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

  • নিজস্ব প্রতিবেদক 



গাংনীতে আশংকাজনকহারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স

মেহেরপুরের গাংনীতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স। গত ৯ মাসে পাঁচ শতাধীক উপরে রোগি গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগি আসছে চিকিৎসা নিতে। অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর মাংস খেয়ে লোকজন এরোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে এলাকাবাসি ও খামারীরা জানান, অসচেতনতা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদাসীনতার কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রোগতত্ব বিভাগের একটি টীম। গতকাল বুধবার সকালে গাংনীতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন ও তদন্তের জন্য বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ধর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: আব্দুর সবুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গবাদিপশু পালনকারী ও আক্রান্ত ব্যাক্তিদের বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জাহাঙ্গীর আলম।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভিটাপাড়ার আমিরুল ইসলাম। ১ মাস আগে তার বাড়ির একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি এটি জবাই করে মাংস বিক্রি করেন। তার দুদিন পরই দুই হাতে ও মুখে ফোড়া ও পচন দেখা দেয়। স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন।

ডাক্তার জানান, তিনি অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত। গরু জবাইয়ে সহযোগি তার ভাই ইদ্রীস এবং ফজলু এ রোগে আক্রান্ত হন। অপরদিকে মাংস রান্না করার সময় গরুর রক্ত ও বর্জ হাতে লাগায় স্ত্রী সালেয়ারা ও মেয়ে নারগিছ ও অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হন।

শুধু আমিরুলের পরিবার নয়, গোটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গত ৯ মাসে পাঁশ শতাধীকের বেশী মানুষ অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিভিন্ন হাটবাজারে প্রশাসনিক নজরদারী না থাকায় স্থানীয় কসাইরা রুগ্ন গবাদি পশু জবাই করে মাংশ বিক্রি করে।

ওই মাংস খেয়েই লোকজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কোন মোটাতাজা গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কাউকে না জানিয়ে ওই গরুর মাংস ভাগাভাগি করে নেয়। এ গরু কোন রোগে আক্রান্ত কিনা তা যাচাই করার সুযোগ থাকে না। তা ছাড়া প্রাণীসম্পদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন লোক জনের তদারকী না থাকায় অসুস্থ গরু জবাই করা হয়।

ফলে দিনদিন এ রোগের প্রাদূর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা প্রণী সম্পদ বিভাগ থেকে প্রতি বছর অ্যানথ্রাক্স রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা থাকলেও গবাদী পশু পালনকারীরা তা পান না বলে অভিযোগ করেন। বেশীর ভাগ খামারী ও পশু পালনকারী নিজ উদ্যোগে বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনে দিয়ে থাকেন। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বা মাঠ কর্মীরা কোন খোঁজ খবর রাখেন না। অনেক সময় অফিসে এসেও কোন সহযোগীতা না পাওয়ার কথা জানান কয়েক জন খামারী।

অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তরা জানান, হাটবাজার থেকে গবাদি পশুর মাংস এনে রান্না করা ও খেয়ে এ রোগ দেখা দিয়েছে। মাংস খাবার পরপরই মুখসহ বিভিন্ন অঙ্গ চুলকানি দেখা দেয়। তার পর ফুলে ও পানি ঝরে। পরে জানতে পারি এটি অ্যানথ্রাক্স রোগ।
গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, অ্যানথ্রাক্স কি এবং কেন হয় তা জানেন না তারা। তাছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন অসুস্থ পশু নিয়ে গেলে কোন চিকিৎসা দেন না। প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদাসীনতার কারনে আজ আমাদের পশুর শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগ দেখা দিচ্ছে।

 

গাংনী বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে এ তহ বাজার তাই কোন রুগ্ন পশু এখানে জবাই করা হয় না। কিন্তু অন্যান্য হাট বাজারে কোন তদারকি নেই। ফলে রোগা ও অসুখে গরু জবাই করা সহজ। স্থানীয় লোকজনও রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সস্তায় কিনে খায়। ফলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি আকারে। বামন্দি বাজারের কয়েকজন কসাই জানান, গত ১০ বছরের একদিনও কোন লোকজন আসেনি পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষা করতে। কোন নজরদারী নেই।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিডি দাস জানান, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস কাটা ছেড়া ও খাওয়ার কারণে সবাই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাজারে রোগাক্রান্ত গরু যাতে জবাই না করতে পারে সেদিকে নজরদারী প্রয়োজন। আমাদের এখানে যে সব রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে আমরা তাদের চিকিৎসা সেবা সহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবারহ করছি।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামান জানান, বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ রোগের বিস্তার বেড়েছে। তাছাড়া লোকবলের অভাবে তেমন কোন তদারকি করা সম্ভব হয়না। অনেকেই গ্রামে পশু জবাই করেন। অসুস্থ গবাদি পশুর মালিকরাও

নিজেরাই জবাই করে মাংস বিক্রি করে থাকে। এখান থেকেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
ঢাকা রোগতত্ব বিভাগ সিডিআইএল এর ইউএলও ডা. গোলাম আজম জানান,

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় রোগিদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করেছেন এবং ফ্রিজে রাখা মাংস পরিক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স জীবানু পেয়েছেন। মাংসগুলো পুতে রাখেন এবং অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জবাই করে গভীর গর্তে পুতে রাখার পরামর্শ দেন এ পরিদর্শক দল।

নিজস্ব প্রতিবেদক




মেহেরপুরে স্কাউটস গ্রুপ সভাপতি উদ্বুদ্ধকরণ সভা

মেহেরপুরে সদর উপজেলার স্কাউটস  গ্রুপ সভাপতদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে জেলা স্কাউটস ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন আর আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্কাউট গ্রুপ সভাপতি আশরাফুজ্জামান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মেহেরপুর সদর উপজেলা স্কাউটস গ্রুপ সভাপতি মাসুদুল আলম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাথ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অলোক কুমার দাস, জেলা স্কাউটস এর সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম, উপজেলা একাডেমীক সুপারভাইজার আনারুল ইসলাম, উপজেলা স্কাউটস সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান বাবলু, কাজী কুদরত-উল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক সহ সদর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগন।

নিজস্ব প্রতিনিধি




আলোর পথের যাত্রী

নাসির উদ্দীন মিরু ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারা গেছেন।
নাসির উদ্দীন মীরুর স্বরণে:
মানবমুক্তির নহবত শুনে যে জীবনের যাত্রা সে জীবনকে আরো বর্ণাঢ্য ও আলোকিত করে তুলেছিলেন নাসির উদ্দীন মীরু শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য জগতে পদচারণার মধ্য দিকে। ষাটের দশকে রবীন্দ্রনাথের জন্ম শত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, স্কুলে দেয়ালিকা প্রকাশ, অমর একুশে স্মরকপত্র ও কবিতাপত্র বের করার মধ্য দিয়ে তার সংস্কৃতি জগতে প্রবেশ। এরপর পাঁচ দশক ধরে শিল্প সাহিত্য সাংবাদিকতা রাজনীতির নানাদিক নিয়ে নানা ধরনের কাজ করে চলেছেন।
নাসির উদ্দীনের জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯৪৬ অবিভক্ত নদীয়ার করিমপুর থানার ফাজিলনগর গ্রামে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে তার পরিবার মেহেরপুর শহরে চলে আসে। তার পিতা নকিব উদ্দীন ছিলেন সচ্ছল কৃষক। নাসির উদ্দীন মেহেরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। মেহেরপুর কলেজ থেকে আই কম ও বিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। বাল্য কৈশোর থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলি তার ব্যক্তি চরিত্রে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ক্রমশ বিকশিত হতে থাকে তার সাংগঠনিক দক্ষথা ও সৃজন বৈশিষ্ট্য। স্কুল-কলেজে ছাত্রাবস্থায় ‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাজে তিনি ছিলেন অগ্রণী। তাঁর পরিমিতিবোধ, দক্ষতা, শিল্পবোধ, চারিত্রিক, দৃঢ়তা তাকে আকর্ষনীয় ও উদাহরণ তুল্য সংগঠকে পরিণত করে। তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৪ সালে আব্দুল আওয়ালকে সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কে সম্পাদক করে মেহেরপুর ছাত্র ইউনিয়নের যে কমিটি গঠিত হয় তাতে নাসির উদ্দীন ছিলেন মূল সংগঠন। এ সময় আবু বক্কর, আহমদ আলী, শাখাওয়াত মুন্সীরা, ভাষানী-ন্যাপ সংগঠিত করছেন। আর আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আছেন এ্যাড. আবুল হায়াত, সহিউদ্দীন, মফিজুর রহমান প্রমুখ। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও সক্রিয় থেকেছেন যুগপৎ। ষাটের দশকে তিনি উদার, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে ‘মধুচক্র’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। সে সময় এ সংগঠনের উদযোগে অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্র-নজরুল, সুকান্ত জন্ম জয়ন্তী, মধুসূদন উৎসব সহ নানা সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়ে তিনি অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন সনদ বা স্বীকৃতি চাননি তিনি। কারণ তার দৃষ্টিতে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক দালালরা ছাড়া এদেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক পীড়িত ও ক্ষুদ করে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালেও তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকে সরে থাকেননি। মেহেরপুরে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা তিনিই প্রথম প্রনয়ন করেন। নাসির উদ্দীন একজন আপদমস্তক রাজনীতি কর্মী। তবে রাজনীতিকে কখনও ক্ষমতা দখলের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেননি। ১৯৭৮ সালে অধ্যাপক আনসার উল হক, আলী ওবায়দুর রহমান মেরাজ কে নিয়ে তিনি মেহেরপুর থেকে সাপ্তাহিক প্রবাহ বের করতেন। ’৮০ দশকে পত্রিকার ওপর সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন নিষেধজ্ঞা আরোপ করলে, এটি বন্ধ হয়ে যায়।
নাসির উদ্দীনের ব্যক্তি জীবন, সংস্কৃতি ভাবনা ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড এক সূত্রে গাঁথা। জীবনের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে তার বসবাস গ্রন্থপাঠ, বিশ্লেষণ ও সে আলোকে কিছু করার ভাবনা থেকে। এ সুযোগ পেয়েছিলেন সরকারি গণ গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে এবং বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব পালনের সূত্রে। তিনি কুষ্টিয়া বসবাসের সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিষদের হয়ে কাজ করেছেন, আবার বিজ্ঞান চেতনা পরিষদেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আলোর পথের যাত্রী হিসেবে তিনি সারা জীবন আলো দিয়ে আলো জ্বালার কাজটি করে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষকে বুলেটবিদ্ধ না করে যুক্তি ও ভালবাসা দিয়ে জয় করার কথা বলছেন তিনি সব সময়। নিজেই মার্কসীয় ধারার রাজনীতি করেছেন, তথাপি ভিন্ন মতাবলম্বীদের সখ্য সম্পর্ক রেখেছেন।
রাজনৈতিক কারণে কখনও কারো সাথে দ্বন্দ্ব-হানাহানিতে লিপ্ত হননি। তিনি জানতে হিংসা হানাহানিতে কোন সমস্যার সমাধান নেই। তাই মানুষের অন্তনির্হিত শুভ প্রত্যয়ের উজ্জীবনের ওপর জোর দিতেন আর তার সব কর্ম প্রয়াস ও উদযোগ চালিত হয়েছে মানুষকে ঘিরে এবং শুভবোধ উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে।
নাসির উদ্দীন লেখালেখি জগতের সাথে থাকলেও নিজে তেমন লেখেননি। পড়াশুনার প্রতিই তার বরাবর আগ্রহ। প্রথম যৌবন মাক্স লেনিন মাও জে দং নিয়ে পড়াশুনা করেছেন এবং মার্কসীর দর্শনের আলোকে গড়ে ওঠা সমাজকে শ্রেষ্ঠ সমাজ বলে গন্য করেছেন। তবে সমসাময়িক অন্যান্য তাত্ত্বিকের মতো গোঁড়ামিরা সংকীর্ণতায় আচ্ছন্ন ছিলেন না। অখন্ড মানবিক দর্শনের পক্ষে সব সময় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। নাসির উদ্দীন পাশ্চাত্য সাহিত্য-দর্শন নিয়ে যেমন পড়েছেন। তেমনি আফ্রো-ঐশীয় লাতিন আমেরিকার সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। সমকালীন সাহিত্যিকদের লেখা পড়েছেন গভীর মনোযোগে। মেহেরপুরের লোক সাহিত্য, ইতিহাস জীবনে নানা কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন। তবে সুস্থ, সাংস্কৃতিবান, আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য করি কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, অভিনেতা, চিত্র শিল্পী, সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন বেশি।
অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী এই শ্রমী পুরুষের সাড়ে ছয় দশকের জীবনে যেমন সাফল্যের গৌরব আছে, তেমনি আছে ব্যর্থতার গ্লানি। সাফল্যের গৌরব প্রাণিত করলেও ব্যর্থতা তাকে পীড়িত বা বিপন্ন করে না। বরং ‘বিপন্ন বিস্ময়’ নিয়ে এগিয়ে যান আঁধার ছেঁড়া সংকল্পে নিঃসংশয়ে নির্ভয়ে।
——-জেলা শিল্পকলা একাডেমির একটি প্রকাশনা থেকে।




মেহেরপুরে কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে নারী শ্রমিকের সংখ্যা

আকতারুজ্জামান, গাংনী:

মেহেরপুরে নানা কারনে দিনদিন বাড়ছে নারী শ্রমিকের সংখ্যা। কৃষি থেকে শুরু করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নারীদের ভুমিকা বাড়ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাদের কর্ম ক্ষেত্র হিসেবে অধিকাংশ নারীরাই ঝুকে পড়ছেন কৃষিতে। মাটি কাটা, কচু তোলা, আলু তোলা, মরিচ তোলা ধান লাগানো ইত্যাদি কাজে নারীদের অংশ গ্রহন লক্ষ্যনীয়।

শুধু তায়ই নয় বিভিন্ন ছোটখাটো কারখানাতেও নারীদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়া মত। এতে একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ জেলার কৃষির ও শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতি , অন্যদিকে অভাব গ্রস্থ সংসারের হাল ধরছেন নারীরা। তবে একজন পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও চরম মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তারা। নারী শ্রমিকদের মজুরী বৈষম্য ও কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্য থাকলেও সরকারি -বেসরকারি ভাবে বৈষম্য দুরীকরনের নেই তেমন কোন উদ্যোগ।

পেশাগত ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকরা নানা বঞ্চনা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়তই। পাচ্ছে না অধিকার, নেই নিরাপত্তা। তবুও তারা জীবিকার তাগিদে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। একজন পুুরুষ শ্রমিক সকাল ৮ টা থেকে কাজ করেন দুপুর ২ টা পর্যন্ত। তাকে বর্তমানে মজুরী দেয়া হয় ৪শ থেকে ৫শ টাকা। একই কাজে নারী শ্রমিকদের দেয়া দেড় থেকে দুই’শ টাকা। এ ব্যাবস্থার পরিবর্তন হয়নি দির্ঘদিনেও।
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে শ্রম আইন প্রণয়ন করেন। শ্রম আইনের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য একটি আইন হচ্ছে ‘নারী শ্রমিকদের ৬ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করাতে হবে মালিক পক্ষ থেকে। এই আইনের প্রয়োগ নেই।

নানা সমস্যা মেনে নিয়েই নারী শ্রমিকরা কাজ করে আসছেন। দেশের বড়বড় শহরের শিল্পকল কারখানাতে এ আইনের কিঞ্চিত সুবিধা পেলেও মফঃস্বল এলাকায় এ আইন বা নারী শ্রমিকদের বিষয়ে মালিক পক্ষ একেবারেই উদাসীন। মেহেরপুর জেলাতে নারী শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই স্বামী পরিত্যত্ত্বা বিধবা। আবার কেউ কুমারী বা কিশোরী। নানা সমস্যার কারনে স্বামী সংসারে টিকতে না পেরে স্বামীর সাথে ছাড়াছাাড়ি হয়ে গরিব পিতার সয়সারে বোঝা হচ্ছে অনেক নারী। মেহেরপুর জেলায় শিল্প কারখানা না থাকায় পিতা-মাতার অভাবের সংসারে জীবন জীবিকার তাগিদে নারীরা এখন কৃষি কাজের দিকে ঝুকছেন।

কৃষিতে নারীদের অংশ গ্রহন শ্রমিক সংকট দুর করেছে। বিভিন্ন ব্যাবসা বানিজ্যের মধ্যে পুরুষেরা নিয়োজিত থাকায় একসময় পুরুষ শ্রমিক সংকট হয়ে পড়ছেছিল। নারীদের অংশ গ্রহনে সে সংসট দুর হয়েছে। মালিকপক্ষরা সে সুযোগে নারী শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। দেখারও কেউ নেই,বলারও কেউ নেই।

নারী শ্রমিকরা কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে হোচট খাচ্ছেন উল্লেখ করে নারী শ্রমিক নুরী বেগম বলেন, নারীরা সব জায়গায় হয়রানি হচ্ছে। মালিক পক্ষ থেকে কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদেরকে নিয়ে যে সব উন্নয়ন মূলক কাজ করছেন তার পাশাপাশি তিনি যদি মফঃস্বল এলকায় নারী শ্রমিকদের দিকে একটু নজর দেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের যে বৈষম্য, নির্যাতন এসব বন্ধ হবে

নারী শ্রমিক ছকিনা বেগম বলেন, নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে নারীরা সব সময় অবহেলিত। আমরা সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও ন্যায্য মুজুরি পাচ্ছিনা। আমরা চাই সরকার আমাদের পাশে দাড়িয়ে মজুরি বৈষম্য দুর করুক।
গাড়াবাড়িয়া গ্রামের নারী শ্রমিক রওশনারা জানান,নারীরা আট ঘন্টার জায়গায় বারো ঘন্টা শ্রম দিচ্ছে। তারপরে সংশ্লিষ্ঠ মালিকগন আমাদের ঠকাই।

অতিরিক্ত কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। এসব বিষয় নিয়ে মালিকদের সাথে কথা বলতে গেলে শ্রমিকরা ভয় পায়। তাদের কাজ থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

মেহেরপুর জেলায় নারী শ্রমিকের কোনো পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান। কারো কাছেই কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে এর নির্ধারিত একটি পরিসংখ্যান থাকা উচিৎ বলে মনে করছেন নারী মুক্তি নিয়ে কাজ করছেন এমন কিছু এনজিও সংস্থা।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাাসিমা খাতুন বলেন, আমাদের মেহেরপুর জেলা একটি কৃষি প্রধান জেলা। কৃষি ব্যাতিত এ জেলায় আর কোন কর্ম ক্ষেত্র নেই, তাই কৃষিতে নারীদের অংশ গ্রহন প্রসংশনীয়। পুুরুষের সমান শ্রম দিয়ে তারা মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এটা কারো কাম্য নয়। সরবকারি বা বেসরকারি ভাবে নারীদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিৎ।

মালিক পক্ষের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে কথা বলা দরকার এ বিষয়ে আমাদের করনীয় অব্যাহত থাকবে।
প্রতিবছর শ্রমিক দিবস আসে। র‌্যালি, আলোচনা সভা পালিত হয়। কিন্ত নারী শ্রমিকদের কাঙ্খিত অধিকার অধরা থেকে যায়। নারী শ্রমিকদের দাবী পুরুষের পাশাপাশি নারীদের পারিশ্রমিক সমান করা হোক। মজুরীসহ নানা বৈষম্য দুরীকরনে সরকারিভাবে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী ভক্তভোগী নারী শ্রমিকদের।




গাংনীতে গলাই সুজি আটকিয়ে শিশুর মৃত্যু

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামে গলাই সুজি আটকিয়ে মায়ের কোলে হুজাইফা নামের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ভাটপাড়া গ্রামের স্কুল পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত হুজাইফা (৮মাস) ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমানের মেয়ে।
জানাগেছে, আজ সকালে আনিসুরের স্ত্রী সেলিনা খাতুন তার শিশু কন্যা হুজাইফাকে সুজি খাওয়াচ্ছিলেন। এমনসময় হুজাইফার গলাই সুজি আটকিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। হুজাইফাকে নিয়ে গাংনী হাসপাতালে আসার পথেই হুজাইফা মারা যায়। শিশু হুজাইফার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া মাতম বিরাজ করেছ।

গাংনী প্রতিনিধি:




মেহেরপুরে এসিআই মটরস এর সোনালীকা ডে পালন

মেহেরপুরে এসিআই মটরস লি. এর আয়োজনে সোনলিকা ডে পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বার্ষিক সার্ভিস ও মতবিনিময সভার আয়োজন করা হয়।

মঙ্গলবার দিন ব্যাপি রাশেদ মটরস এর সামনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার মধ্যদিয়ে এ সোনালীকা ডে পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাশেদ মটরস এর প্রোপাইটার এসএস এনামুল আজিম।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এসিআই মটরস লি. এর জেনারেল ম্যানেজার সাহেদ আল আমিন, প্রডাক্ট ম্যানেজার তন্ময় মজুমদার, এরিয়া ম্যানেজার আবু আল ইমারন, টেরিটরি ম্যানেজার মতিউর রহমান, অশিষ কুমার প্রমুখ।

দিন ব্যাপি অনুষ্ঠান মালার মধ্যে ছিল সার্ভিসিং, হেলথ চেকআপ, রেফেল ড্র, খেলাধুলা ইত্যাদি। অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতরণ করা হয়।