শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি দেহে যে কোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে। তাই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের ভেতরকার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধক দেয়াল তৈরিতে শুরু থেকেই ভিটামিন সি জাতীয় ফল ও শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরা। এতে করে বাজারে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। আর সেই সুযোগে এসব ফলের দাম বাড়িয়ে দেয় বিক্রেতারা।
যা এখনও চলমান। ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে জোগান কমের কথা বললেও আদতে তা পুরোপুরি সঠিক নয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অনেক ফলের জোগান প্রচুর থাকলেও দেখা যাচ্ছে দাম অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। যা অনেক ক্রেতার নাগালের বাইরে। সরেজমিন রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ান বাজার ও সদরঘাটসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলে ভরপুর বাজারগুলো। এর মধ্যে অন্যতম আমলকি। গত বছর বা সাধারণ সময়ে বিক্রি হতো ১০০ গ্রাম ১০ থেকে ২০ টাকায়। তা এখন আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৯০ টাকায়। কেজি হিসাবে দাম পড়ে ৬০০-৯০০ টাকা। কয়েকজন ফল বিক্রেতা জানালেন, এর দাম কেজি প্রতি ২ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। অন্যান্য সময় মাল্টা যেখানে কেজি প্রতি ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হতো সেখানে এখন তা ২০০-২৪০ টাকা। মৌসুমের শুরুর দিকে লটকনের দাম ছিল ১০০-১২০ টাকা কেজি। সেটি এখন কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাজারে লটকনের জোগান প্রচুর। অন্যান্য বছর জাম বিক্রি হতো ১০০-১৫০ টাকায়, তা এবার বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২২০ টাকায়।
স্বাভাবিক সময়ে কামরাঙা বিক্রি হতো প্রতি কেজি ৫০-৭০ টাকা, এখন হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়। জামরুল বিক্রি হতো ১০০-১২০ টাকায়, এখন হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা দামে। বাজারে আমড়া আসতে শুরু করেছে। সেটাও বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২২০ টাকা কেজি দরে।
ঔষধি ফল হিসেবে খ্যাত আনারসের দামও হাতের নাগালে নেই। এক হালি আনারস কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা। অড়বরই ১০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করমচা ১০০ গ্রাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ঢেউয়া যেখানে সবসময় বিক্রি হতো ৮০-১২০ টাকা প্রতি কেজি, তা এখন ২০০-২৪০ টাকা। লেবুর দামও করোনাকালে বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। তবে এখন ২০-৪০ টাকা হালিতে লেবু পাওয়া যাচ্ছে।
মিরপুর-১ বাজারে আমলকি ও আমড়া কিনতে আসা মাহমুদুল হক যুগান্তরকে বলেন, কোনো ফলের দামই হাতের নাগালে নেই। ভিটামিন সি জাতীয় ফলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন অল্পঅল্প কিনে পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ করি। করোনার আগে যেসব ফল মাঝেমধ্যে খেতাম এখন সেগুলোতে হাতও দেয়া যাচ্ছে না।
ফল বিক্রেতা মাসুম বলেন, কিছু ফলের চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক। যেমন আমলকি। চাহিদার তুলনায় ফল আসে খুব কম। তাই দাম একটু বেশি। আনারস আমাদেরই কেনা প্রতি পিস ৪৩ টাকা, বিক্রি করি ৫০ টাকায়। দেশি ফল আমলকি, আমড়া, কামরাঙা, জাম, বেল, অরবড়ই এগুলোর চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় এসব ফলের জোগান বাড়েনি। কিন্তু মাল্টাতো দেশের বাইরে থেকে আসে। সেটার দাম কেন বাড়ল? এমন প্রশ্নের উত্তরে এ ফল বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারে ফলের দাম বেড়ে গেছে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, ভিটামিন সি আমাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু জানা প্রয়োজন, এটি যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি সবটুকুই শরীর বের করে দেয়। তাই অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ছাঈদা লিয়াকত যুগান্তরকে বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে আমাদেরকে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিনই ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে। শাকসবজি ও ফলমূল থেকে আমরা সেটা পেয়ে থাকি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৬০-৯০ মিলি গ্রাম ভিটামিন ‘সি’র প্রয়োজন হয়।
দৈনিক দুটো আমলকি খেলেই এ চাহিদা পূরণ হয়। সব সময় আমাদের মাল্টার মতো দামি ফল খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা তিন বেলা খাবারে একটু লেবু খেয়েও এ চাহিদা পূরণ করতে পারি। করোনার এ সময়ে ভিটামিন ‘সি’র পাশাপাশি জিংক সমৃদ্ধ খাবার বা ট্যাবলেটও গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। সূত্র- যুগান্তর