আপনি হয়তো নিশ্চিন্ত মনে হাতে থাকা ডিভাইসটি দিয়ে নিজের খুশি অথবা বেদনার কোনো মুহূর্ত ভাগ করে নিচ্ছেন আপনজনদের সঙ্গে। আর এ কাজে আপনার একমাত্র হাতিয়ার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অবসরে হয়তো প্রিয় কোনো গায়ক বা অভিনেতা-অভিনেত্রীর নতুন গান বা অন্য কোনো কন্টেন্ট দেখতে বসেছেন ইউটিউবে। আপনি কি জানেন এসবের মাঝেই লুকিয়ে আছে বিশাল এক ফাঁদ।
আপনার পরিচিত ও প্রিয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারের সময় তারা আপনারই তথ্য সংগ্রহ করে তা বিলিয়ে দিচ্ছে অন্য কারো কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব জানা যায়।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ডিসকর্ড, রেডিট, অ্যামাজন, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক ও টুইটারের পর্যবেক্ষণ ও তাদের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে আমেরিকার এফটিসি। এ সময় এফটিসি এসব কোম্পানির চরিত্র বিশ্লেষণ করে- কীভাবে কোম্পানিগুলো তার গ্রাহকদের ব্যবহারবিধির ওপর নজরদারি করে এবং সে অনুযায়ী তাদের কাছে কন্টেন্ট ও বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে থাকে।
এফটিসির প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিগুলো ট্র্যাকিং অনুশীলন গভীরতা ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে গ্রাহকদের ওপর নজরদারিকে বৈধতা দেয়। এর প্রেক্ষিতে এফটিসি মার্কিন কংগ্রেসকে ফেডারেল প্রাইভেসি রেজলুশন পাস করার প্রস্তাব দেয়। যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাকে অবমূল্যায়ন করে এমন স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
মার্কিন সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন-বয়স, লিঙ্গ, ভাষাবিষয়ক তথ্য থার্ড পার্টির সঙ্গে শেয়ার করে। এ ছাড়া কিছু কোম্পানি ব্যবহারকারীদের আয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পারিবারিক অবস্থানবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এমনকি যেসব কোম্পানি স্পষ্টভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করে না তারাও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত জীবনের বিবরণ বের করতে প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করে। যেমনটা দেখা যায়, কিছু কোম্পানি ব্যবহারকারীদের আগ্রহের বিষয়গুলোর মধ্যে ‘শিশু, বাচ্চা এবং মাতৃত্ব’ সংক্রান্ত তথ্য খোঁজার আচরণ বিশ্লেষণ করে তাদের পিতৃত্ব বা মাতৃত্বজনিত অবস্থা বের করে। একইভাবে তারা নববিবাহিত বা বিচ্ছেদের তথ্যও বের করে। অনেক কোম্পানি ব্যবহারকারীদের আগ্রহের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে তাদের প্ল্যাটফর্মে কীভাবে আরও ব্যবহারকারী যোগ করা যায় তার বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব তথ্য তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয় যাতে কোম্পানিগুলো আরও বেশি বিজ্ঞাপন পায়।
সূত্র: কালবেলা