আলমডাঙ্গায় মোটর সাইকেলসহ সবুজ নামের এক যুবককে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাগর (২২) ও জহুরুল ইসলাম (৪৬) নামের দু’জনকে আটক করে পুলিশ। আটক সাগর ঘটনায় জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে আটকৃতদের তথ্যের ভিত্তিত পাপ্পু নামের আরও একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে আলমডাঙ্গা থানায় সহকারি পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত এ তথ্য জানিয়েছেন।
আটক আটক সাগর (২২) পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে ও জহুরুল ইসলাম (৪৬)। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ১৩ নভেম্বর উপজেলার বাদেমাজু গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে পুরাতন মোটর সাইকেল ব্যবসায়ী সবুজকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে যায় ঘতকরা । তারা ফরিদপুর গজারিয়ার মাঠের একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর লাশের পরিচয় গোপন রাখতে নিহতের মোটরসাইকেলসহ তাকে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য দিক নির্দেশনা দেন। এসপির দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান,আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি টিম গত ১৪ নভেম্বর ভোরে অভিযান পরিচালরা করেন। এ সময় পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে সাগর আলী ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার মৃত ইউসুফ আলী বিশ্বাসের ছেলে জহুরুল ইসলাকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বকসিপুর গ্রামের লাল্টু আলীর ছেলে নাজমুল হক পাপ্পুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আমামী সাগর হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে অকপটে হত্যার বর্ণনা প্রদান করে। এবং স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয় এ হত্যাকান্ডের আগে পৌর এলাকায় অবস্থিত সরকারি ফুড গোডাউনের মধ্যে হত্যার বিষয়ে ফুড গোডাউনের নৈশপ্রহরী জহুরুল ইসলামসহ কয়েকজন একাধিক বৈঠক করে বলে পুলিশের তদন্তে এ তথ্য উঠেছে । ঘটনার সাথে জড়িত আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা উপজেলার গড়চাপড়া-কাশিপুর সড়কের গজারিয়া মাঠের বিজন মেহগনি বাগান থেকে পুলিশ ১৩ নভেম্বর সকালে বাদেমাজু গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে সবুজ আলীকে মোটরসাইকেল চাপা দেওয়া অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা লাশ উদ্ধার করে । সবুজ পুরাতন মোটর সাইকেল কেনা বেচার ব্যবসা করতো। ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় সবুজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন জনৈক অনিকের ফোন পেয়ে। পরে রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। পরদিন সকালে পোড়ানে লাশ উদ্ধার হয়। এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে গত ১৪ নভেম্বর এজাহার দায়ের করেন নিহত সবুজের পিতা জয়নাল আবেদীন।
নৃশংস এ হত্যাকান্ডের মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে হত্যাকান্ডে জড়িত মাস্টারমাইন্ডসহ দুজনকে গ্রেফতার করে হত্যা রহস্য উন্মোচনের সাফল্য অর্জন করায় ও,আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় পুলিশ সুপারের বলিষ্ঠ তত্বাবধান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান লালন ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন এজেন্সির তৎপরতা, এক সাথে অসাধারণ টিমওয়ার্কের কারণে প্রশংসায় ভাসছেন পুলিশ প্রশাসন।