মুরগীর খামারী থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত ৬ হাত বদল হয়ে ভোক্তা পর্যন্ত পৌছাতে একটা ডিমের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ টা পর্যন্ত। ডিমের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে খুচরা দোকানদাররা দুষছেন একে অপরকে। ডিমের বাড়তি দামের চাপ পড়ে ক্রেতাদের ওপর।
জ্বালানি তেলের দোহায় দিয়ে বাজারে দফায় দফায় বেড়েছে ডিমের দাম। জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির পর দোহাই দেওয়া হচ্ছে মুরগির খাবারের দামবৃদ্ধির। আড়তদাররা বলছেন, ডিম নিয়ে এই কারসাজিতে জড়িত খামারি এবং মুরগীর খাবার উৎপাদনকারীরা।
মেহেরপুর কাঁচা বাজার, ও গাংনীর বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যে স্বস্তি মিলছে না বিভিন্ন হাট বাজারে। গত কয়েক সপ্তাহে ডিমের মূল্য ওঠানামা করছে। স্বরণকালের ভয়াভহভাবে বেড়েছে ডিমের দাম। গত কয়েক সপ্তাহ আবার নতুন করে দাম ঊর্ধ্বমুখী ।
জেলার বিভিন্ন বাজারে এখন প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। প্রতি খাচি ডিম এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। খামারিরা প্রতিটি ডিম ব্রোকারদের কাছে বিক্রি করছেন ১০ টাকা ৩০ পয়সায়, ব্রোকাররা আড়তদারদের কাছে ১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছেন, আড়তদাররা পাইকারদের কাছে ১১ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করছেন, পাইকাররা লাইনম্যানদের কাছে ১১ টাকা ৮০ পয়সায়, লাইনম্যান ১২ টাকা এবং খুচরা দোকানদাররা ক্রেতাদের কাছে ১৩ টাকায় বিক্রি করছেন।
খুচরা দোকানদারদের কাছ থেকে জানা গেছে, ডিম ব্যবসায়ী সমিতির অসাধু সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়েছেন। তারা পাইকারি পর্যায়েই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি দাম নিচ্ছেন। ফলে খুচরা পর্যায়ে দাম মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
মেহেরপুর শহরের ডিম পাইকারী ব্যবসায়ী শংকর কুমার জানান, আগস্ট মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ডিমের দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
খামারি গাঁড়াডোব গ্রামের মিজানুর রহমান মিজান বলেন, মুরগির খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। তবে বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতারা বলছেন, ইচ্ছে করে ডিমের দাম বাড়িয়েছে উৎপাদনকারী ও অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা।
মেহেরপুর শহরের বড়বাজার এলাকার ক্রেতা জয়নাল আবেদীন ও রাজ বলেন, ‘খুচরা ব্যবসায়ী আর পাইকার বা আড়তদার যেই হোক না কেন তাদের ওপরে তদন্ত করতে হবে।
এখন মুরগির খাদ্যের দামও কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। মুরগীর খামার এবং খাবার উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। তারা এর জন্য প্রশাসনকেও দায়ী করেন। প্রশাসন থেকে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়না।
গাংনী বাজার এলাকার ক্রেতা জুয়েল মিয়া বলেন, সব যায়গায় সিন্ডিকেট কাজ করছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়না। দেশে জাতিয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর নামে একটা সংগঠণ আছে। অথচ, তাদের কোনো কাজ করতে দেখা যায়না।
ডিম ব্যবসায়ী গাংনীর পোল্ট্রি খামারি আরজ বলেন, ‘ডিমের দাম আরো বাড়বে। বাজারে মুরগির খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। আর মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিমের দাম বাড়িয়েছে খামারিরা।’
ডিমের আড়তদার পলেন বলেন, খাবারের দাম বাড়ার কারণে মুরগির উৎপাদনও কমে গেছে। খামারিরা দাম ছাড়ছে না। মুরগির খাবারের দাম যতদিন বাড়বে ততদিন ডিমের দামও বাড়বে। এখন খুচরা দোকানদাররা একটি ডিম ১৩ টাকায় বিক্রি করছে। এরকম চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে প্রতিটি ডিম ২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যাবে।’
মেহেরপুর শহরের ডিমের আড়ৎদার শংকর কুমার বলেন আপাতত ডিমের দাম কমবেনা। ইতোমধ্যে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের চাহিদা তো আছেই। সরকার মুরগীর খাবারের দাম বেধে দিতে পারেন। তাহলে ডিমের দাম এমনিতেই কমে যাবে। গত তিন মাসে প্রতি বস্তা খাবারের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা বেড়েছে বলে বলেন তিনি।
বারাদী বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আগে গ্রামে প্রচুর ডিম বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন আর তেমন বিত্রি হয়না।
মুরগী খামারী বাওট গ্রামের বুলবুল সাদাত বলেন ‘বৃষ্টির কারণে আমাদের দেশে বর্তমানে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার আরো একটা বড় কারণ হলো মুরগির খাবারের মূল্যবৃদ্ধি।’