আলমডাঙ্গা উপজেলায় বোরো মৌসুমে ধানের পরিবর্তে ভুট্টা ও সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। কম খরচে অধিক ফলন ও সরকারি প্রণোদনার বীজ ও কীটনাশক সার পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবছর ভুট্টা ১’শত ১০ হেক্টর ও সরিষা ৩’শত ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। পাশাপাশি কিছুটা বেড়েছে আলু ও গম চাষ।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে ধানের দাম কম এবং সেচ, সার ও কীটনাশকে খরচ বেশি হওয়ায় বোরো ধানের আবাদে তেমন একটা লাভ হয় না। অন্যদিকে কম খরচে ভুট্টা চাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা বোরোর আবাদ কমিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়াও আলু ও গম চাষেও ঝুঁকছে কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২৯ হাজার ২৭৫ হেক্টর। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে ১৩ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়। এছাড়া সরিষা ২ হাজার ১৫০ হেক্টর, আলু ১’শত ৪৮ হেক্টর, গম ৩’শত ৬০ হেক্টর। (রোপা আমন) এছাড়া ধান চাষ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৫২৪ হেক্টর জমিতে।
এক বছরের ব্যবধানে ভুট্রা ও সরিষা চাষ বেড়েছে ৪ শত ৪০ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে ভুট্রা চাষ হচ্ছে ১৩ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া সরিষা ২ হাজার ৪৮০ হেক্টর, আলু ২ শত ৬৩ হেক্টর, গম ৩ শত ৯৯ হেক্টর। এদিকে গত মৌসুমের তুলনায় এবছর ১৬ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার বলেন, গত বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ভুট্টা এবং দুই বিঘায় বোরো আবাদ করেছিলেন। তবে এবার তিনি তিন বিঘায় ভুট্টার আবাদ করেছেন এবং তিনি আরও ১২ শতক জমি লিজ নিয়েছেন, ওই জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন।
প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো আবাদে খরচ বেশি হলেও ধানের দাম কম। এক বিঘা জমিতে ১৬ থেকে ২০ মণ ধান হয়। প্রতি মণ ধানের দাম ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। আর এক বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ৩০ থেকে ৩৫ মণ। প্রতি মণ ভুট্টার দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ভুট্টায় সেচ খরচও কম। এক মণ ধানে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৮০০ টাকা এবং ভুট্টায় প্রায় সাড়ে ৬০০ টাকা। উৎপাদন ব্যয় কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় তাঁরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা জেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভিন বলেন,‘ কীটনাশক সার ও বীজের পাশাপাশি বোরো চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে আমন আবাদ স্থিতি রয়েছে। এ কারণে ধান উৎপাদনে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সরকারি প্রণোদনা সার বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে সকল কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন।