আজ শুক্রবার (৬ডিসেম্বর) স্বাধীনতার সূতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর দখল মুক্ত হয়েছিল স্বাধীনতারআঁতুড়ঘর ঐতিহাসিক মেহেরপুর জেলা। মুক্তিযোদ্ধাদেরগেরিলা হামলায় পিছুহাঁটা পাক হানাদার বাহিনীর শেষ দলটি ৫ ডিসেম্বর বিকেল থেকেগোপনে মেহেরপুর ছাঁড়তে থাকে। পরের দিন ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর জেলা হানাদার মুক্ত হয়।
এরআগে ২ ডিসেম্বর, জেলার গাংনী উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হলে শিকারপুরে (ভারত) অবস্থিতমুক্তি বাহিনীর অ্যাকশন ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমা প্রশাসক (এসডিও)তৌফিক ইলাহী চৌধুরী হাটবোয়ালিয়ায় এসে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করেন। মিত্রবাহিনীও মুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে ৫ ডিসেম্বর মেহেরপুরে প্রবেশ করেন। সীমান্তে পাকবাহিনীরস্থাপন করা অসংখ্য মাইন অপসারণের মধ্য দিয়ে মেহেরপুর পুরোপুরিভাবে হানাদার মুক্ত হয় ৬ডিসেম্বর।
ওই দিন মেহেপুরের জনসাধারণ এবং আপামর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বস্তরের লোক একযোগে রাস্তায় নেমে আনন্দ-উল্লাসকরেন। এর আগে, তৎকালিন সময়ে ছাত্র-জনতা, আনসার-মুজাহিদদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মুজিবনগর আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথমসরকার শপথ গ্রহন করে।
মেহেরপুরমুক্ত দিবসের স্মৃতিচারণ করে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ পাতান জানান, ১৯৭১সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রথম সরকারে শপথ গ্রহণের পর মেহেরপুর কার্যত হানাদার বাহিনীরলক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়। সে অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রেসজ্জিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে সড়ক পথে মেহেরপুর প্রবেশ করার সময় সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে উপুর্যপুরি হামলা চালায়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে মেহেরপুর সরকারি কলেজ, ভোকেশনালট্রেনিং ইন্সটিউট ও কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাক বাহিনী তাঁদেরশক্তিশালী দুর্গ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে দিশেহারা পাক সেনারা মেহেরপুরথেকে পালাবার সময় দিনদত্ত ব্রিজ, খলিশাকুন্ডি ও তেরাইল ব্রিজ এবং বৈদ্যুতিকসহ বিভিন্নস্থাপনা ধ্বংস করে।
তিনি জানান, দীর্ঘ ৯মাস মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ৫ ডিসেম্বর রাত থেকেই পাক বাহিনী গোপনেমেহেরপুর ছেড়ে পালাতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী মেহেরপুর শহরেপ্রবেশ করলে অবরুদ্ধ জনতা তাদের সঙ্গে বিজয়ের উল্লাসে যোগ দেয়। এদিন লাল-সবুজের পতাকাটাঙ্গিয়ে দেয় স্বাধীনতাকামি জনতা। সাবেকমুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলম সোনা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধকালে জেলারভাটপাড়া থেকে অনতিদূরে সাহারবাটি টেঁপুখালি, হিন্দা, লক্ষ্মী নারায়ণপুর, ধলা,গাড়াবাড়িয়া, জোড়পুকুরিয়া, ভোমরদহ, ধর্মচাকীর বহু মানুষ গনহত্যার শিকার হন। ৬ ডিসেম্বরসকাল থেকে লাল-সবুজ পতাকায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেহেরপুর।
মেহেরপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সারাদিন এ জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। সকাল সাড়ে ৮টার সময় মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড় অবস্থিতকেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটের সময়ে কলেজ মোড় এলাকা থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মোড় পর্যন্ত র্যালি, সকাল ৯ টার সময়ে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দিবসটি পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা করা হবে।