তানভির সোহেল,আলমডাঙ্গা
আলমডাঙ্গার ব্যায়ামাগারসহ বেশ কয়েকটি জায়গা আত্মসাত করতে মাঠে নেমেছে জালিয়াত চক্র। ইতিপূর্বে আলমডাঙ্গা শহরের কয়েক হাজার কোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি আত্মসাত করতে মাঠে নামে জালিয়াত চক্র।
এখন তা নিজেদের আয়ত্বে নিতে জালিয়াত চক্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ৮০ দশকে। ওই সময় জমির মালিকের নিকট থেকে জমি কিনে ব্যায়ামাগারের প্রয়াত পরিচালক ইসলাম খানের উদ্যোগে আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি অর্থেই ব্যায়ামাগারের নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মিত হয়।
এই ব্যায়ামাগারের শিক্ষার্থিরা জাতীয় প্রতিযোগিতা ছাড়াও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফাল্য লাভ করে জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে বিভিন্ন সময়। ব্যায়ামাগারটি রেজিস্ট্রেশন না থাকলেও এটাকে আলমডাঙ্গাবাসি তাদের জাতীয় সম্পদ হিসেবেই মানেন। আজ এত বছর পর এই ব্যায়ামাগারের জমিও আত্মসাত করতে জালিয়াত চক্র তৎপরতা শুরু করেছে।
একই চক্র মাঠে নেমেছে অবৈধভাবে অন্যের সম্পত্তি আত্মসাত করতে। ইতোমধ্যেই এ চক্রের কয়েকজন প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। গিরিধারী লাল মোদীর কর্মচারি সুশীল কুমার শহরের এক অসৎ দলিল লেখক কাম ভুমি পরিমাপকারি সুধাংশু কুমারের নেতৃত্বে এ চক্রটি তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। শহরে জমিজমা সংক্রান্ত যত দুর্নীতি ও অশান্তি বিরাজ করছে, তার অধিকাংশের পেছনে রয়েছে ধুরন্ধর এই দলিল লেখকের হাত রয়েছে বলে সচেতন মহল মন্তব্য করেছেন।
স্খানীয় সুত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা হাইরোডে রাম প্রসাদ আগরওয়ালা নামের এক ব্যক্তির একটি দুইতলা বাড়ি রয়েছে। এ বাড়ির সাথে রয়েছে বেশ প্রশস্ত এক খন্ড জমি। জমিসহ বাড়িটি প্রাচীরঘেরা। রাম বাবু প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগে। তার ছেলে কানাডা প্রবাসী। দেশে আসেন না বললেই চলে। তাদের বাড়ির পেছনে গোবিন্দপুর গ্রামের মকবুল হোসেন বিশ্বাস ও রহমতুল্লাহ বিশ্বাসের ৩০ শতক জমি রয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা যখন লাল্টুর প্রতাবে প্রকম্পিত সে সময় লাল্টু বাহিনির কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে গোবিন্দপুর গ্রামের দুই ভাইয়ের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া হয়।
রামবাবুর চৌহদ্দীর প্রাচীর ভেঙ্গে দুই ভাইয়ের জমিসহ নতুন করে প্রাচীর দিয়ে আটকে রাখা হয়। অনেক দেন দরবার করেও লাভ হয়নি। জমির মালিকদের পক্ষে একাধিকবার রাম প্রসাদ আগরওয়ালার ছেলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছেন।
তিনি জানিয়েছেন যে, “ওই জমি দখলের ঘটনা আমি জানতাম না। আমাদের যতেষ্ঠ জমি আছে। নতুন করে জমির প্রয়োজন নাই। সুশীলরা আমাদেরকে না জানিয়েই দখল করেছে। প্রয়োজনে আমি আপনাদের জমি ক্রয় করে নিতে চাচ্ছি। “বেশ কয়েক বছর ধরে জমি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে শেষে এক তার অংশের মালিক মকবুল বিশ্বাস ১৫ শতক জমি ২০১৬ সালে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকী ১৫ শতক জমি রহমতুল্লাহ বিশ্বাস বিক্রি করেন নি। তিনি মারা যাওয়ার পূর্বে তার দুই মেয়ে রাহিমা খাতুন ও নাজমা খাতুনকে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে গেছেন। দুই মেয়েকেও এই চক্রটি জমির দখল দিচ্ছে না। কয়েক বছর ধরে নানাভাবে হয়রানি করছেন। মাত্র ২৭ লাখ টাকা নিয়ে বিক্রি করে দিতে প্রস্তাব দিচ্ছেন। নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।
নাজমা খাতুনের স্বামী রেজাউল হক জানান, “আমাদের পরিচিত বা পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে, এমন ব্যক্তিকে ধরে বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছেন। নানা হুমকি দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জমির দখল নিতে রেজাউল হক পক্ষ জমির উপর একটি স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করেন।
এ সময় সুশীল চক্র আলমডাঙ্গা থানায় ছুটে গেলে থানা পুলিশ উভয়পক্ষকে ডেকে মীমাংসার জন্য বলেছেন। গত ১০/১২ দিন পূর্বে থানায় উভয়পক্ষ হাজির হন। কিন্তু সুশীল চক্র জমি নিজেদের দখলে রাখার যুক্তির সপক্ষে কোন দালিলিক ভিত্তি দেখাতে পারেন নি। উপস্থিত অনেকে প্রশ্ন তোলেন- জমি যদি রাম প্রসাদ আগরওয়ালার হবে তাহলে এক ভাইয়ের অর্ধেক অংশ নতুন করে আবার কিনতে গেলেন কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, একটি শক্তিশালী জালিয়াতচক্রের হয়ে কাজ করছেন সুশীলচক্র। টাকার বিনিময়ে তারা নতুন করে মাঠে নেমেছেন। এ চক্রটিকে প্রায়ই আলমডাঙ্গা ভূমি অফিসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আড্ডা দিতে দেখা যায় বলেও অনেকে দাবি করেছেন।
এদিকে ২০১১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাসের গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর আলমডাঙ্গা শহরের ৪ হাজার কোটি টাকার ৯ বিঘা ১০ শতক জমি আত্মসাত করতে পুরো প্রশাসন কিনে নেওয়ারও পরিকল্পনা করেন। শুধু তাই নয় মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশল নাগরিকত্বের সনদও নিয়েছেন তারা। চুয়াডাঙ্গা অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি ট্রাইবুন্যাল বিজ্ঞ জেলা জজ আদালতে জমি পেতে আর্জিও করেন।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় আলমডাঙ্গা শহরের বহু অবাঙ্গালী ব্যবসায়ি তাদের বাড়ি ঘর, জমি জমা, ব্যবসা বাণিজ্য ফেলে রাতারাতি দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান। এরাই ছিলেন আলমডাঙ্গা শহরের সবচে’ ধনাঢ্য। তাদের সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি ও পরবর্তীতে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করে। ওই সম্পত্তি কেউ কেউ বিনিময় করতে পারেন। অনেক সম্পত্তি অনেকেই জাল করে ভোগ দখল করছে। সরকারীভাবে অনেক সম্পত্তি (ক তফসিলভুক্ত) লিজ প্রদান করেছেন। এখনও অনেক সম্পত্তি পতিত পড়ে রয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাশ করা হলে ওই অর্পিত সম্পত্তির পূর্ব মালিকের বংশধরদের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আলমডাঙ্গার কিছু প্রভাবশালী চক্র উৎসাহিত হয়ে উঠে। তারা অর্পিত সম্পত্তির পূর্ব মালিকের বংশধরদের সাথে যোগাযোগ করে। অল্প টাকায় তারা কৌশলে ওই কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি হস্তগত করে লাভবান হতে চায়। ভারতীয় রাগরিক পুরুষোত্তম পাডিয়া ও রাজারাম পাডিয়াকে আলমডাঙ্গা পৌরসভায় অবৈধভাবে নাগরিক বানায়।
অথচ, দিল্লির জিবি রোডের সুরেখা বিল্ডিংয়ে অনুপ সেলস এন্টারপ্রাইজের মালিক পুরুষোত্তম পাডিয়া ও তার অপর ভাই কলকাতার ২৫/১ সেন্ট্রাল রোডের অনুপ সেল্স এন্টারপ্রাইজের কর্নধার রাজারাম পাডিয়া। সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা ভোটার হয়েছেন। ভারতের বিখ্যাত দুই ব্যবসায়ী হওয়া সত্বেও তারা ভোটার আবেদনপত্রে নিজেদেরকে আলমডাঙ্গার বেসরকারী চাকুরিজীবী হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।