করোনাভাইরাসে থমকে গেছে পৃথিবী, সবাই এখন ঘরবন্দি। বিশ্বের প্রায় দু’শটির বেশি দেশ এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণা করেছে। যেসব দেশে লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হয়েছে কিংবা কর্মস্থল খুলে দেয়া হয়েছে তারাও যতটা সম্ভব সীমিত আকারে কাজ সারছে।
সাধারণত যে কোনো মহামারীকালে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ঘরে থাকাকেই উৎসাহিত করা হয়। বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারীতেও সেটাই হচ্ছে।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে মেনে চলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। স্থগিত রাখা হচ্ছে নানারকম পরিকল্পনা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। বিয়ের মতো শুভ অনুষ্ঠানও বাদ পড়ার তালিকায় ঢুকে পড়েছে। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস ঘরে বসে থেকে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠেছেন।
আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পারা, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, চারদিকে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর পাওয়ায় জনজীবনে দেখা দিচ্ছে হতাশা ও মানসিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপে থাকা মানুষদের জন্য করোনার ঝুঁকি বেশি। তাই এ করোনাকালে নিজেকে সুস্থ রাখতে প্রথমত থাকতে হবে চাপমুক্ত এবং একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পাঁচ মাস পার হয়েছে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মতো এ সময়টাতে যারা বিয়ের আয়োজন সারবেন বলে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন, লগ্ন স্থির থাকলেও মাল্যদান হচ্ছে না তাদের অনেকের। অনেকেই করোনাকালীন সময় বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছেন। কেউবা আবার ঘরোয়া পরিবেশেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। লকডাউনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বিয়ে আয়োজনে ছিল বিধি-নিষেধ।
তবে লকডাউন তুলে দেয়ার পর আবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সীমিত আকারে হলেও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার পর থেকে বা চলতি আগস্ট থেকেই বিয়ে অনুষ্ঠানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু নিকটাত্মীয়দের নিয়ে স্বল্প পরিসরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হচ্ছে।
কথায় বলে- বিয়ের পর অবাঞ্ছিত এ করোনাকালের বন্দি জীবন। কিন্তু যারা বন্দি জীবনেই বিয়ে করছেন! তাদের বেলায় বিষয়টি কেমন হতে পারে? হানিমুন কিংবা ঘোরাফেরায় বিধি-নিষেধ থাকায় তাদের মন কি শুরুতেই সংসারের চাপে বিষিয়ে উঠবে?
নানা ভাবনা দেখা দিতে পারে নবদম্পতির মনে। কিংবা মন খারাপ হতে পারে। যেহেতু করোনায় নিরাপদে থাকার বিষয়টিও ভাবতে হবে তাই এ সময় বিয়ে করলে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ানোয় কিছুটা লাগাম টেনে ধরতেই হবে। এজন্য হানিমুন রাখতে পারেন ওয়েটিং লিস্টে। আর যদি করতেই চান তবে স্পট, হোটেল বুকিং, পরিবহন সবকিছু ভালোমতো ভেবেচিন্তে নির্ধারণ করুন।
নবদম্পতিকে করোনার কারণে হানিমুন বা ঘোরাফেরা থেকে নিজেদের সংযত রাখতে বিকল্পভাবে কীভাবে নতুন জীবনের আনন্দঘন এ সময়গুলো স্মৃতিময় করে তোলা যায় তা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করতে পারেন। চেষ্টা করুন দু’জনে একসঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে।
সুযোগ পেলেই একসঙ্গে লাঞ্চ বা ডিনার করুন। করোনার কারণে দূরে যেতে না পারলেও কাছাকাছি কোনো নিরিবিলি স্থানে ঘুরে আসতে পারেন। ছুটির সকালে কিংবা সন্ধ্যায় বাড়ির আশপাশে খোলা জায়গাটাতে একসঙ্গে হাঁটতে পারেন, জনকোলাহলপূর্ণ জায়গায় না গিয়ে নদীর ধারে, খোলা প্রান্তরে ঘুরতে যেতে পারেন। বিকালে ছাদে, লনে বা বারান্দায় বসে একসঙ্গে চা নাশতা খেতে খেতে গল্প করলেও কাটবে চমৎকার একটি বিকাল।
নববধূ মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার জন্য সকালে পনেরো থেকে বিশ মিনিট মেডিটেশন করতে পারেন। গল্পের বই পড়তে পারেন, সিনেমা দেখতে পারেন, গান শুনতে পারেন। বাড়ির ছাদে বা বাগানে সময় কাটাতে পারেন। মোটকথা নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কারণ মনের মধ্যে বিষণ্নতাকে ঠাঁই দেয়া যাবে না।