আলমডাঙ্গায় নবম শ্রেণীর ছাত্রীর বাল্য বিবাহ অনুষ্ঠান পন্ডু করেছে উপজেলা প্রশাসন।
গতকাল সোমবার দুপুরে এ বিয়ের আয়োজনের অপরাধে কনের পিতাকে ৫ হাজার জরিমানা করেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিমা শারমিন, থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আশিকুর রহমান, এসআই গোলাম মোস্তফাসহ সঙ্গীয় ফোর্স।
স্থানীয়রা জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী ইউনিয়নের ডামোশ গ্রামের আরমান হোসেনের নাবালীকা মেয়ে আলেয়া খাতুন (১৫) এরশাদপুর একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।
গত বছর জেএসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। ইতো মধ্যে আলমডাঙ্গার ডামোশ গ্রামেবাল্য বিবাহ নিরোধ কমিটি গঠন করে গ্রামের কিছু উঠতি বয়সী স্কুল ছাত্রীরা।
বাল্য বিবাহে শিকার স্কুল ছাত্রী ওই বাল্য বিবাহ নিরোধ কমিটির সদস্য। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাই শাহিন তার নেতাকর্মীরা জোরপূর্বক স্কুল ছাত্রীর বিয়ে দিবে বলে ফুঁসলে তোলে ছাত্রীর পিতাকে।
আলমডাঙ্গার খাদেমপুর ইউনিয়নের রংপুর গ্রামের রনি (২৬) দীর্ঘদিন যাবৎ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাছের খামার দেখাশোনা করেন। এরই সূত্র ধরে, আরমানের নাবালীকা মেয়ে আলেয়ার সাথে রংপুর গ্রামের রনির সাথে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিবাহ আয়োজন করে।
এরই সংবাদের ভিত্তিতে, স্থানীয় পত্রিকার কয়েকজন সাংবাদিক রবিবার সন্ধ্যায় ওই বাল্য বিবাহ বাড়ি উপস্থিত হয়ে নাবালীকার জন্মনিবন্ধন ও স্কুল সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাই শাহিন ও তার লোকজন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সামাজিক ভাবে হেউ প্রতিপন্ন করে। এলাকার লোকজনতার সামনে দম্ভক্তি দেখিয়ে বলে, পুলিশ এসে দেখি কি ভাবে বিবাহ বন্ধ করে।
এদিকে, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান চঞ্চল ইমোতে ওমরা হজপালনরত অবস্থায় সাংবাদিকদের সাথে অশ্লীল ভাবে আচরণ করেন।
এই ঘটনার পরই স্থানীয় সাংবাদিকেরা নারী ও শিশু নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইন মন্ত্রানালয়ে, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহি অফিসার লিটন আলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি), আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আশিকুর রহমানকে বাল্য বিবাহের বিষয়টি অবগত করেন।
বাল্য বিবাহ এর ঘটনায় এরশাদপুর একাডেমির প্রধান শিক্ষক সামিম হোসেন বলেন, আমরা সরাসরি বিবাহ ভাঙতে পারি না। আমরা সকল শিক্ষকই বাল্য বিবাহ না দেওয়ার পক্ষে। তিনি নিশ্চিত করেন, আলেয়া খাতুন এরশাদপুর স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী।
এই ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে বিবাহ পন্ড করে দিয়েছে। কেউ বলছে ৩মাস পূর্বে বিবাহ হয়ে গেছে। কিন্তু অল্প বয়সে বিবাহ দেওয়া হয়েছে তার কাগজ পত্র পাইনি। যে কাজি বিবাহ পড়িছে তাকে পুলিশ খুঁজছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)সিমা শারমিন বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে বাল্য বিয়েটি বন্ধ করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের বাল্য বিয়ের কূফল সম্পর্কে অবগত করা হয়। পরে উভয় পক্ষের অভিভাবকরা কিশোরীর বিয়ের বয়স ১৮ না হওয়ার আগে বিয়ে দিবে না বলে মোচলেকা প্রদান করেন। বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ সনের ৬ এর ১ ধারায় কনের বাবাকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ।
-আলমডাঙ্গা প্রতিনিধি