আধুনিক সব সুবিধা নিয়ে ঈদের পর বাজারে আসছে দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রথম গাড়ি। মাত্র ৩০ লাখ টাকায় মিলবে সাত আসনের এ গাড়ি। এটি বাজারজাত করছে হোসেন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলা কারস লিমিটেড’। যাতে প্রথমবারের মতো ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা থাকবে।
করোনার প্রকোপ হ্রাসসহ সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরই দেশীয় ব্র্যান্ড ‘বাংলা গাড়ি’ রফতানিতে যাবে গ্রুপটি। প্রাথমিকভাবে ৩০টি গাড়ি ট্রায়ালে আছে, এরই মধ্যে ১০টি বিক্রি হয়ে গেছে।
হোসেন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কোটি টাকা খরচে মার্সিডিজ-বিএমডব্লিউ গাড়িতে একজন গ্রাহক যে সুবিধা পান বাংলা গাড়িতে সে সুবিধা মিলবে মাত্র ৩০ লাখ টাকায়।
এটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো- গাড়িটি পোশাক খাতের মতো মেইড ইন বাংলাদেশ নাম বহন করবে। দেশকে গাড়ি উৎপাদনে নেতৃত্ব দেবে জাপান, চায়না ও ভারতের মতো। প্রথম পর্যায়ে দেশের ৮ বিভাগে থাকছে বাংলা গাড়ির শোরুম। তাছাড়া আরও ৩০টি শোরুম খুলতে যাচ্ছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
ইতোমধ্যে রাজধানীর তেজগাঁও ১৮১-১৮২ নম্বর ঠিকানায় ‘বাংলা কার’র একটি শোরুম চালু করা হয়েছে। যেখানে দেশীয় নিজস্ব ব্র্যান্ডের ৮ রঙের গাড়িটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ২০২১ সালের নতুন মডেলের গাড়িও শোভা পাচ্ছে শোরুমে।
তিনি বলেন, বাংলা কার তৈরির কারখানা নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটিতে। সেখান থেকে ১২ ধরনের গাড়ি বাজারজাত করা হবে। এর মধ্যে থাকবে প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাস, লরি ট্রাক, পিকআপ উল্লেখযোগ্য।
তবে গাড়ি বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখনও শুরু হয়নি। ২৬ মার্চ এর উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড পরিস্থিতির কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে রোজার ঈদের পরই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাংলা গাড়ি নির্মাণের জন্য জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে হোসেন গ্রুপ। ইশুজু ইঞ্জিন, জাপানি বডিতে নির্মিত গাড়িতে ‘লেখা থাকবে মেইড ইন বাংলাদেশ।’
এ প্রসঙ্গে এমডি বলেন, আমরা দেশীয় ব্র্যান্ড, দেশীয় ডিজাইনে গাড়ি ম্যানুফ্যাচারিংয়ে যাচ্ছি। ইসুজু জাপানিজ ইঞ্জিন, চায়না বডি এবং ইন্দোনেশিয়ার চেসিস দিয়ে গাড়িগুলো তৈরি করছি। এসব গাড়ি অন্য গাড়ি থেকে ভিন্ন। ফোটন বা মিতসুবিশি একটা বা দুটি মডেলের গাড়ি তৈরি করতে পারবে কিন্তু বাংলা কারস সব মডেলের গাড়ি তৈরি করতে পারবে। ১৫০০ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত যেটা ক্রেতার চাহিদা সেটা আমরা তৈরি করে দিতে পারব। আবার ৮ রঙের গাড়ি থাকলেও ক্রেতা যদি অন্য কোনো রঙ পছন্দ করেন, আমরা সেটাও দিতে পারব। দেশের মাটিতে দেশের তৈরি গাড়ি হলো ‘বাংলা কার’। এটা বিদেশি গাড়ি নয়, নিজেদের নামে নিজেদের গাড়ি প্রথমবারের মতো আমরা উৎপাদন করছি। আগামী বছরের শুরু বা মাঝামাঝিতে রপ্তানিতে যাওয়ার চিন্তা করছি।
টয়োটা জাপানি কোম্পানি, হাভেল চায়নিজ কোম্পানি কিন্তু বাংলা কার আমাদের দেশীয় কোম্পানির গাড়ি। টাটার মতো আমরাও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করব। আমরা এখন ট্রায়াল প্রডাকশনে আছি, জুন-জুলাইতে আমাদের আরও গাড়ি আসবে, পুরো বিশ্ব দেখবে যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশের বাংলা গাড়ি।’
জুনে পিকআপ, ট্রাক নামবে। এরপর আমরা লরি, বাসসহ ১২ ধরনের গাড়ি নামাব। তাছাড়া ইলেকট্রিক গাড়ি নামবে আগামী বছর। পিএইচপি ফোটনের গাড়ি, প্রগতি মিতশুবিসির গাড়ি তৈরি করছে। আমাদেরটা নিজেদের গাড়ি। দেশের মাটিতে দেশের গাড়ি নির্মাণ হচ্ছে।
গাড়ির এ-টু-জেড ফ্যাসিলিটি বাংলাদেশে থেকেই পাবে। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ হাজার গাড়ি বাজারজাত করার ইচ্ছা আছে। ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল, ইলেকট্রিক ভ্যাহিকেল, বড় লরি ট্রাক, সিমেন্টসহ যত ধরনের গাড়ি আছে সব গাড়ি উৎপাদন করব। তিনি বলেন, প্রতিটি গাড়িতে থাকছে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি।