পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আগাম ঘোষণা না দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় অনুতপ্ত ভারত। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।
পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের রফতানি বন্ধ না করতে ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও তা আগেই জানানোর অনুরোধও ছিল। দুই দেশের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা বোঝাপড়া হয়েছিল।
কিন্তু ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় সোমবার হুট করে পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরই দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পেঁয়াজ রফতানি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারতের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তবে ভারত আগাম ঘোষণা না দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুতপ্ত বলে আমাদের জানিয়েছে।
এদিকে এক বছরের মাথায় দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে আবার কারসাজি শুরু হয়েছে। এবারও চিহ্নিত সিন্ডিকেটটি পেঁয়াজের বাজার জিম্মি করে ফেলেছে। সোমবার ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার পরপরই সক্রিয় হয়ে ওঠে ওই চক্রের সদস্যরা।
তাদের কারসাজিতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকশ’ কোটি টাকা। সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও এখন পর্যন্ত আসেনি তেমন কোনো ইতিবাচক ফল।
তবে বাজারে ক্রেতা কম থাকায় বুধবার আগের দিনের তুলনায় পেঁয়াজের দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে ১৫-৩০ টাকা কমেছে।
এদিন পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিতে ১৫-২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা।
খুচরা বাজারে কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম ২০-৩০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, পেঁয়াজ আমদানিকারকদের একটি গ্রুপ সব সময় ওতপেতে থাকে কখন ভারত রফতানি বন্ধ করে দেয়। অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অজুহাতের অপেক্ষায় থাকে ওই চক্রটি।
সৃষ্টি করে কৃত্রিম সংকট। রাতারাতি অস্বাভাবিক গতিতে বাড়িয়ে দেয় পেঁয়াজের দাম। গত বছর পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
ওই সময় পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির দায়ে চট্টগ্রাম ও টেকনাফকেন্দ্রিক ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সব সময়ই তারা থাকে অধরা। কারণ, তাদের পেছনে রয়েছে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
৩০ আগস্ট থেকে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। ওইদিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। এর আগে জুলাইয়ের শুরুর দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা।
৩১ আগস্ট দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ টাকা। ৩ সেপ্টেম্বর আরও বেড়ে ৫৫ টাকা। ৫ সেপ্টেম্বর হয় ৭০ টাকা। ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি বন্ধ করলে দাম আরও বেড়ে ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
পরদিন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ১২০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
যারা অসাধু ব্যবসায়ী, তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো সৎসাহস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই।
আবার কর্তৃপক্ষ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সুবিধাভোগী। যে কারণে এটি একটি দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
আর সাধারণ মানুষ এ দুষ্ট চক্রের হাতে জিম্মি। তিনি আরও বলেন, মূল বিষয় হল- সুশাসনের ঘাটতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। এখানে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। সুশাসন নিশ্চিত না হলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি)। জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে পুরনো সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়েছে।
পেঁয়াজ নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গত বছর একটি চক্র মানুষকে জিম্মি করে অর্থ লুট করেছিল। এদের চিহ্নিত করার পরও ওই সময় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়নি। যে কারণে এবারও তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের নতুন মৌসুম আসতে এখনও ৬ মাস বাকি। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নতুন দেশি পেঁয়াজের জন্য।
সূত্র: যুগান্তর