মেহেরপুর জেলা জাতীয়ভাবে বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের জীবনমান ও সংস্কৃতির পরিচয় মেহেরপুরকে ঘিরে আবর্তিত। বর্তমান সময়ের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে তার যোগ আছে। আমরা দেখি, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাকে সাংস্কৃতিক নগরীরূপে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মেহেরপুর তন্মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সুতিকাগার বলা যায় মেহেরপুরকে। জীবন জটিলতার আবর্তে যেন এক ফালি চাঁদ হয়ে শিক্ষার উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের বাস্তবভূমিতে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভূমিকা মেহেরপুরকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। গণমাধ্যম স্বাধীন পথ চলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেই স্বাধীনতায় আমাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই। তার ফল স্বরূপে মেহেরপুরের উন্নয়ন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ‘মেহেরপুর প্রতিদিনে’র ভূমিকা চোখে পড়ার মতো।
মেহেরপুর, গাংনী ও মুজিবনগর এই তিন উপজেলা নিয়ে মেহেরপুর জেলা। মুজিবনগর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী। যা মেহেরপুর জেলার গর্ব, সম্মান ও অর্জন। আমরা এ জেলায় পেয়েছি আমঝুপি; নীলকররা যেখানে চাষ করতেন-যা আমাদের ঐতিহ্য। বর্তমান সরকার মেহেরপুর জেলার উন্নতিকল্পে স্থল বন্দর, রেল যোগাযোগের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েছে। ইতিমধ্যে ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার খসড়া অনুমোদন ও বাজেট বরাদ্দের অনুমতি পেয়েছে মেহেরপুর। সেই সঙ্গে আমঝুপিতে ‘মিনি স্টেডিয়াম’র ফলক উন্মোচন করা হয়েছে। গড়ের পুকুরের ওপর নতুন রূপে পার্কের কাজ শুরু হয়েছে। উন্নতির প্রতিরূপ হিসেবে স্কুল-কলেজে নতুন ভবন স্থাপন, নতুন মসজিদ নির্মাণ ও সংস্কারসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করণের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয় মেহেরপুর-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি মহোদয়কে। এছাড়া তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতাল নির্মান, সংস্কার ও আধুনিকীকরনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। আগামীর সম্ভাবনা আমাদের আধুনিক পথে দেখাবে এ আমাদের বিশ্বাস। মানুষের জীবন ও মানের উন্নতি সাধিত হয়েছে। অর্থ রোজগার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সম্ভাবনার অসংখ্যা পথও। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নকল্পে পেয়েছে অর্থ বরাদ্দ। জনমানুষের অর্থ সহায়তা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদানের ফলে স্বস্তি ফিরেছে নিম্নবিত্তের মাঝে। কৃষক তার নায্যমূল্যের পাশাপাশি শ্রমের মূল্যও পূর্বের চেয়ে অনেক গুণ বেশি পাচ্ছে। নদী খননের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের দ্বারা মানুষের আয়ের উৎস বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে মেহেরপুর সবসময়ই সমৃদ্ধ। মেহেরপুরের উন্নয়নের মুখপত্র বলা যেতে পারে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে। জীবনের প্রতি মুহূর্তের বোধকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটক রচনার মাধ্যমে প্রকাশ ও মঞ্চায়ণের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন উন্নতি সাধনে তৎপর ও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন স্তরের শিল্পীবৃন্দ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। যা আমাদের গর্বের ও আনন্দের। মেহেরপুর লোকসংস্কৃতি ও বাউল সম্প্রদায় বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। সর্বোপরি, বলতে পারি বর্তমানে আমরা আধুনিক মেহেরপুর পেয়েছি। যা আমাদের অহংকার ও গর্বের।
‘মেহেরপুর প্রতিদিনে’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন মেহেরপুরের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি সৌন্দর্যেরও। সত্য, সুন্দর, মঙ্গল ও আনন্দদানই ‘মেহেরপুর প্রতিদিনে’র মূল লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করছি।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।