ফারজানা ইসলাম
কখনও ভেবে দেখেছেন কি, কেন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রী এডিস মশা গায়ে বসলে আমরা বুঝতে পারিনা বা অনেক সময় কামড়ানোর পর কেন বুঝতে পারি?
এর কারণ, স্ত্রী এডিস মশার Back biting behaviour. অর্থাৎ এরা Host কে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করতে পছন্দ করে। যেমন কানের পিছনে, হাতের কনুই বা পায়ের গোড়ালি, যেনো প্রাথমিকভাবে আপনি তাকে Detect করতে না পারেন।
অফিস আদালত বা স্কুল কলেজে স্ত্রী এডিস মশার দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশী। কারন- প্রথমত এরা Daytime biter আর দ্বিতীয়ত আমাদের Body position and mind set-up. টেবিল-চেয়ার ব্যবহার করায় আমাদের শরীরের অর্ধেক অংশই দৃষ্টির আড়ালে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখায় আর আমরা অফিশিয়াল কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আর এই Concentration /focus of mind on one thing exclude our feelings or sensation from the surroundings. আর এর সুযোগটাই স্ত্রী এডিস মশা সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগিয়ে থাকে।স্ত্রী এডিসের সবচাইতে Worst বৈশিষ্ট্য হলো intermittent feeding capability এবং একই সময়ে বিভিন্ন Host থেকে রক্ত সংগ্রহের প্রবণতা।এরা কুকুর/বিড়াল/গৃহপালিত পশুপাখি থেকে রক্ত সংগ্রহের পাশাপাশি মানুষ থেকেও রক্ত সংগ্রহ করে ডিম পাড়ার জন্য। আবার অনেক ক্ষেেএ একাধিক মানুষ থেকেও রক্ত সংগ্রহ করে থাকে। এই Host seeking behaviour এদেরকে রোগ সংক্রমণ বা ছড়ানোর ব্যাপারে এতোটা দক্ষ করে তোলে।
তাই এডিস মশার কামড়/দংশন থেকে বাঁচতে আমরা নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে পারি;
(১) পার্সোনাল প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করা। বাইরে বের হবার পূর্বে বা ঘরে অবস্থানের সময়ও ফুলহাতা জামা ব্যবহার করা (সাদা/হালকা রঙের)
(২) সাদা রঙের প্যান্ট / পায়জামা এবং অবশ্যই পা-মোজা (সাদা রঙের) ব্যবহার করা।
(৩) বিভিন্ন ধরনের মশা তাড়ানোর ক্রিম/তেল শরীরের উন্মুক্ত স্থানে ব্যবহার করা। যেমন- Odomos, Fabric roll on, neem oil, lavender oil. আর যদি এসবের কোনো কিছুই পাওয়া না যায় তবে নিমপাতা বেটে এর রস হাতে-পায়ে ব্যবহার করতে পারেন।
(৪) স্ত্রী এডিস মশা সবচাইতে বেশী active থাকে সূর্যোদয়ের পর থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত এবং সূর্যাস্তের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে। বাড়িতে এবং স্কুল-কলেজে/ অফিসে (অফিস টাইমের পূর্বেই) কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বা ক্ষেত্রবিশেষে নিজ উদ্যোগে সকাল ৬-৭ টার মধ্যে প্রতিটি রুমে কয়েল জ্বালিয়ে দিন/কীটনাশক স্প্রে করুন (দরজা-জানালা বন্ধ রাখা অবস্থায়)। এর ২/৩ ঘণ্টা পর ফুলস্পিডে ফ্যান চালু করে দিন এবং প্রতিটি রুমের একটি করে জানালা খুলে দিন। এতে করে ক্ষতিকর ধোঁয়া ও মশা দুটোই ইনশাআল্লাহ বেরিয়ে যাবে [আপনার কক্ষটি ১ম/২য় তলায় হলে কয়েল বন্ধ না করাই ভালো]।
বাড়িতে বা সান্ধ্যকালীন অফিসে বিকেল ৪ টার সময় উপরোক্ত প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন এবং এক্ষেত্রে ধোঁয়া ও মশা বেরিয়ে যাবার পর দরজা-জানালা একেবারে বন্ধ করে দিন এবং প্রয়োজনে মশার কয়েল নিভিয়ে ফেলুন।
(৫) আমাদের Body odor বা দেহের গন্ধে স্ত্রী মশা সবাচাইতে বেশি আকৃষ্ট হয়। তাই সম্ভব হলে নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করুন।
(৬) ছাদে বা পানির ট্যাংকের পাশে বা গ্যারেজে যে সমস্ত জায়গায় পানি জমে থাকে সেখানে পানি অপসারণ করা না গেলে প্রয়োজনে ১/২ মুঠো লবণ ছিটিয়ে দিন।
(৭) যানবাহন/প্রাইভেট কার রাতে বন্ধ করার পূর্বে কীটনাশক স্প্রে করুন।
(৮) সর্বোপরি ঘরে অবস্থানকালে ঘুমানোর সময়(দিনে/রাতে) মশারি ব্যবহার করুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং (সাবেক) জাতীয় পরামর্শদাতা (কীটতত্ত্ববিদ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। (সংগ্রহ- বাংলাদেশ প্রতিদিন)