ভালো নেই মেহেরপুরের সুইপার কলোনির বাসিন্দারা। পৌরসভার ৩৬’শ টাকা বেতনে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে তারা। কেউ কেউ আবার ভাড়া বাড়িতে থাকায় বেতনের সব অংশই চলে যায় বাড়ি ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলে। বউ-বাচ্চাসহ স্বপরিবারে থাকতে হচ্ছে একটি ঘরেই। প্রায় ২’শ জনের জন্য মাত্র ৪টি টয়লেট। এছাড়াও নেই গোসলের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা। খাওয়া, রান্না, গোসল সব কিছুই যেন এক কক্ষেই। পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্ব বদল হলেও বদল হয়নি সুইপার কলোনির বাসিন্দাদের ভাগ্য। প্রতিশ্রুতির কোনটাই পুরন করেনি জনপ্রতিনিধিরা। সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ৮০ ভাগ কোটা বরাদ্দ থাকলেও কপালে জুটছে না চাকরি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শতবর্ষি এই সুইপার কলোনিতে বসবাস করে ৫০ পরিবারের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য। এদের মধ্যে ১৩৫ জন পৌরসভার বেতনভুক্ত। যারা প্রতিদিন মেহেরপুর শহর পরিষ্কার পরিছন্ন করার কাজ করে। এই সুইপার কলনির অনেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে ডিগ্রি অর্জন করেছে অথচ কেউই কোন ধরনের সরকারি চাকুরি পাইনি।
অরুপ ভুঁইমালি ও মিনতি ভুঁইমালি দম্পতির মেয়ে অনুরাধা ভুঁইমালি পড়ছেন মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণিতে, অসক বাঁসফোর ও পুতুল বাঁসফোর দম্পতির মেয়ে পায়েল বাঁসফোর একই কলেজের একাদশ শ্রেনির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, সুরেন বাঁসফোর ও মিনা বাঁসফোর দম্পতির ছেলে দেব বাঁসফোর মেহেরপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র, বাদল বাঁসফোর ও রত্না বাঁসফোর দম্পতির ছেলে বিব্লব বাঁসফোর লেখাপড়া করেন ছহিউদ্দিন ডিগ্রী কলেজে, মিঠু বাঁসফোর ও ফুল কুমারী বাঁসফোর দম্পতির ছেলে অজয় বাঁসফোর পড়েন ঢাকার সাভারের ইসটার্ন ইউনিভার্সিটিতে।
এসব শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে তাদের বাবা-মা। এ কারনেই হতাশাই অনেকেই ছেড়েছে লেখাপড়া। কেউ কেউ আবার আফসোস করে বলছেন“আমাদের তো অনেকেই মানুষই মনে করে না”।
ঢাকার সাভারের ইসটার্ন ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রনিক্স এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ুয়া অজয় বাঁসফোর বলেন, বাবা-মা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ কি? আমরাতো দেশের অবহেলিত গোষ্ঠি। আমাদের জন্য আলাদা কোটা আছে তারপর অজানা কারনে আমরা অবহেলিত।
নানা সমস্যার কথা বলতে গিয়ে পার্থ বাঁসফোর বলেন, আমাদের ঘর করে দেওয়া হবে, বেতন বাড়ানো হবে এইরকম অনেক প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি। মাসে ৩৬শ টাকা বেতনে কি হয়? এতে কি সংসার চলে? বিভিন্ন দাবি নিয়ে পৌর মেয়রের কাছে গিয়েও কোন লাভ হয়নি।
একেকটি ঘরে ছেলে মেয়েসহ চার-পাঁচজন থাকতে হচ্ছে। আমাদের সংসার ধিরে ধিরে বাড়ছে। পর্যাপ্ত ঘর না থাকায় আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেই সাথে প্রায় ২’শ জনের জন্য মাত্র ৪টি টয়লেট। আমাদের কলোনির পাশেই আছে একটি নর্দমা। বর্ষায় সেখানকার পানি আমাদের ঘরে প্রবেশ করে।
কলোনির বাসিন্দা সাবিত্রি, পারুল, শুরেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, আমাদের প্রার্থনা করার মন্দিরটারও বেহাল অবস্থা। টিনের তেরি মন্দির। প্রতি বছরই সেটা ভেঙে যায়। নিজেদের টাকা দিয়ে সংস্কার করতে হয়। আমাদের কেউ মারা গেলে লাশ শৎকার করার জায়গাটাও নির্দিষ্ট না। সামান্য একটু জায়গা আছে সেখানে যাওয়ার রাস্তা নেই।
এ বিষয়ে মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে দলিত শ্রেনীর লোকজনের জন্য একটি স্কুল ও ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের জন্য প্রকল্প তৈরি করেছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজটি বস্তাবয়িত হবে।
এছাড়াও সার্বক্ষনিক পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আমরা তাদের নিয়ে একটি সমবায় সমিতি করেছি যাতে সুইপার কলোনির লোকজনের বিপদে আপদে সেখান থেকে তারা আর্থিক সহযোগীতা পায়। এছাড়াও আমি মেয়র হওয়ার পর তাদের বেতন বাড়িয়েছি। আগামীতে আরও বৃদ্ধি করা হবে।