মুজিবনগরের হিরো খ্যাত উসমান গনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই যোগদান করেন। সৎ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ইতোমধ্যে মন জয় করেছেন সবার।
করোনা মোকাবেলায় ওসমান গনির নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশব্যাপী বেশ সাড়া ফেলেছিল। মুজিবনগর থেকে সৃষ্টি বক্স সেপ হাট সারা দেশের মডেল। প্রধানমন্ত্রীও তার বক্স সেপ হাটের প্রশংসা করেছেন।
এছাড়াও করোনা প্রতিরোধে দিনরাত পরিশ্রম করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। তার প্রচেষ্টায় এখনো পর্যন্ত দেশের অন্যান্য উপজেলার মধ্যে মুজিবনগরে করোনা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ঝিনাইদহে কর্মরত থাকাকালে খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ ইউএনওর খেতাব পান তিনি।
করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থেকেছেন সাধারণ জনগনের পাশে। মুজিবনগরের নির্বাহী অফিসার হিসেবে সাধারণ মানুষের ভরসার স্থান হিসেবে ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদন্নতি পেয়েছেন। উসমান গনির বিদায় মুজিবনগরের মানুষের সাধারণ মানুষের কাছে হৃদয়বিদারক। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আফসোস প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
একজন ইউএনও হিসেবে অফিসিয়াল কর্মকাণ্ডের বাইরে মানবিক বোধ সমপন্ন তিনি অনেক কাজ করেছেন। এতে অনেক অসহায়ের ভাগ্য বদলেছে। একজনকে গাঁজা খাওয়ার অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যেমে সাজা দিতে গিয়ে সাজার পরিবর্তে দিয়ে এসেছেন ঘর। একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে তার অবদান বেশ। তিনি মুজিবনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের একজন প্রতিবন্ধি মানুষের মেয়ের লেখা পড়ার খরচের ব্যবস্থা করেছেন।
মেয়ের বাবা রতনপুর গ্রামের মাইকেল মন্ডল জনান, আমার মেয়ে মেঘলা মন্ডল। সে এবার বাগোয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সাইন্স থেকে (এ+) পেয়েছে। আমার মেয়ের স্বপ্ন সে একদিন অনেক বড় হয়ে আমাদের কষ্ট ঘুচাবে। কিন্তু আমি একজন প্রতিবন্ধি মানুষ হয়ে আমার মেয়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছিলাম না। তাই আমার মেয়েকে নিয়ে একদিন ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম।
তিনি আমার ঘটনা শোনার পর আমার মেয়ের পুরো পরাশুনার দায়িত্ব নেন। যেটা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। তবে তিনার বিদায়ের কথা শুনে খুব কষ্ট লাগছে। তবে সব সময় দোয়া করবো তিনি যেখানেই থাকুক তিনি ভালো থাকুক।
ঘর পাওয়া ইসলাম শেখ (বিহারী) জানান, আমাকে কোন এক কারণে ইউএনও স্যার জরিমানা করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি আমার ঘরবাড়ি দেখে তিনার মানবতার দিক থেকে আমাকে সাজা না দিয়ে একটি ঘরের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি আমাকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছেন। ইউএনও স্যারের মত লোক হয় না।
গৌরীনগর গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী ও মুজিবনগর কোভিট-১৯ ভলেন্টায়ার সদস্য সাবিরিন রহমান জানান, উসমান গনি স্যারের মত একজন একটিভ অফিসার এর আগে দেখিনি। তিনি কখনো অলস্য দেখান নি। স্যারের কাছে যে কোন সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি সাথে সাথেই সেই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছেন।
তাছাড়া আমি ভলেন্টিয়ার হিসাবে স্যারের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যে কোন প্রয়োজনে স্যার আমাদের সব সময় সহযোগীতা করে এসেছেন। মুজিবনগরের মত জায়গায় এমন একজন একটিভ অফিসার থাকায় মুজিবনগর আগের থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তবে স্যারের বদলির খবর শুনে খুব খারাপ লাগছে।
মুজিবনগর উপজেলার অনেকেই জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনি মুজিবনগরের মানুষের জন্য যা করেছেন এর আগের কোন ইউএনওকে এরকম ভাবে কাজ করতে দেখিনি। তিনি সাধারণ মানুষকে পড়তে পারতেন । এটি তার অনেক বড় গুন। উসমান গনি স্যারের মত একজন সৎ অফিসার পাওয়া সত্যিই একটা ভাগ্যের ব্যাপার। স্যার মুজিবনগর থেকে চলে গেলে আমার একজন ভালো অভিভাবক হারাবো। তার কাজ কর্ম মুজিবনগরের জন্য একটি স্মৃতি হয়ে থাকবে।
মুজিবনগরের হাজারো মানুষকে কাদিয়ে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উসমান গনির অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বাধীনতার সৃতিকাগার ঐতিহাসিক মুজিবনগরের মত জায়গায় চাকুরী করা একটি ভাগ্যের ব্যাপার। আমি এই জায়গায় একজন ইউএনও হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
মুজিবনগরের মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক সহ সকলেই অনেক ভালো। তারা সকলেই আমাকে সবসময় সহযোগীতা করে এসেছি। সবচেয়ে বড় গর্ভের বিষয় হলো মেহেরপুর জেলায় একজন প্রতিমন্ত্রী আছেন। যিনি মন্ত্রালয়ের সবচেয়ে বড় দায়িত্বে আছেন। তিনি সব সময় মুজিবনগরের উন্নয়নের কথা ভাবেন। সব সময় ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। ভালো কাজ করার মত একটি সুন্দর পরিবেশ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন।
এখানে চাকুরী করতে এসে এখানকার মানুষের জন্য আমার মনে অন্য ধরণের একটি মায়া জন্মে গেছে। সকলকে ছেড়ে, মুজিবনগর ছেড়ে চলে যেতে আমারো খারাপ লাগছে। তবে একজন সরকারি চাকুরীজীবী সারাজীবন এক জায়গায় থাকতে পারে না। সরকারের নিতিমালা অনুযায়ী সকলকেই বদলি হতে হবে।