মৃত্যুর ৭২ ঘন্টার মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ভিসেরা রিপোর্ট প্রেরণের কথা থাকলেও ২২ দিনেও নমুনা সেটি পাঠাননি মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ফলে ইবি ছাত্রী নিশাত তাসনিম উর্মির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে ধ্রুমজাল।
উর্মি হত্যাকান্ডের ভিসেরা রিপোর্ট নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য মামলার বাদীর মধ্যে তৈরী হয়েছে আশংকা। ভিসেরা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে না পাঠিয়ে মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ফেলে রাখায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট নয় ছয় হতে পারে বলেও আংশকা করছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।
৮ সেপ্টেম্বর রাতে উর্মির মরদেহ উদ্ধার হলেও ৩০ সেপ্টেম্বর উর্মির ভিসেরা কৌটাবদ্ধ অবস্থায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালেই পড়ে ছিল।
পরে সাংবাদিকদের চাপাচাপিতে তড়িঘড়ি করে গত ১ অক্টোবর প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও পুলিশের কাছে চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে সেই চিঠির নির্দেশনা পেয়ে উর্মির মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন মিয়া নমুনা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
অথচ, মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোখলেছুর রহমান বলেন ভিসেরা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই পুর্নাঙ্গ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে।
উর্মির মরদেহের প্রাথমিক ময়নাতদন্ত করেছেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তিনচিকিৎসক।
এরা হলেন, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা: মোখলেছুর রহমান, মেডিকেল অফিসার ডাঃ বেলাল হোসেন সুমন ও ডাঃ তারেক আহমেদ। ময়নাতদন্তের নির্দিষ্ট ফরমের মেডিকেল অফিসারের মতামতের ঘরে ডাঃ বেলাল হোসেন সুমনের ইংরেজীতে লেখা মতামতের অর্থ হচ্ছে-ভিসেরা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে অপেক্ষা করতে হবে।
আরএমও ডাঃ মকলেছুর রহমান বলেন, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন ভিসেরা নিতে আসেন তখন চিঠি করে দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে না চাওয়া পর্যন্ত চিঠি করা হয় না।
পুলিশের পক্ষ থেকে নমুনা নেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টের সাথে ভিসেরা নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে একটি চিঠি ইস্যু করার কথা হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ। সেই চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশের কিছু করার নেই। এখন পর্যন্ত কোন চিঠিপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেয়নি বলে নিশ্চিত করেন গাংনী থানার ওসি।
এই মামলার প্রাথমিক ময়ানাতদন্ত রিপোর্ট নিয়েও আরেক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বাদি পক্ষে। ভিসেরা পাঠাতে সময়ক্ষেপণ, রিপোর্ট পাঠানো নিয়ে পুলিশের উপর দায় চাপানো, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের অসম্পূর্ণ মতামত প্রদান এবং ভিসেরা হাসপাতালে ফেলে রাখার বিষয়টি ধুম্রজালের সৃষ্টি করেছে।
তবে, ডাঃ মোখলেছুর রহমান জানান, ভেবেছিলাম ভিসেরা চলে গেছে। কিন্তু অফিস থেকে যে পাঠানো হয়নি তা আমার জানা ছিল না। কারণ এতোদিন পড়ে থাকার কথা নয়।
পুলিশের দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে যতগুলো ভিসেরা পাঠানো হয়েছে তার প্রত্যেকটি পুলিশের পক্ষ থেকে চাওয়ার পরই দেওয়া হয়েছে। আগে থেকে চিঠি করলে সেই চিঠি পড়ে থাকে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে যখন নমুনা নিতে আসা হয় তখন চিঠি করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ইবি ছাত্রী উর্মিকে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে উর্মিকে পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তার পরিবার। এমন অভিযোগে তাদের নামে মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার। ওই মামলায় উর্মির স্বামী ও প্রিন্সকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে গাংনী থানা পুলিশ। বর্তমানে তারা মেহেরপুর জেলা কারাগারে হাজতবাসে রয়েছেন। মামলার অপর আসামি প্রিন্সের মা পলাতক রয়েছেন।