পারভীন আকতার
করোনা ভাইরাস নানা ভাবে, নানা রূপে মানুষের শরীরকে ঘায়েল করছে। কখনো স্বল্পমাত্রা কখনো বা ভয়াবহ পর্যায়ে মেরেই ছাড়ছে। ক্যান্সার হলেও সময় দেয়। কেমোথেরাপি থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের উন্নত চিকিৎসার জন্য দৌঁড়ঝাপের জন্য। কপাল ভাল হলে বেঁচে যায় অনেকেই। কিন্তু একি করোনা! ধরলেই যুতসই ভাবে মরতে সেকেন্ডও লাগছে না! ফুসফুসকে অ্যাটাক, কাবু করে নড়তেও দিচ্ছে না! নিঃশ্বাস নিঃশব্দে বন্ধ হচ্ছে। এরপরও কি আমরা শোধরাবো না? আমাদের চিন্তা চেতনায় কি সততায় চলার বীজ রোপন করবো না?
আসলেই কি আমরা পৃথিবীকে বিষাক্ত করে ফেলেছি? নভোমন্ডলকে বেশিই কি বিরক্ত করছি? বিধাতার সেটিংস এ বারবার হাত দেয়ার উদ্ধ্যত আচরণ অসহনীয় করেছি কি? বিধাতাকে আমরা বেশি অবজ্ঞা করে ফেলেছি নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে গিয়ে এ ভাবনা এসে যাওয়া স্বাভাবিক, বর্তমান প্রেক্ষাপটে। মানুষ এতো মেধার তকমা দেখায় তবে আজ কেন অতি ক্ষুদ্র অণুজীবের সাথে মানুষ পেরে উঠছে না? একটি ফুসফুসের স্পন্দন স্পন্দিত নিঃশ্বাস দিতে পারি না অথচ উন্নত চিকিৎসার বড়াই কেন করি? একজন মানুষের দৈনিক ৫৫০ লিটার অক্সিজেন লাগে। টাকার হিসাবে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। স্রষ্টার কাছে দু’হাত তুলে অঝোরে কাঁদি কেমন দয়াময় খোদা আমাদের তা ফ্রীতে দান করেছেন প্রতিনিয়ত।
শুকরিয়ার শেষ নেই তোমার কাছে ইয়া মাবুদ। কতটুকু আমরা তাঁর জন্য কাজ করছি ভেবে দেখুন একটু। ডাক্তার বা হাসপাতাল এই কাজ করলে তাদের আমরা পা ধরে বসে থাকতাম কৃতজ্ঞতা স্বরূপ। স্রষ্টা যেখানে সব বেঁচে থাকার সরঞ্জাম সহজলভ্য করে দেন অথচ আজ সামান্য একটু অক্সিজেনের হাসপাতালে হাহাকার, দীর্ঘ লাইন। তবু টাকা দিয়েও অক্সিজেন পাওয়া যায় না এতোটাই সংকটে মানবজাতি আজ। করোনা সাতশোর অধিক ভিন্নতায় নিজের রূপ বদলিয়ে মানবদেহে ঢুকছে। অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষণই নেই এখন। মানব শরীরে শেষ পর্যায়ে ধরা পড়ছে তখন আর সময় নেই। কী ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মানুষের সংকটময় জীবন প্রবল বিপরীত স্রোতে বহমান! এরপরও কি আমরা শুদ্ধ হবো না? ঈমান নিয়ে চলবো না? কত আর অনাচার করবো, সুদ ঘুষের রাজত্ব কায়েম করবো? মনে রাখতে হবে এখন আমাদের পিছে পিছেই করোনা লেগে আছে, দীর্ঘকাল ধরে থাকবে।
শয়তান যেমন থাকে অনিষ্ট করতে আর করোনা থাকবে যথাযথ উচিত শিক্ষা দিতে আমাদের। নিজেকে বদলাবো আমরা এখন সদিচ্ছায় যদি পৃথিবীর আলো বাতাস আরো কিছুদিন পেতে চাই। কায় মনে প্রভুকে ডাকবো। সকল পাপের ক্ষমা চাইবো। মৃত্যু অনিবার্য সত্য। আজ না হয় কাল তো যেতেই হবে তাঁর কাছে। তাহলে আর দেরী কেন করোনাকে নয়, চলুন আপনার আমার প্রভুকে ভয় করি। তাঁর দেখানো সত্যের পথে চলি। করোনা থাকুক তার পথে। আমরা থাকি আলোর পথে ইহকাল আর পরকালের মুক্তি, নাজাতের জন্য।
লেখক: শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক, চট্টগ্রাম।