ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় কাজ করছে ১৭০৬ জন অতি-দরিদ্র শ্রমিক। কাজের মান যাচাইয়ে খুশি স্থানীয়রা। উপকৃত হবে উপজেলার কৃষকসহ লাখো মানুষ।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে চলমান “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি” (ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় কর্মসংস্থান পেয়েছে ৩৫০৭ জন অতিদরিদ্র দিনমজুর।
তাদের কজে সাফল্যের মুখ দেখেছে এ কর্মসুচী। এ রকমসুচীর কারনে জেলার উন্নয়নে যোগ হয়েছে নতুন একটি মাত্রা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি নির্ভরশীল জেলা। এ জেলায় নেই তেমন কোনো কলকারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান। কৃষি কাজই জেলার মানুষের এক মাত্র কর্ম সংস্থানের মাধ্যম। জেলার অধিকাংশ কৃষকই দারীদ্র সীমার মধ্যে দিনযাপন করেন।
সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত জেলার দরিদ্র মানুষেরা কাজের অভাবে বাড়িতে অলস সময় কাটান। এই সময়ে কাজের অভাবে তারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করে।
তাছাড়া জীবন চালাতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছে কিস্তির টাকায় নাজেহাল হয়ে পড়েন। তাই এই দরিদ্র মানুষেরা যাতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
সে জন্য বিশ্বব্যাংক চালু করেছে “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি” (ইজিপিপি)। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্ব-স্ব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস।
গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে এই প্রকল্পের জন্য মেহেরপুর জেলায় ১৭০৬ জন উপকারভোগীর বরাদ্দ পেয়েছে।
অনলাইন এনরোলমেন্ট প্রসেসের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নে বিধি মোতাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে গাংনীতে ৪৫ টি প্রকল্পে কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পে শতভাগ শ্রমিক উপস্থিতি ও কাজের মানও সন্তোষ জনক বলে জানিয়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের উপকারভোগী স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ।
বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গৃহীত প্রকল্পের শ্রমিকেরা স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী, শ্রমিক সরদার ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে কোনো ধরনের অভিযোগ নেই তাদের।
প্রথম পর্যায়ে হঠাৎ তীব্র শীতের কারনে কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে চিকিৎসা জনীত কারনে তাদের ছুটি নিতে হয়। তবুও কাজের সাইডে বদলি শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে নেয় কাজে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার।
পরবর্তীতে প্রায় শতভাগ শ্রমিকের উপস্থিতি থাকে বলে জানান স্থানীয়রা। বিভিন্ন এলাকাঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকদের উপস্থিতি প্রায় শতভাগ রয়েছে।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের ৬ নং ওর্য়ার্ডের শ্রমিক সর্দার ইয়াকুব আলী জানান, তার দলে যে সকল শ্রমিকেরা কাজ করেন তাদের সকলেই অতিদরিদ্র।
এ কর্মসুচীর কারনে কোনরকম জীবন ধারন করছেন তেরাইল গ্রামের বাছিরন নেছা কর্মস্থলে এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের প্রতিদিনের মজুরি নিজ নামে একাউন্টে জমা হয়। তারা নিজেরাই তাদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করেন।
শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ প্রকল্পের আওতায় অনেক বয়ষ্ক মানুষ কাজ করে। যারা কাজ করে তারা আন›দের সাথেই কাজ করে। যার ফলে কাজের গুনগত মান শতভাগ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিরঞ্জন চক্রবর্তী জানান, চলতি অর্থ বছরে চলমান কাজে স্বচ্ছতা আনার জন্য তাঁরা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভিন্ন দপ্তরের ট্যাগ অফিসার ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ কাজে নজরদারি করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, গত ১৬-১৭ অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
এবছর শতভাগ কাজ ও শ্রমিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কোন কারনে যারা কাজে যোগদান করতে পারছেন না তাদের হাজিরা তোলা হচ্ছেনা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান জানান, ‘আমি নিজে বিভিন্ন সময়ে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি পরিদর্শন করেছি এবং চলমান কাজে সচ্ছতা আছে। বর্তমানে শ্রমিকের উপস্থিতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ভাবে কাজ চলমান থাকলে প্রকল্প শতভাগ পুরন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা ব্যাক্ত করেন।
মেপ্র/ আর পি