আদালতে মামলা চলমান থাকলেও বাওড় দখলে নিয়ে পুলিশ পাহারায় মাছ ছেড়েছেন ইজারাপ্রাপ্ত সমিতির সভাপতি / সম্পাদক। রবিবার সকালে কোটচাঁদপুরের জগদীশপুর বাওড়ে মাছ ছাড়েন তারা। এতে করে আরো একটি বাওড় হারালেন ওই বাওড় পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষেরা। জেলা থেকে ইজারা হয়েছে।
মামলায় নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ইজারা নিয়ে সমস্যা নাই বললেন,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উছেন মে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়,কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪ টি বাওড় রয়েছে। যার মধ্যে বলুহর বাওড়,জয়দিয়া বাওড়,কুশনা বাওড় ও জগদীশপুর বাওড়। গেল বছর বলুহর ও জয়দিয়া বাওড় পাড়ের সহস্রাধিক হালদার সম্প্রদায়ের মানুষের হাত ছাড়া হয় বাওড় দুইটি। কর্মহীন হয়ে পড়েন তারা। অনেক আন্দোলন করে বাওড় ফিরে না পেয়ে তারা এখন মানবেতার জীবন যাবন করছেন। এ বছর হাতছাড়া হল কোটচাঁদপুরের জগদীশপুর বাওড়টি। এতে করে এই বাওড় পাড়ের ৫০ টি পরিবার হারালেন বাপ দাদার রেখে যাওয়া পেশাটি।
গেল ২৫-০৩-২৪ তারিখে জগদীশপুর বাওড়ের সভাপতি গোপাল হালদার বাদী হয়ে জেলা প্রশাসকসহ ৬ জনকে বিবাদী করে বিজ্ঞ কোটচাঁদপুর সহকারী জজ আদালতে ঝিনাইদহে মামলা করেন। এরপরও রবিবার বাওড়টি দখলে নিয়ে পুলিশ পাহারায় বাওড়ে মাছ ছাড়েন,একতা মৎস্যজীবি যুব কল্যাণ সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত হালদার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন,জেলা পরিষদের সদস্য রাজিবুল কবির,এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান,বিশিষ্ট ব্যবসায়ি খন্দকার দবির হোসেন,কোটচাঁদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গৌরাঙ্গ হরি, শামীম হোসেন ও সহ উপপরিদর্শক (এএসআই) আজম হোসেনও সলেমানপুর ওয়ার্কফো স্ট্রেটের মোতুয়ালী নজরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুরের জগদীশপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি গোপাল হালদার বলেন,আশাননগর আর কুল্লাগাছা দুই মৌজায় এ বাওড়টি। বাপ দাদার আমল থেকে এ বাওড় পাড়ে আমরা বসবাস করে আসছি।বাওড়ের মৎস্য আহরন,আর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন বাওড় পাড়ের ৫০ টি পরিবার।
এরমধ্যে ৪০ জনকে নিয়ে গঠিত জগদীশপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড। যার মাধ্যমে আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে বাওড়টি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছি। ৩০ শে চৈত্র( ইংরেজি ১৩-০৪-২০২৪) সাল পর্যন্ত আমাদের সমিতির ইজারার মেয়াদ ছিল।
শনিবার সকালে বাওড় পাড়ে লাল পতাকা উড়িয়ে বাওড়টি দখল নেন,কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গী ইউনিয়ন (ভুমি) সহকারী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,শ্রীমন্ত কুমার মন্ডল একতা মৎস্যজীবি যুব কল্যান সমিতির সভাপতি। অথচ বলছেন,একতা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। আর তিনি যে নামে সমিতির ইরাজার নিয়েছেন,সেটা অবৈধ। ইজারা নিতে হলে অবশ্যই তাঁর সমবায় সমিতির লাইসেন্স থাকতে হবে।
গোপাল হালদার বলেন, আমি ইউএনও ম্যাডামের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন,তারা কোন কাগজ উনাকে দেননি। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাঙ্গীর নায়েব শরিফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, আমরা বাওড় পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষ। আমাদের পেশা একটাই। এই বাওড় কেড়ে নিলে আমাদের মরন ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।
তিনি নিরুপায় হয়ে গেল ২৫-০৩-২৪ তারিখে বাদী হয়ে জেলা প্রশাসক সহ ৬ জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নিকট দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে একতা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত কুমার মন্ডল বলেন,সমিতি দুইটি। এরমধ্যে একটি হচ্ছে কোটচাঁদপুর মংস্যজীবি সমবায় সমিতি আর অন্যটি একতা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। যার নামে জগদীশপুর বাওড়ের ইজারা নেয়া। আর অন্যটি দিয়ে বলুহর বাওড় নেয়া হয়েছে। তবে তিনি একতা মৎস্যজীবি যুব কল্যাণ সমিতির নামটি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের লাইসেন্স দিয়েছেন সমবায় অফিস।
তিনি বলেন, আমার সমিতির আমি সভাপতি আর বিশ্বজিত হালদার সাধারণ সম্পাদক। ২১ জন নিয়ে এই সমিতি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সৈয়দ আল- মামুন বলেন,শীতল হালদারের লোকজন বাওড়টি পেয়েছেন শুনেছি। তবে এর বৈধ্য কোন কাগজপত্র তারা আমাকে দেননি। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন,আইন শৃঙ্গলা অবনতি হতে পারে, এ আশংকায় গোপাল হালদার ও রাজিবুল কবির পুলিশ চেয়েছিল। এ ছাড়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যেখানে আইন শৃংখলা অবনতি হবার আশংকা করা হচ্ছে, সেখানে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উছেন মে বলেন, জেলা থেকে ইজারা হয়েছে। মামলায় নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ইজারা নিয়ে সমস্যা নাই। তবে তিনি ইজারার বৈধ কাগজপত্র হাতে পেয়েছেন কিনা তা জানান গণমাধ্যম কর্মীদেরকে।