বিদেশ থেকে ফিরেই সদ্য বিবাহিত তৃতীয়তম স্ত্রীকে বাড়িতে তুলে বড় বউকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেন কুয়েত প্রবাসী মোস্তাক। তিন বছরের শিশুকন্যা মাহা ও সাত মাসের শিশুপুত্র মোহাম্মদকে কোলে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে বড় স্ত্রী নাজমা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নাজমাকে ঘরে তুলে দিয়ে আসে। এরপর দীর্ঘ ৯ বছরের সংসার জীবনের শেষে দিনের বেলায় তারই ঘরে অন্য একটি মেয়েকে অঝোরে কাঁদতে থাকে নাজমা।
থানার এসআই জুয়েল বলেন, নাজমার অভিযোগ পেয়ে ওসি স্যারের নির্দেশে তাকে বাড়িতে তুলে দিয়ে এসেছি। তার স্বামী মোস্তাক বলেছে সে নাজমাকে তালাক দিয়েছে। তবে তালাকনামার কাগজ না দেখানো পর্যন্ত নাজমাকে ওই বাড়িতেই থাকতে বলেছি। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাজমা জানান, সাত মাস আগে তার স্বামী মোস্তাক কুয়েত থেকে দেশে আসেন। এসেই আলমডাঙ্গার হাজিমোড়ের হোমিওপ্যাথি ডাক্তার রূপার সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পরপরই তাদের ভেতরে অন্যরকম সখ্যতা গড়ে ওঠে। দিনে ও রাতে মোস্তাক রূপাকে ঘরে এনে তার সামনেই তারা ফুঁর্তি করতো। প্রতিবাদ করলে মারধর করতো। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিত।
প্রতিবেশীরা জানায়, মোস্তাক দেশে এসে যে ক‘মাস ছিল সে রূপাকে বাড়িতে এনে রাখতো। বড় বউকে মারধর করতো। এ ঘটনা জানাজানি হলে পাড়ার লোকজন কয়েক দফা তাদেরকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। তবে কিছুদিন পরেই মোস্তাক আবারো কুয়েতে পাড়ি জমান।
গত বুধবার ( ১ জুলাই) মোস্তাক আবারও দেশে ফিরে আসে। বাড়ি ফেরার সাথে সাথে রূপাও মোস্তাকের বাড়িতে এসে হাজির হয়। এবার মোস্তাক ঘোষনা দেয় সে সাত মাস আগেই রূপাকে বিয়ে করেছে এবং একই সাথে নাজমাকে তালাকও দিয়েছে। মুহুর্তে নাজমার আপন ঘর পর হয়ে যায়। নাজমা এতে প্রতিবাদ করলে মোস্তাক ও রূপা দুজনে মিলে দুই শিশুসহ তাকে বাড়ি থেকে পিটিয়ে বের করে দেয়। নাজমা পথে নেমে পড়ে। প্রতিবেশীরা মোস্তাক ও রূপার ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে। তারা নাজমাকে থানা পুলিশকে জানাতে পরামর্শ দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে নাজমাকে বাড়িতে তুলে দিয়ে আসে। তবে মোস্তাক নাজমাকে তালাক দেয়ার কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হারদী ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের রবিউল খলিফার ছেলে মোস্তাক প্রথমে ঝিনাইদহের শাবানার সাথে বিয়ে করে। সেই সংসারে শাকিল নামের এক ছেলে রয়েছে তার। কয়েক বছরের মাথায় মোস্তাক প্রথম স্ত্রী শাবানাকে তালাক দিয়ে দেয়। ছেলে শাকিলের বয়স এখন কুড়ি বছর।
এরপর সে ২০১১ সালে চক মেহেরপুরের শামসুল হকের মেয়ে নাজমাকে বিয়ে করে। নাজমার সংসারে তিন বছরের শিশুকন্যা মাহা ও সাত মাসের মোহাম্মদ নামের একটি শিশুপুত্র রয়েছে। গত সাত মাস আগে কুয়েত থেকে মোস্তাক দেশে ফিরে আবারো শহরের হাজি মোড়ের হোমিও ডাক্তার রূপার সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পরপরই তারা দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রূপারও এটি দ্বিতীয় বিয়ে বলে জানা গেছে। এরআগে চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুর গ্রামের হেলাল নামের একটি ছেলের সাথে রূপার বিয়ে হয়। দেড় বছর আগে হেলালের সাথে রূপার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
রূপা জানিয়েছে, সাত মাস আগে মোস্তাক দেশে এলে তার বাড়িতে বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে পরিচয় হয়। এরপর তারা একে অপরের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর কিছুদিন পরই কুষ্টিয়ার মিরপুরের একটি কাজি অফিসে গিয়ে তারা বিয়ে করে।
মোস্তাক জানায়, একাধিক বিয়ে করা তো আইনেই আছে। আর সরকারী নিয়মে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ারও নিয়ম আছে। আমি আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আরেকটি বিয়ে করেছি।
দুইটি শিশু সন্তানের জন্য এটা অন্যায় জানালে তিনি চুপ করে থাকেন। তবে সর্বপ্রথম স্ত্রী শাবানার ছেলে সাকিলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেও তো বড় হয়েছে। তার বয়স এখন ২০ বছর।
নাজমা জানায়, তার পিতা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। বৃদ্ধ মা বাড়িতে। এখন তার আর অন্য কোথাও যাওয়ারও জায়গা নেই। তিনি জানান, কোলে তার দুইটি শিশু সন্তান। এই মাসুম দুইটি বাচ্চাকে নিয়ে এখন কোথায় যাব? সন্তানদের ওপরে মোস্তাকের কোন মায়া-মহব্বত নেই।