দীর্ঘ প্রায় আঠার বছর পর আগামী ১০ এপ্রিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গাংনী উপজেলা শাখার ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল। আওয়ামী লীগের এই ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলকে ঘীরে উপজেলা ব্যাপি শুরু হয়েছে উৎসব মুখর পরিবেশ। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তৃণমুলের নেতা কর্মীরা। তবে, কাউন্সিলকে ঘীরে উৎসবের পাশাপাশি উদ্বেগ উৎকন্ঠাও রয়েছে নেতা কর্মীদের মাঝে।
গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে হবে এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সেখানে চলছে নানা প্রস্তুতি। সম্মেলনকে ঘীরে ইতোমধ্যে পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূরর্ণ স্থান। প্রার্থীরা উপজেলা শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ও গৃরত্বপূর্ণস্থানে শোভা পাচ্ছে সুশোভিত তোরণ।এখন ব্যানার পোষ্টার শুধু উ্পজেলা শহর নয় বিস্তৃত হয়েছে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাঁড়াডোব থেকে খলিশাকুন্ডি শেষ সীমানা পর্যন্ত।ট্রাফিক আইল্যান্ড থেকে বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি, কোথাও জায়গা খালি নেই আর। পুরো শহর এখন রঙিন বিলবোর্ডের দখলে।
গত ২০ মার্চ গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেটি স্থগিত করা হয়েছিল। তবে কাউন্সিলকে ঘীরে ইতোমধ্যে নানা ধরণের প্রপাগন্ডাও শুরু হয়েছে। কাউন্সিল হবে নাকি সিলেকশন হবে। এনিয়েও দলের নেতা কর্মীদের মাঝে নানা বিভ্রান্ত ছড়ানো হয়েছে।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কে কোন পদে স্থান পাচ্ছেন এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদক পদ কে পাবেন, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে আলোচনার ঝড়।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ৬ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় ১৬ জনের নাম আলোচনায় রয়েছেন। দুএকজন বাদে কাউন্সিলরদের কাছে এসব প্রার্থীদের আলোচনায় না থাকলেও ফেষ্টুন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দু একটা ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে আলোচনায় আসতে চাচ্ছেন।
সভাপতি পদের জন্য ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী দলের বর্তমান সভাপতি ও মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরজাহান বেগম, গাংনী পৌর সভার মেয়র আহম্মেদ আলী, ডাক্তার এএসএম নাজমুল হক, সাবেক ছাত্রনেতা রিয়াজ উদ্দীন।
সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মখলেছুর রহমান মুকুল, গাংনী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাষ্টার, নজরুল ইসলাম, গাংনী পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু, গাংনী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুনতাজ আলী, গাংনী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইসচেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমীন, গাংনী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রাশেদুল হক জুয়েল, গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন, রাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শামসুজ্জামান মঙ্গল, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, সাবেক ছাত্র নেতা সবুক্তাগীন মাহমুদ পলাশ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল ইসলাম রিন্টু চৌধুরী।
কাউন্সিল নিয়ে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিুদুজ্জামান খোকন বলেছেন, দীর্ঘদিন পরে ১০ এপ্রিল গাংনী উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি বার্ষিক কাউন্সিল। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সকল সংগঠণ বঙ্গবন্ধুর সকল সৈনিকদের প্রতি আহবান একটি উৎসব মুখর পরিবেশে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করার জন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে এমপি খোকন বলেন, কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটেও কমিটি হতে পারে। মাননীয় নেত্রীর বিশেষ নির্দেশনায়ও কমিটি হতে পারে। দুটোই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। যেটিকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অনুস্বরণ করবে আমরা সেটিই মেনে নেবো। তবে আমরা চাই কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটেই গাংনী উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক। গাংনীর সকল কাউন্সিলর যেনো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নেতা নির্বাচন করতে পারে। এতে নেতারাও যাতে তাদের কর্মীদের প্রতি দায়দায়ীত্ব থাকেন। এবং কর্মীরাও যেনো একটা তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি যেতে পারে। কাউন্সিলের পরিবেশ ভাল আছে দাবী করে তিনি বলেন সু শৃংখলভাবেই ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
কাউন্সিলের সভাপতি প্রার্থী ডাক্তার এএসএম নাজমুল হক সাগর বলেন, আমি চিকিৎসা পেশায় থাকলেও জনগণের পাশে ছিলাম। জনগণের দাবীর কারনেই চাকরী থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে এসেছি। করোণা কালিন সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। জনগণের স্বার্থে মনে প্রাণে এসব করেছি।
ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল নিয়ে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী একেএম শফিকুল আলম বলেছেন গাংনীতে ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে একটি নতুন নেতৃত্ব আসবে। এটি আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের জন্য একটি আনন্দের বিষয়।আওয়ামীলীগের মধ্যে যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে সেটা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে বিভেদহীন ঐক্যবদ্ধ একটি আওয়ামীলীগের কমিটি হবে। আমি হাইব্রীড নেতা নই। আমার বিরুদ্ধে কোনো বিতর্কও নেই। আমার রক্তে আওয়ামীলীগ আছে।ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক বিভিন্ন দায়ীত্ব পালন করেছি। আমার কাছে ব্যার্থতা ছিলনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামীলীগের কয়েকজন ইউনিট সভাপতি জানান, আওয়ামীলীগ তৃণমুলের নেতা কর্মীদের দল। এখানে হাইব্রীড জাতীয় কোনো লোক বা বসন্তের কোকিল জাতীয় কোনো ব্যাক্তিকে মেনে নেওয়া হবেনা। যারা দীর্ঘদিন যাবৎ নেতা কর্মীদের পাশে থেকে আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করেছে আমরা তাদেরই নেতা হিসেবে পেতে চাই।
আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে গাংনী পৌর ইউনিট ও ৯ টি ইউনিয়ন ইউনিটের মোট কাউন্সিলর ৩১১ জন, গাংনী উপজেলা আওয়ামী সম্মেলনে কণ্ঠভোটোর মাধ্যমে আগামীর নেতা নির্বাচন করবেন।